• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৩:০৪ পূর্বাহ্ন

২০ ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানিকারক চিহ্নিত


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৯, ১১:২৯ AM / ১১২
২০ ক্যাসিনো সরঞ্জাম আমদানিকারক চিহ্নিত

মিথ্যাসহ বিভিন্ন ঘোষণায় ক্যাসিনোর যন্ত্র আমদানিতে এখন পর্যন্ত ২০ আমদানিকারককে চিহ্নিত করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। এর আগে প্রাথমিকভাবে সংস্থাটি ৫টি আমদানিকারকের কথা জানালেও পরবর্তীতে আরো ১৫ আমদানিকারককে চিহ্নিত করা হয়। এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে সংস্থাটি সূত্রে জানা যায়। গতকাল বৃহস্পতিবার পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজের মালিক সুরঞ্জন শেঠ তাপসকে এ অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিকেল পৌনে ৪টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত সংস্থাটির নিজ কার্যালয়ে শুল্ক গোয়েন্দার সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এর আগে পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজের পক্ষে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট বেত্রাবতি ট্রেডের মালিক মো: আশরাফুল ইসলামকে সোমবার ৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, আইনকানুন অনুসরণ করেই আমদানিকারকদের পক্ষে যথাযথ শুল্ককরাদি দিয়ে পণ্যগুলো ছাড় করেছি। কোনো অনিয়ম বা মিথ্যা ঘোষণা ছিল না। এর আগে একই কারণে এ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক আহসানুল আজমকে বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জুতার সরঞ্জাম, কম্পিউটার ও মোবাইল পার্টস কিংবা ফার্নিচার ঘোষণার আড়ালে আমদানি হচ্ছে ক্যাসিনোতে ডিজিটাল জুয়ার সরঞ্জাম-এমন অভিযোগে এই জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আমদানি নীতির সুযোগ নিয়ে ক্যাসিনোর নামে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেইম, ক্যাসিনো ওয়ার গেইম টেবিল ইত্যাদি সরঞ্জাম আমদানি হয়েছে।
ধারণা করা হচ্ছে জুয়ায় ব্যবহৃত প্রতিটি মেশিন ও সরঞ্জামের দাম প্রায় লাখ টাকা থেকে তিন কোটি টাকা। যেখানে মিথ্যা ঘোষণায় কোটি কোটি টাকার শুল্ককর ফাঁকি দেয়া হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
২০০৯ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত গত ১০ বছরে ১৯টি আমদানিকারকের হাত ধরে আসা চালানের তথ্য বিশ্লেষণ করে ওই তথ্য-প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আমদানিকারকরা হলোÑ এ এম ইসলাম অ্যান্ড সন্স, ন্যানাথ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজ, বি পেপার মিলস লিমিটেড ও এ থ্রি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা গত ১০ বছরের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে অনিয়ম খুঁজে পেয়েছি। কোনো আইনের লঙ্ঘন করেছে কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অনিয়ম পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এনবিআর সূত্রে এ বিষয়ে আরো জানা যায়, আমাদানিকারকদের মধ্যে ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বরে এ এম ইসলাম অ্যান্ড সন্স জুতার সরঞ্জাম ও মোবাইল যন্ত্রপাতির ঘোষণা দিয়ে ঢাকা কাস্টম হাউজ দিয়ে একটি বড় চালান ছাড় করায়। কিন্তু গোয়েন্দাদের অনুসন্ধানে ক্যাসিনো চিপস ও রেসিং কার্ড এসেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে। একইভাবে ঢাকা কাস্টম হাউজ দিয়ে ২০১৮ সালের মে মাসে ন্যানাথ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার মাদার বোর্ড ঘোষণা দিয়ে, এ থ্রি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ২০১৭ সালের আগস্টে জন্মদিনের সরঞ্জাম, ২০১৭ সালের জুলাই মাসে বি পেপার মিলস লিমিটেড ফার্নিচার ঘোষণা দিয়ে রোলেট গেম টেবিল, পোকার গেইম, ক্যাসিনো ওয়ার গেইম টেবিল ইত্যাদি সরঞ্জাম আমদানি করে বলে প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পেয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা। তবে পুষ্পিতা এন্টারপ্রাইজ ক্যাসিনো সরঞ্জাম ঘোষণা দিয়েই পণ্য আমদানি করেছে। এসব আমদানিকারক বাণিজ্যিক ভিত্তিতে পণ্যগুলো আমদানি করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করেছে বলে মনে করেন গোয়েন্দা সংশ্লিষ্টরা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, ক্যাসিনোর মেশিনসহ খেলার বেশির ভাগ সামগ্রী চীন থেকে আমদানি হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। রয়েছে অর্থপাচারেরও তথ্য। একই সঙ্গে ক্যাসিনোতে জুয়ায় টাকা লগ্নিকারী ব্যক্তিদের আয়কর ফাইল খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগামী কয়েক দিনে আরো বেশ কিছু আমদানিকারককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে শুল্ক গোয়েন্দার বিভিন্ন টিম। এ ছাড়া ক্যাসিনোর মেশিন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিভাবে এসব মেশিন আমদানি করেছে তা খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্থা নেবে শুল্ক গোয়েন্দা।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ক্যাসিনোর নামে জুয়ায় প্রতি রাতে হাজার হাজার কোটি টাকার খেলা হয়। খোদ রাজধানীতে অন্তত ৬০টি ক্যাসিনোর তথ্য পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ফকিরাপুলে ইয়ংমেন্স ক্লাবে অভিযান চালায় র্যাব। আটক করা হয় ১৪২ জনকে। উদ্ধার করা হয় ক্যাসিনোর রোলেট, স্লট মেশিন, জুয়ার গুঁটিসহ অন্যান্য সামগ্রী। একই দিন রাজধানীর আরো কয়েকটি অভিজাত ক্লাবে অভিযান চলে। পর্যায়ক্রমে গত কয়েক দিন রাজধানীসহ সারা দেশে অভিযান চালানো হচ্ছে। প্রতিটি ক্যাসিনোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্যাসিনোর দামি মেশিন ও খেলার সামগ্রীর সন্ধান পায়। সঠিকভাবে শুল্ককর পরিশোধ করে এসব মেশিন আমদানি হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখছে এনবিআর।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১১:২৯এএম/২৭/৯/২০১৯ইং)