• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৭:৫৩ পূর্বাহ্ন

সালিসেই বাবরি মসজিদ মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা


প্রকাশের সময় : মার্চ ৮, ২০১৯, ১:২৩ PM / ১২১
সালিসেই বাবরি মসজিদ মামলা নিষ্পত্তির ব্যবস্থা

 

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : ভারতের অযোধ্যার বাবরি মসজিদের স্থান নিয়ে দায়ের মামলা সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম কোর্ট তিন মধ্যস্থতাকারী নিযুক্ত করেছেন।

বাবরি মসজিদ মামলার নিষ্পত্তি চেয়ে আগেই শুনানি করা হয়েছিল। শুক্রবার আরেক দফা শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালত এদিন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তিন সদস্যের প্যানেল গঠন করে দেন। প্যানেলের প্রধান করা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি ইব্রাহিম খুলিফুল্লাহকে।

এ ছাড়া সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে ধর্মগুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর ও আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চুকে। কমিটি চাইলে আরও সদস্য অন্তর্ভূক্ত করতে পারবে, এমন ক্ষমতাও দেয়া হয়েছে।

আদালত বলেছেন, কমিটির সদস্যরা ফাইজাবাদে গিয়ে সবপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর এক মাসের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশে এও বলা হয়েছে, কমিটির আলোচনাগুলো গোপন রাখতে হবে। অর্থাৎ কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না।

পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ বলেছেন, ‘এখানে শুধু সম্পত্তির বিবাদ নয়। সম্ভব হলে, মস্তিষ্ক, হৃদয় ও ক্ষত নিরাময়ের বিষয়।’

অযোধ্যার ২.৭৭ একর জমির ওপর ১৬ শতকে বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেন সম্রাট বাবর। পরে ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা রামমন্দির ভেঙে সম্রাট বাবর মসজিদ নির্মাণ করেছেন দাবি করে মামলা করে।

এরপর ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর কট্টরপন্থী হিন্দুরা মসজিদের দখল নেন এবং ভেঙে ফেলেন। এ নিয়ে সাম্প্রদায়িক সংঘাতে সে সময়ে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়।

এই মামলার সর্বশেষ শুনানি হয় ২৬ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন সুপ্রিম কোর্ট আভাস দেন, মধ্যস্থাকারীর মাধ্যমে মামলাটি নিষ্পত্তির। আদালত বলেছিলেন, তারা এমন সমাধান খুঁজছেন যা ‘ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্পর্কের ক্ষত সারাতে পারে’।

উত্তরপ্রদেশ সরকার মধ্যস্থতার বিরোধিতা করেছে। তাদের সঙ্গে আছে হিন্দু মহাসভা। আর সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের মতো মুসলিম পক্ষ, হিন্দুদের মধ্যে নির্মোহী আখড়া এই প্রক্রিয়ায় সম্মত হয়েছে।

হিন্দু মহাসভা এর বিরোধিতা করে যুক্তি দিয়েছে, ‘এটা শুধু মামলাকারী দু’পক্ষের বিষয় নয়। দুই সম্প্রদায়ের সমস্যা। আমজনতা এই মধ্যস্থতা মানবে না।’

অযোধ্যায় বিরাজমান রামলালা-র তরফ থেকেও আপত্তি করা হয়েছে। রামলালার আইনজীবী বলেছেন, ‘রামের জন্মস্থানেই মন্দির তৈরি করতে হবে। রাম যে অযোধ্যাতেই জন্ম নিয়েছিলেন, তা নিয়ে কোনো বিবাদ নেই। বিবাদ হলো, সেই জন্মস্থান ঠিক কোথায়? রামের জন্মস্থান নিয়ে কোনো মধ্যস্থতা হতে পারে না।’

অযোধ্যা বিবাদে এর আগেও মধ্যস্থতার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে বলে আপত্তি ওঠায় বিচারপতি বোবদে বলেন, ‘আমাদের ইতিহাস বোঝাবেন না। আমরাও ইতিহাস জানি। অতীতের উপরে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। কে হানা দিয়েছিল, বাবর কী করেছিলেন, কে সে সময় রাজা ছিলেন, সেখানে মসজিদ ছিল না মন্দির, তার উপরে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’

আদালতে দু’পক্ষের মধ্যস্থতা দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মানবে কি না, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ও। তিনি বলেন, ‘আমরা কীভাবে মধ্যস্থতা লক্ষ লক্ষ মানুষের উপরে চাপিয়ে দেব? এটা ততখানি সরল হবে না।’

কিন্তু, বিচারপতি বোবদে বলেন, ‘যখন এক পক্ষ একটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করছে, তা আদালতের লড়াই হোক বা মধ্যস্থতা, তা মানতেই হবে।’

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১:২৪পিএম/৮/৩/২০১৯ইং)