• ঢাকা
  • রবিবার, ১২ মে ২০২৪, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

সারকোজিকে তাড়া করে ফিরছে গাদ্দাফির ‘ভূত’!


প্রকাশের সময় : মার্চ ২০, ২০১৮, ১১:১৭ PM / ৪০
সারকোজিকে তাড়া করে ফিরছে গাদ্দাফির ‘ভূত’!

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে দেশটির পুলিশ। ২০০৭ সালের নির্বাচনে তিনি লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছ অর্থ নিয়েছেন এমন একটি অভিযোগের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারকোজি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় প্রচারণার জন্য গাদ্দাফির কাছ থেকে অর্থ নিয়েছেন এমন অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। তারই অংশ হিসেবে তাকে আটক করা হয়েছে।

অন্যদিকে, সম্প্রতি তার এক মিত্র আলেকজান্দ্রি জোহরিকে লন্ডনে গ্রেফতার করা হয়।

২০১২ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর সারকোজির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়। ২০১৩ সালে তার বিরুদ্ধে এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হলেও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক এ ফরাসি প্রেসিডেন্ট।

বিচার বিভাগের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাকে পশ্চিম ফ্রান্সের নানতেরিতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সারকোজি সরকারের মন্ত্রী ও তার ঘনিষ্ঠ মিত্র ব্রিস হর্টিফেক্সকেও মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

সাবেক গাদ্দাফি সরকারের কিছু কর্মকর্তা ও ফরাসি-লেবানিজ ব্যবসায়ী জিয়াদ তাকিদীন এই অভিযোগ এনেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।

ডানপন্থী নেতা সারকোজি ২০০৭ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

নির্বাচনী প্রচারণার জন্য লিবিয়ার কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগে ফ্রান্স ২০১৩ সালে তদন্ত শুরু করে। ওইসময় তদন্তকারীরা কাউকে সন্দেহভাজন বলে ঘোষণা করেনি। তারা শুধু দুর্নীতি, প্রতারণা, সরকারি তহবিলের অপব্যবহার, এবং অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত করে।

এখন তদন্ত কর্মকর্তারা খতিয়ে দেখছেন, সারকোজি গাদ্দাফির কাছ থেকে কোনো অর্থ গ্রহণ করেছিলেন কিনা। ২০০৭ সালে নির্বাচনের সময় গাদ্দাফি সারকোজিকে গোপনে ৫০ মিলিয়ন ইউরো দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এটা ফ্রান্সের নির্বাচনী প্রচারণার খরচের অনুমোদিত সীমার দ্বিগুণেরও বেশি।

ওই সময় ফ্রান্সে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য সর্বোচ্চ ২১ মিলিয়ন ইউরো খরচ অনুমোদিত ছিল।

২০১২ সালের এপ্রিলে অনুসন্ধানী ওয়েবসাইট মিডিয়াপার্ট একটি দলিল প্রকাশ করে, যাতে লিবিয়ার একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির স্বাক্ষর রয়েছে বলে দাবি করে তারা। সাইটটি জানায়, সারকোজির নির্বাচনী প্রচারণার জন্য লিবিয়া ৫০ মিলিয়ন ইউরো দিয়েছে।

সারকোজি ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ক্লদ গুয়েঅঁ মিডিয়াপার্টের ওই দলিলকে ভুয়া বলে উড়িয়ে দেন। পরে ফ্রান্সের আদালত কয়েকটি দলিলকে আসল বলে রায় দেয় এবং সেগুলোকে তদন্তে ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

২০১৬ সালে একজন বিত্তশালী ফ্রেঞ্চ-লেবানিজ ব্যবসায়ী মিডিয়াপার্টকে বলেন, লিবিয়ার নেতার কাছ থেকে পাওয়া সুটকেস ভর্তি নগদ টাকা তিনি নিজে সারকোজির প্রচারণার জন্য পৌঁছে দেন।

তিনি বলেন, ২০০৬ থেকে ২০০৭-এর মধ্যে তিনবার ত্রিপোলি থেকে প্যারিসে আসেন তিনি। প্রতিবারে সুটকেসে তিনি ২০০ ও ৫০০ ইউরোর নোটে দেড় থেকে দুই মিলিয়ন ইউরো বহন করেন।

তিনি দাবী করেন, গাদ্দাফির মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স বা সামরিক গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান ওই টাকা দিয়েছিল।

গাদ্দাফির সঙ্গে জটিল সম্পর্ক ছিল সারকোজির। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর পর তিনি গাদ্দাফিকে ফ্রান্সে আমন্ত্রণ জানান এবং তাকে ব্যাপক সংবর্ধনা দেন। কিন্তু এরপরই সারকোজি ন্যাটোর নেতৃত্বে লিবিয়ায় বিমান হামলার মুখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হন।

ওই হামলার ফলে বিদ্রোহীরা ২০১১ সালে গাদ্দাফিকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সক্ষম হয়।

২০১১ সালের মার্চে গাদ্দাফির ছেলে সাইফ আল-ইসলাম ইউরোনিউজকে বলেন, ‘সারকোজি লিবিয়ার কাছ থেকে নির্বাচনী প্রচারণার জন্য যে টাকা নিয়েছেন তা ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা তার প্রচারণার অর্থায়ন দিয়েছিলামে এবং আমাদের কাছে তার প্রমান আছে। কিন্তু, প্রথম যে জিনিসটা আমরা চাই তা হল ভাঁড়টা লিবিয়ার মানুষকে তাদের টাকা ফিরিয়ে দিবে।’

সারকোজিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৪৮ ঘণ্টা আটকে রাখা হতে পারে।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১১:১৭পিএম/২০/৩/২০১৮ইং)