• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৮:০৭ অপরাহ্ন

সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মূসক নির্ধারণের দাবি


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৪, ২০১৭, ৮:৪৮ AM / ৩২
সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ মূসক নির্ধারণের দাবি

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

মূল্য সংযোজন করের (মূসক) হার সর্বোচ্চ ৭ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে নির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা। আর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সহজে মূসক প্রদানের জন্য প্যাকেজ ভ্যাট চালু রাখার দাবি করেছেন তাঁরা।

গতকাল রোববার চট্টগ্রাম চেম্বার ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার আয়োজিত পৃথক দুটি আলোচনা সভায় ব্যবসায়ীরা এ দাবি জানান। আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে আয়োজিত দুটি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান।

ব্যবসায়ীরা আসন্ন বাজেটে চট্টগ্রাম বন্দরের বে টার্মিনাল প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়া, জোয়ারের পানি থেকে বাণিজ্যকেন্দ্র চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ রক্ষা ও নগরের জলাবদ্ধতার সমাধানে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের সুপারিশ করেছেন।

আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে বিবেচনার জন্য উভয় সংগঠন ১১৬টি প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম চেম্বার শুল্ক-সংক্রান্ত ৮৫টি ও আয়কর বিষয়ে ২০টিসহ ১০৫টি প্রস্তাব দেয়। বাকি ১১ প্রস্তাব মেট্রোপলিটন চেম্বারের।

এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান নতুন বাজেটে ব্যবসায়ীদের প্রস্তাবগুলো বিবেচনার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, আগামী বাজেটে দেশীয় শিল্পের সুরক্ষা ও রপ্তানিমুখী খাতে প্রণোদনা অব্যাহত রাখা হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেসব শিল্পের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান রয়েছে, সেগুলোর প্রসার এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে এমন পদক্ষেপ থাকবে বাজেটে। তিনি আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন মূসক আইন বাস্তবায়নে ব্যবসায়ীদের সহায়তা চান।

সকালে নগরের আগ্রাবাদের বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্রের বঙ্গবন্ধু সম্মেলনকক্ষে চট্টগ্রাম চেম্বারের আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি মূসকের হার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশে নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, নতুন আইন বাস্তবায়ন হলে ১ হাজার ২৭১টি আমদানি পণ্যের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক তুলে নেওয়া হবে। এতে স্থানীয় উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় পিছিয়ে পড়বেন। সে জন্য পর্যায়ক্রমে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, এতে দেশীয় উদ্যোক্তারা নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর সুযোগ পাবেন।

লিখিত বক্তব্যে মাহবুবুল আলম চট্টগ্রামের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জকে জোয়ারের পানি থেকে রক্ষায় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ চান। নগরের যানজট নিরসনে কর্ণফুলী থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ সড়কসহ অবকাঠামো উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়ারও প্রস্তাব দেন তিনি। এ ছাড়া বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতেও বাজেটে দিকনির্দেশনা চেয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, বর্তমানে বন্দরে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি পণ্য পরিবহন হচ্ছে। কাস্টম হাউসে পর্যাপ্ত স্ক্যানার যন্ত্র না থাকায় পণ্য খালাসে বিলম্ব হচ্ছে। তাই বন্দর ও কাস্টম হাউসের মধ্যে সমন্বয় ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য জোর দিতে হবে।

পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক কাজী মাহবুব উদ্দিন এ খাতের জন্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আমদানির প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং উৎসে কর শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেন।

নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর চট্টগ্রামের পরিচালক শওকত ওসমান ব্যক্তিগত পর্যায়ে করমুক্ত আয়করের সীমা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দেন।

উইমেন চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবিদা মোস্তফা নারী উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা প্রদানের নির্দেশনা চান আগামী বাজেটে।

বাংলাদেশ আয়রন অ্যান্ড স্টিল মিল অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি আনামুল হক ইকবাল বলেন, ১৫ শতাংশ হারে মূসক আরোপ হলে প্রতি টন রডে মূসকের পরিমাণ বেড়ে ছয় হাজার টাকায় উন্নীত হবে। এটি নির্মাণশিল্পে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে।

ইস্পাত পণ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান বিএসআরএমের প্রতিনিধি ইমতিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী ইস্পাত কারখানার জন্য বন্দর দিয়ে আমদানি করা পুরোনো লোহা (স্ক্র্যাপ) সরাসরি কারখানায় নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান। বন্দরের অদক্ষতার কারণে লোহার কাঁচামাল আমদানিতে টনপ্রতি ১৫ ডলার বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি দ্রুত বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেন।

মেট্রোপলিটন শপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল কাসেম ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানান।

এদিকে গতকাল দুপুরে আগ্রাবাদে মেট্রোপলিটন চেম্বার আয়োজিত বাজেট আলোচনায়ও ব্যবসায়ীরা শুল্ক, আয়কর ও মূসক বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। সংগঠনটির সভাপতি খলিলুর রহমান মূসকের হার ৭ শতাংশে নির্ধারণ ও স্থানীয় শিল্পের সুরক্ষাসহ ১১টি প্রস্তাব তুলে ধরেন।

এ চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা আয়কর দিচ্ছেন, তাঁদের ফাইল নিরীক্ষা না করার প্রস্তাব দেন।

সংগঠনটির পরিচালক আবুল বশর চৌধুরী বলেন, কাস্টম হাউসে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে শুল্কসংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের পরও সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে তথ্য তলব করা হচ্ছে। এ কারণে এই পদ্ধতিতে অনেক মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে না। এটির সুরাহা দরকার।

চেম্বারের পরিচালক আবদুল আউয়াল চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করেন।

দুই চেম্বারের আলোচনা সভায় এনবিআরের সদস্য ও চট্টগ্রামে সংস্থাটির বিভিন্ন বিভাগের প্রধান এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০৮.৫০এএম/২৪//২০১৭ইং)