• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৯:৫২ পূর্বাহ্ন

সম্ভাবনাময় সীতাকুন্ড


প্রকাশের সময় : মে ২১, ২০১৮, ১:১৭ AM / ৫১
সম্ভাবনাময় সীতাকুন্ড

মিজানুর রহমান : চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরত্বে সীতাকুন্ড উপজেলার অবস্থান। বাংলাদেশের অনেক আদি ইতিহাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই উপজেলায়। কথিত আছে নেপালের একজন রাজা স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে বিশ্বেও পাঁচ কোনে পাঁচটি শিবমন্দিও নির্মান করেন। যার একটি শিব মন্দিরের অবস্থান এই সীতাকুন্ডে, নাম চন্দ্রনাথ মন্দির। ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় মহামুনি ভার্গবের বসবাস ছিল এই অঞ্চলে। এছাড়াও অযোদ্ধার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র তার বনবাসের সময় এখানে ছিলে দীর্ঘসময়। রামচন্দ্র এখানে আসবেন জানতে পেরে তাদের ¯œানের জন্য মহামুনি ভার্গব তিনটি কুন্ড সৃষ্টি করেন। এই তিনটি কুন্ডের একটিতে রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা স্নান করতেন। ধারণা করা হয় সেখান থেকেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় “সীতাকুন্ড”।

ইতিহাসের দিক দিয়ে এই অঞ্চলটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, ভ্রমণ উপাদানের দিক দিয়েও এই অঞ্চলটি ততটাই গুরুত্বপূণ। একই সাথে এই অঞ্চলে রয়েছে পাহাড়, সমুদ্র, ঝর্ণা, বনাঞ্চল সহ অনেক কিছু। বাংলাদেশের খুব কম অঞ্চলই আছে যেখানে একসাথে পাহাড়, একাধিক সমুদ্র সৈকত, ঝর্ণা ও বনাঞ্চল রয়েছে। একসাথে এতো কিছু থাকায় এই ভ্রমণপিপাসুদের কাছেও ব্যাপক জনপ্রিয়। তাই দিন দিন এই অঞ্চলে পর্যটকদের আগমণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাছে। এই অঞ্চলের উল্লেখ যোগ্য কয়েকটি জায়গার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিম্নে দেয়া হলো।


চন্দ্রনাথ মন্দির :
সীতাকুন্ড শহরের পূর্বে চন্দ্রনাথ পাহাড়ের উপরে অবস্থিত চন্দ্রনাথ মন্দির।এই মন্দিরকে হিন্দুদের বড় তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মন্দিরটি চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ উচ্চতার পাহাড় (১১৫২ ফুট) চন্দ্রনাথ পাহাড়ে এর অবস্থান বলে চট্টগ্রামের সব চেয়ে উপরে এই মন্দিরের অবস্থান। তাই পাহাড় প্রেমীদের কাছে চন্দ্রনাথ মন্দির ও চন্দ্রনাথ পাহাড় খুব পছন্দের একটি ভ্রমণ স্পট।


বাশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত :
সীতাকুন্ড বাজার থেকে সাত কিলোমিটার দূরে বাশবাড়িয়ায় অবস্থিত সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে এই সমুদ্র সৈকত। এলাকার নামের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই সমুদ্র সৈকতের নামকরণ করা হয় বাশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত। যেহেতু সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠেছে এই সমুদ্র সৈকতটি তাই কক্সবাজারের মতো অতো সাজানো গোছানো না থাকলেও এই সমুদ্র সৈকতে আসলে প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া যায় অনায়াসেই। এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই সমুদ্র সৈকতে তৈরী করা হয়ছে প্রায় ৫০০ মিটারের একটি জেটি ব্রিজ। যার উপর দিয়ে হাটলে মনে হয় সমুদ্রের পানির উপর দিয়ে হাটছি। এছাড়াও রয়েছে সবুজ ঘাসে ঘেরা বিস্তৃর্ণ খোলা জায়গা, রয়েছে অনেক ঝাউ গাছ।

গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকত :
সীতাকুন্ড বাজার থেকে গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব ০৫ কিলোমিটার। পুরো সমুদ্র সৈকত জুড়ের রয়েছে ঘাসে ঘেরা সবুজ গালিচা। এই বিচের আরো বিশেষত্ব হলো সমুদ্র সৈকতের পাড়ে যেতে হলে প্রায় ১০ মিনিটের পায়ে হেটে একটি মাঠ পার হয়ে যেতে হয়। আর পুরো মাঠ জুড়েই রয়েছে সবুজ ঘাস আর একটু পর পর ছোট ছোট গর্ত। জোয়াড়ের সময় এই গর্তগুলোতে পানি এসে জমে থাকে। এই গর্তগুলো আর সবুজ মাঠ পুরো বিচটির সৌন্দর্য বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

সীতাকুন্ড ইকো পার্ক ও বোনিক্যাল গার্ডেন :
সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে ১৯৯৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠে দেশের প্রথম ও এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ইকো পার্ক ও বোটানিক্যাল গার্ডেন। জীব বৈচিত্র সংরক্ষণ, প্রাণীকুলের অভয়ারণ্য ও সাধারণ মানুষের বিনোদনের উদ্দেশ্যেই গড়ে তোলা হয় এই স্পটটি। ১৯৯৬ একরের এই স্পটটির ১০০০ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয় বোটানিক্যাল গার্ডেন ও ৯৯৬ একর জায়গা জুড়ে গড়ে তোলা হয় বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য। ২টি ঝর্ণা, ৩টি পিকনিক স্পট, ৮টি বিশ্রাম ছাউনি সম্বলিত এই স্পটে রয়েছে মেছোবাঘ, ভালুক, মায়াহরিণ, বানর, হনুমান, শুকর, সজারু, বনমোরগ সহ শতাধিক প্রজাতির পাখির বসবাস।

উপরোক্ত স্পট গুলো ছাড়াও রয়েছে ভাটিয়ারী লেক, কুমিরা ফেরিঘাট, বাশবাড়িয়া রাবার বাগান, বাড়বকুন্ড, বারৈয়াঢালা আশ্রম, ব্যাসকুন্ড, বিরুপাক্ষ মন্দির, গয়াক্ষেত্র, জগন্নাথ মন্দির, ককর নদী, কুমারী কুন্ড, পাতালপুরী, শংকর মঠ সহ নাম না জানা আরও অনেক ভ্রমণ স্পট।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১:১০এএম/২১/৫/২০১৮ইং)