• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৪:৫৩ পূর্বাহ্ন

শামীম ওসমান আমার নেতা নয়, ভাই : মীর সোহেল আলী(ভিডিও)


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১৫, ২০১৯, ৯:৪০ AM / ৯৭
শামীম ওসমান আমার নেতা নয়, ভাই : মীর সোহেল আলী(ভিডিও)

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : মীর সোহেল আলী। আওয়ামীলীগের তুখোর নেতা এমপি শামীম ওসমান সহ দলীয় যে কোনো মিটিং-মিছিল বা জনসভায় সবচেয়ে বেশি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যিনি উপস্থিত হন। প্রিয় নেতার জন্য প্রয়োজনে প্রাণ উৎসর্গ করবেন জানিয়ে জ্বালাময়ী বক্তব্যে মঞ্চ কাঁপানো কর্মীবান্ধব নেতা তিনি। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাধারন কর্মীদের প্রাণপ্রিয় এ নেতা। তবে নিজেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈণিক হিসেবে পরিচয় দিতে যেমন পছন্দ করেন, তেমনি শামীম ওসমানকেই তার একমাত্র রাজনৈতিক পথপ্রদর্শক বলে মনে করেন। তার মতে- এমপি শামীম ওসমান তার নেতা নয়, বরং ভাই। আর এই ভাইয়ের জন্য তিনি ও তার শত শত কর্মীরা প্রাণ দিতেও সদা প্রস্তুত।

পারিবারিক পরিচয় ও শিক্ষা :
১৯৮৬’তে ফতুল্লা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ৮৮’তে ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং কবি নজরুল থেকে ডিগ্রী পাশ করেন মীর সোহেল আলী। শুধু তিনিই নন, বাবা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন কর্মকর্তা মীর মোয়াজ্জেম আলী ও মা মরহুম নাজমা বেগমের সংসারে মীর সোহেল আলী সহ ৭জন সন্তানই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে স্ব স্ব পেশায় ভালো অবস্থানে রয়েছেন। তবে কেনো মীর সোহেল আলী বাবার মতো সরকারী চাকরিতে না গিয়ে রাজনীতিতে এলেন এমন প্রশ্নের জবাবে কর্মীবান্ধব এ রাজনীতিক বলেন- ‘ তখন বাবার ইচ্ছেতে সরকারি চাকরীতে ঢুকিনি বলে বাবা আমাকে শেষ একটা থাপ্পর মেরেছিলেন। তবে তখন যদি জানতাম রাজনীতি করতে এসে আজকে আমাকে মুড়ি বিক্রেতা, চোর উল্লেখ করে সংবাদ প্রকাশ করবে, যা মন চায় তাই তারা পত্রিকায় লিখে দিবে, এর কোনো বিচার হবেনা তাহলে রাজনীতিকে আসতাম না।’

তিনি মনে করেন- রাজনীতিক হিসেবে তাদের যদি দলীয় হাই কমান্ড বা নেত্রীর দ্বারা বিচার হতে পারে, তাহলে মিথ্যে তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করে সাংবাদিকতাকে কলুষিত করা ব্যক্তিদেরও বিচার হওয়া জরুরি। সেই সাথে স্থানীয় কিছু সংবাদ মাধ্যমগুলোর কোয়ালিটি মেইনটেইন করা উচিত বলেও তিনি মনে করেন।

তবে মূলত মায়ের অনুপ্রেরণাতেই অন্য পেশায় না গিয়ে তার রাজনীতিতে আসা বলে জানান মীর সোহেল আলী।

ক্যারিয়ারের শুরুতে দিকনির্দেশনা বিহীন ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও ৯০ এর দশকে বীর মুক্তিযোদ্ধা চাচার অনুপ্রেরণা ও এদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের গল্প শুনে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রতি আকর্ষণ অনুভব করেন। এরই সূত্র ধরে ২৩ বছর আগে (১৯৯৬ সালে) শামীম ওসমানের হাত ধরে নিজস্ব শত শত কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আওয়ামী লীগের একজন সাধারন সদস্য হিসেবে যাত্রা শুরু করেন।

মীর সোহেল আলী মনে করেন- সিনিয়র নেতাদের বিশেষ আশির্বাদে নয়, বরং শত শত কর্মী বাহিনী নিয়ে দলকে গোছাতে পেরেছেন বলেই দল তাকে মূল্যায়ন করেছে।

দুর্বিসহ সেইসব দিন(রাজনীতির পেছনের গল্প) 

২০০১ এ আওয়ামীলীগ ক্ষমতা হারানোর পর পলাতক ও দুর্বিসহ সেইসব দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগাপ্লুত এ নেতা সে সময়কার নানা স্মৃতিচারণ করে বলেন- ‘‘দল ক্ষমতা হারানোর পর আমরা ফতুল্লা থেকে বিতাড়িত হলাম। বাবা-মা ঢাকাতে আমাকে এক জায়গায় রেখে আসেন। তৎকালীন সময়ে প্রথম ঈদের দিন একলা পলাতক অবস্থায় সকালে উঠে পাউরুটি খেলাম। মাকে ফোন করে বলিনি। মা যদি জানতেন, তাহলে খুব কষ্ট পেতেন যে ঈদের দিন পাউরুটি খেয়ে আছে তার আদরের ছেলে। এরপর জননেতা একেএম শামীম ওসমানকে কল করার পর সে বলল- ‘তুমি ঢাকায়, তোমাকেতো মেরে ফেলবে’। আমি পরদিনই ভারতে চলে গেলাম। ভারতে থাকা অবস্থাতেই ৪/৫টা মামলা দেয়া হলো আমাকে। যেসব মামলার কোনো ভেল্যুই নেই। অথচ তখন আমি সাধারন একজন কর্মী, আমার দলীয় কোনো পদ ছিলনা। মনে পড়ে একবার শবেবরাতের সময় আমরা রাজনৈতিক কারণেই ভারতে অবস্থানকালীন আমি নিজাম(শাহ্ নিজাম), লিটন সহ আমরা ৩/৪জন খুব কেঁদেছি। আমরা যারা নারায়ণগঞ্জের মানুষ, তারা কিন্তু শবেবরাতটাকে খুব আনন্দের সহিত পালন করি। অথচ সেখানে তখন সেই ধরনের কোনো পরিস্থিতিই ছিলনা। খুব ফিল করতাম এলাকাকে, আপনজনদেরকে।’

তিনি বলেন- ‘আমাদের(আমি এবং শাহ নিজামের) দোষ একটাই আমরা ডাক দিলেই শত শত কর্মী-সমর্থকরা ছুটে আসে। অর্থাৎ আমাদের লোক বেশি। এটাই আমাদের একমাত্র দোষ।’

তিনি বলেন- ‘আমরাও পরিবার পরিজন নিয়ে থাকি। রাজনীতির পরে যতটুকুই সম্ভব আমাদের পরিবারকে সময় দিতে চেষ্টা করি, যদিও তা পারিনা। আমাদের ছোটভাই তুল্য কর্মীদের পরিবারকেও আমরা নিজেদের পরিবার মনে করি। কর্মীদেরকে আপন ছোট ভাই মনে করি। জননেতা একেএম শামীম ওসমানও আমাদেরকে ভাই মনে করেন। আমাদের কাছে তিনি কখনোই নেতা নন, তিনি আমাদের ভাই।’

জেলা আওয়ামীলীগ থেকে শুরু করে যুবলীগ ও দীর্ঘদিন ধরে নতুন করে কমিটি না হওয়া ছাত্রলীগের বিষয়ে মীর হোসেল আলী বলেন- ‘দল থেকে চিঠি পেলেই আমাদের মূল দল ও প্রতিটি অঙ্গদলকে শক্তিশালী করতে আমরা কার্যক্রম শুরু করে দিব। আমাদের মূল উদ্দেশ্যই জননেতা একেএম শামীম ওসমান এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করা। এছাড়া ছাত্রলীগের কমিটিও সম্ভবত আগামী নভেম্বরের মধ্যেই ভেঙে পুনঃগঠিত করা হবে।’

সম্প্রতি আবরার হত্যায় ছাত্রলীগের জড়িত থাকা প্রসঙ্গে ‘ছাত্ররাজনীতি বন্ধের পক্ষে নয়’ জানিয়ে সাবেক এ ছাত্রনেতা বলেন- ‘বিএনপি-জামায়াত থেকে গিয়ে যারা ছাত্রলীগে যোগ দিচ্ছে তাদের আচরনে উশৃঙ্খলতা দেখা যায়। মূলত এরাই আবরার হত্যার মতো ঘটনাগুলোর জন্ম দেয়। আর এদের কারণেই সমগ্র দল বিতর্কিত হয়। ফলে এসব বহিরাগতদের দলে ঠাই না দেয়াই উত্তম।’

তবে তিনি ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হবার পক্ষে নন। তার মতে- ছাত্র রাজনীতি বন্ধ হলেই আন্দোলন বন্ধ হবেনা। তবে ছাত্রলীগকে সঠিক গাইডলাইনের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে।

যুবলীগ নেতা সম্রাটের ক্যাসিনো বিতর্ক প্রসঙ্গে মীর সোহেল আলী বলেন- ‘সম্রাট একজন সত্যিকারের কর্মীবান্ধব নেতা ছিল। দলের প্রতি তার ভালোবাসা তার কার্যক্রম এর কারণে সম্রাট এমপি-মন্ত্রী হতো এক সময়। কিন্তু তার এতকিছু করে লাভ কি হলো? সম্রাটের জন্য আমাদের এখন শুধুই মায়া হয়, এর বেশি কিছু করার নেই। জুয়া মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। আমি মনে করি শুধু জুয়া কেনো কোনো নেশাই রাজনীতিবিদদের করা উচিত না।’

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক ভাগ রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ‘আওয়ামীলীগের সবাই এক’ উল্লেখ করে মীর সোহেল আলী বলেন- ‘৫০০ লোকের মাঝে ৫জন কি করছে তার খবরইতো আমরা রাখতে পারিনা। আর আওয়ামী লীগ এত বড় একটি দল, সুতরাং এখান থেকে ২/৪জন বিভক্তিমূলক বক্তব্য দিতেই পারে। তবে আওয়ামীলীগের আমরা সবাই এক।’

তবে বার বার মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে নাম জড়ানো হচ্ছে কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে মীর সোহেল আলী অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- ‘যারা মাদক খায় তারা যদি আমার কাছে আসে আমি তাদেরকে রিহ্যাবে ভর্তি করব। মাদকসেবীরা চাইলেই ভাল হতে পারে। এছাড়া যারা মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত তাদের কেউ যদি আমাদের পাশে থেকে ছবি তুলে তাহলে নিশ্চই আমাদের ছত্রছায়ায় বা আমি তাদেরকে শেল্টার দেই তাতো নয়। কেউ যদি প্রমান করতে পারে আমি মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টার দেই তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দিব’।

তিনি মনে করেন- সুন্দর দেশ গড়ার জন্য সকলকে একত্রিত হয়ে সুন্দর কাজ করতে হবে। এবং নেশামুক্ত এলাকা গড়ার জন্য সকলের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

তিনি বলেন- ‘আমাদের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন দেশ থেকে নেশাকে শূণ্যের কোঠায় নিয়ে আসবে। তবে আমরাতো পুরো দেশকে শূণ্যের কোঠায় আনতে পারব না। কিন্তু আমাদের এলাকা অর্থাৎ জননেতা একেএম শামীম ওসমানের ৪ আসনের এই এলাকাটিকে অন্তত আমরা মাদকমুক্ত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করি।’

          (মা মরহুম নাজমা বেগমের সাথে মীল সোহেল আলী)

ব্যক্তি জীবনে বাবা-মায়ের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এ রাজনীতিক তার ভ্রাতৃতুল্য কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন- ‘সোহেল ভাই জিন্দাবাদ, শামীম ভাই জিন্দাবাদ বা কোনো ভাই জিন্দাবাদ বলে লাভ নেই, মা বাবাকে জিন্দাবাদ বলতে হবে। মা-বাবার সেবা করলে সে জীবনে সবকিছু পাবে।’

ভাল ভাল পদ পদবি পাবার লোভ না করে শুরু থেকেই নিঃস্বার্থভাবে জেলা আওয়ামীলীগকে সুসংগঠিত করতে মীর সোহেল আলীর মতো কর্মীবান্ধব রাজনীতিকরা বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেন। যা একটি দলকে সুসংগঠিত ও শক্তভাবে দাঁড় করাতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। তবে যেখানে আলোচনা রয়েছে সেখানে সমালোচনা থাকবেই। আর সকল সমালোচনাকে ডিঙিয়ে দলের জন্য নিবেদিত থাকাই সত্যিকারের রাজনীতিকদের লক্ষ্য।

ভিডিও সংবাদটি দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-

https://www.youtube.com/watch?v=M-omrlpe08M&feature=youtu.be

https://www.facebook.com/dhakarn24/videos/753000768472125/?t=3
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৯:৩৮এএম/১৫/১০/২০১৯ইং)