• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৯:২৫ অপরাহ্ন

রূপকথার রঙিন শহর দার্জিলিংয়ে ‘দিগন্ত’


প্রকাশের সময় : মার্চ ২৭, ২০১৮, ৬:২২ PM / ৫০
রূপকথার রঙিন শহর দার্জিলিংয়ে ‘দিগন্ত’

 

দার্জিলিং থেকে ফিরে মিজানুর রহমান : পাহাড়ে হয়তো কয়েকটি রিসোর্ট নিয়ে বা হোটেল নিয়ে একটি ভ্রমণ স্পট হতে পারে। কিন্তু চিত্ত বিনোদনের সব উপকরণ নিয়ে গোটা একটি শহর থাকতে পারে এটা দার্জিলিং না গেলে বিশ্বাস করা মুশকিল। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে ভূপৃষ্ঠ থেকে ৭১০০ ফুট বা ২১৬৪.১ মিটার উচ্চতায় গড়ে উঠেছে রঙিন শহর দার্জিলিং। বাহারী রংয়ের চোখ ধাধানো সব রিসোর্ট আর দৃষ্টিনন্দন কিছু জায়গা নিয়ে টুরিষ্টদের জন্য পসরা সাজিয়ে বসে আছে দার্জিলিং শহর। টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয় কিংবা হিমালয়ান মাউন্টেনিং ইনষ্টিটিউটের দৃষ্টি নন্দন সব উপকরণ আপনাকে মুগ্ধ হতে বাধ্য করবে। এছাড়াও রয়েছে মহাকাল মন্দির, রক গার্ডেন, রোপওয়ে, কালিমপং, বাতাসিয়া লুপ, লাভারস পয়েন্ট, ঘুম ষ্টেশন সহ আরো অনেক জায়গা। গত ২২ তারিখে দিগন্ত ট্রাভেল ফ্রিকের উদ্যোগে আমরা ১৭ জনের একটি টিম যাত্রা করি দার্জিলিং। বলাই বাহুল্য যে, জীবনের সেরা ট্যুর গুলোর মধ্যে এটিও অন্যতম একটি ট্যুর ছিলো।

জাপানিজ প্যাগোডা

২২মার্চ রাতের বাসে রওনা হই বুড়িমারীর উদ্দেশ্যে। পরদিন ২৩ তারিখ সকাল ৯টার দিকে পৌছে যাই বুড়িমারী। ১২.টার মধ্যেই সব কাষ্টমস ফর্মালিটিস শেষ করে প্রবেশ করি ভারতের চেংরাবান্ধায়। সেখান থেকে সোমো গাড়ীতে করে শিলিগুড়ী। তারপর দুপুরের খাবার শেষে গাড়ী পরিবর্তন করে আবার রওনা হই দার্জিলিংয়ের উদ্দেশ্যে। দার্জিলিংয়ে যাওয়ার পথেই অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম আর প্রভুর সৃষ্টি যে কতটা সুন্দর হতে পারে তা ভাবছিলাম। দার্জিলিং পৌছাতে আমাদের প্রায় সন্ধ্যা ৭.৩০ বেজে যায়। হোটেলেই রাতের খাবার শেষ করে যার যার রুমে ঘুম। পরের দিন সকালে সোমো গাড়ীতে করে রওনা দেই কালিমপংয়ের উদ্দেশ্যে। কালিমপং যেতে আমাদের সময় লাগে প্রায় সাড়ে ৩ ঘন্টা। যাওয়ার সময় প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে কখন সাড়ে তিন ঘন্টা পেরিয়ে গেছে কেউ টেরই পাইনি। মজার ব্যাপার হলো আমরা একেকটা দৃশ্য দেখছিলাম আর কোন মুভিতে এই দৃশ্যগুলো চিত্রায়ন করা হয়েছিল তা মনে করার চেষ্টা করছিলাম। কালিমপং পৌছেই আমরা চলে যাই প্যারাগ্লাইডিং করতে। যদিও অনেকেরই করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু কিছুটা ঝুকি থাকায় সবাই করতে রাজি হয় নি। তাই শেষ পর্যন্ত আমরা ৫জন প্যারাগ্ল্যাইডিং করি। বলতে বাধা নেই যে, যদিও প্যারাগ্ল্যাইডিংয়ের প্রথম মূহূর্তগুলো মনের ভিতর কিছুটা ভয় কাজ করছিলো, কিন্তু ডানা না থাকা স্বত্বেও যখন পাখির মত আকাশে উড়ছিলাম তখন মনের সকল ভয় নিমিষেই গায়েব হয়ে যায়। বাকিরা নিজেদের মতো কালিমপং ঘুরে ঘুরে দেখে। কালিমপং থেকে ফিরতে ফিরতে আমাদের সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আর কোন প্ল্যান না করে সবাই যে যার মতো দার্জিলিং শহরটা ঘুরে দেখি আর মল রোডে বসে আড্ডা দেই। তারপর যথারীতি ঘুম।

রক গার্ডেন 

পরের দিন ভোর ৪টায় আমরা রওনা দেই টাইগার হিলের উদ্দেশ্যে। লক্ষ্য, জীবনের শ্রেষ্ঠ সূর্যোদয় দেখা। কিন্তু ভাগ্য মনে হয়নি চায়নি যে, একবারেই দার্জিলিংয়ের সব সৌন্দর্য্য দেখে ফেলি। তাই আবহাওয়া আমাদের নিয়ে ছেলে খেলা করলো। প্রচন্ড কুয়াশার কারণে জীবনের শ্রেষ্ঠ সূর্যোদয়টা অদেখাই রয়ে গেল। বাতাসের তীব্রতার কারণে ঠান্ডা বাতাস আর বেশিক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে দিল না। তাই তাড়াতাড়ি টাইগার হিল থেকে নেমে একে একে বাতাসিয়া লুপ, জাপানিস প্যাগোডা, ঘুম মনেষ্ট্রি, সেন্ট পলস স্কুল, রক গার্ডেন, হিমালয়ান মাউন্টেনিং ইনষ্টিটিউট সহ আরো কয়েকটি স্পট ঘুরে বিকেলে দার্জিলিং শহরে পৌছলাম। দার্জিলিংয়ে পৌছেই কিছু ছুটলো বিগ বাজারের আইনক্সে মুভি দেখতে আর কিছু মানুষ ছুটলো শপিং করতে। আর আমার মতো যারা ছিল যে, মুভি দেখা বা শপিং করা কোনটার প্রতিই আগ্রহ নেই, তারা মল রোডে বসে বসে সময়টাকে উপভোগ করছিল। রাত যখন আমাদের হোটেলে ফেরার জন্য ডাকছিল তখন সবাই আস্তে আস্তে হোটেলের পথে রওনা হলাম। মধ্যরাত পর্যন্ত চললো আড্ডা, গান। তারপর সবাই হারিয়ে গেলাম ঘুমের দেশে।

বাতাসিয়া লুপে পুরো টিম

পরের দিন অর্থ্যাৎ ২৬ তারিখ আমাদের ফেরার পালা। তাই সবাই ব্যাগ পত্র ঘুছিয়েই সোমো গাড়িতে করে শিলিগুড়ি ফিরতে ফিরতে শেষবারের মতো দেখে নিচ্ছিলাম আজব শহর দার্জিলিংটাকে। দুপুর নাগাদ শিলিগুড়ি পৌছে দুপুরের খাওয়া শেষ করে কিছুটা সময় শিলিগুড়ি ঘুরাঘুরির পর রওনা হলাম চেংড়াবান্ধার উদ্দেশ্যে। বিকেল নাগাদ চেংড়াবান্ধা পৌছে কাষ্টমস ফর্মালিটিস শেষ করে চলে এলাম বুড়িমারী। সেখান থেকে বাসে করে ফিরে এলাম চিরচেনা ঢাকায়। ঢাকায় ফিরে এসেছি, যার যার কাজেও যোগ দিয়েছি, কিন্তু আমি শিউর আমার মত বাকিদেরও মন পড়ে আছে দার্জিলিংয়ের রঙিন শহরে।

কালিমপং ক্যাক্টাস গার্ডেন 

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/বিশেষ প্রতিনিধি/এসডিপি/৬:২২পিএম/২৭/৩/২০১৮ই)