• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ন

মাননীয় এমপি আপনার ঘরেও নারী আছে, সুতরাং ন্যায়বিচার করুন


প্রকাশের সময় : জুন ১৯, ২০২০, ২:০৩ PM / ৩০
মাননীয় এমপি আপনার ঘরেও নারী আছে, সুতরাং ন্যায়বিচার করুন

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : সাংবাদিক হিসেবে আমি এখানে কোনো রাজনৈতিক চাল কিংবা আওয়ামীলীগ-বিএনপি প্রসঙ্গে কোনো কথা বলব না। কিন্তু একজন নারী হিসেবে আমি এখানে শুধুমাত্র অপর একজন সম্মানী এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত নারীকে নিয়ে বলব- আমি তার যন্ত্রণার জায়গাটা ফিল করতে পারছি। আমার মনে হয় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনার এই চোখের জল ও তার ভেতরের যন্ত্রণার কারণ একটাই- অপমানবোধ, সমাজের একজন সম্মানী নারী হয়েও আজ তারই স্নেহতুল্য সন্তানের বয়সী কিছু পুরুষ দ্বারা তিনি নির্যাতিত হয়েছেন। সন্তানের বয়সি এসব বখাটে ছেলেপুলেরা তার গায়ের উড়না টেনে হেচরে সরিয়ে নিয়েছে, তার চুলের মুঠি ধরে তাকে একের পর এক আঘাত করেছেন, তার মতো মানবপ্রেমী সম্মানীত নারীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। তার আগে পরের সব সমাজ সেবা বাদ দিলাম। যেখানে একজন পুরুষ কাউন্সিলর একটিমাত্র ওয়ার্ডের জনগণের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে হিমশিম খায়, সেখানে এই নারী কাউন্সিলর তার দায়িত্বে থাকা ৩টি ওয়ার্ডের জনগণের প্রতি সমানভাবে সমান গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে গেছেন। বিশেষ করে এই করোনাকালের শুরু থেকে যখন মানুষ ঘর থেকে বের হতে মৃত্যু ভয় পেতো, সেই তখন থেকে নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে, নিজের পরিবারের কথা না ভেবে ৩টি ওয়ার্ডের অসহায় মানুষের পাশে থেকে দিন-রাত কাজ করে গেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, তার ওয়ার্ডের বাইরের বিভিন্ন এলাকার অসংখ্য অসহায় দরিদ্র মানুষের ঘরে ঘরেও তিনি নিজ অর্থায়নে খাদ্যসামগ্রী পৌছেছেন। যা বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রমান হিসেবে রয়ে গেছে। এছাড়া করোনাভাইরাসের ভয়ে তার এলাকা এবং বাইরের বিভিন্ন এলাকার গর্ভবতি অসহায় নারীদের পাশে যখন ডাক্তার-নার্স কিংবা কোনো আত্মীয়-প্রতিবেশীরাও দাঁড়ায় না, তখন এই আয়শা আক্তার দিনা তাদের সাহায্যে ছুটে গেছেন। মায়ের মমতা দিয়ে সেইসব নারীর আর্থিক ও সামাজিক সহ ডেলিভারির সমস্ত দায় দায়িত্ব বহন করেছেন এবং এখনও করছেন। অথচ একজন অসহায় ভাড়াটিয়ার পক্ষ নিয়ে ন্যায় বিচারকে কেন্দ্র করে যে অপমান তাকে সহ্য করতে হলো তা কি সমগ্র নারী কূলের অপমান নয়? আজ যেভাবে কাউন্সিলর দিনাকে হেনস্থা করা হলো, একইভাবে কি কোনো না কোনোদিন আমাদের সাথেও এমন হয়নি? কিংবা সামনে হবে না বলে মনে হচ্ছে? না, এমনটা হয়ে আসছে এবং হবে। পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা তাদের শ্রম ও যোগ্যতা দিয়ে যতই উচ্চ পদস্থ হোকনা কেনো, এই সমাজ এবং সমাজের নোংরা কিছু পুরুষ যারা যোগ্যতায় নারীকে টপকাতে না পেরে চাল চেলে তাদেরকে পিছিয়ে দিয়ে অধিনস্থ করে রাখতে চায়। কাউন্সিলর দিনার সাথেও এর ব্যতিক্রম কিছু হচ্ছেনা।

যে দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী একজন নারী, যে জেলার সিটি মেয়র একজন নারী; সেই শহরে সেই দেশে একজন নির্বাচিত ও অন্য অনেক পুরুষ জনপ্রতিনিধিদের তুলনায় পরিক্ষীত নারী জনপ্রতিনিধিকে এভাবে অপমান অপদস্থ হতে হয়? কোথায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী? কোথায় মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভী? কোথায় নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অন্য সমস্ত নারী কাউন্সিলররা? কোথায় এই শহরের বিভিন্ন সংগঠন তথা বিভিন্ন স্তরে প্রতিনিধিত্ব করা নারীরা? কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা বিএনপি করে না আওয়ামীলীগ করে তা দেখার বিষয় আমার না, কেননা আমি কোনো রাজনৈতিক দলের মতাদর্শ নিয়ে চলি না। আমার কাছে ‘মানবতার’ চেয়ে বড় কোনো রাজনৈতিক দল নেই। আমি সেই দলের অনুসারী হিসেবে বলতে চাই- এই নারী কাউন্সিলরের সাথে যা হচ্ছে তা মোটেও আমাদের নারীদের জন্য সুখকর নয়। আজ যদি একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হওয়া সত্ত্বেও একজন নারীকে এভাবে অপমান অপদস্থ হতে হয় পুরুষদের কাছে, তার সহকর্মী পুরুষদের প্ররোচনায়, তবে এই দেশের অন্যসব সাধারন নারীদের অবস্থাটা তাহলে কি হতে পারে? যার পাশাপাশি চেয়ারে বসার যোগ্যতাও এখনও পর্যন্ত এসব ছেলেপুলেদের হয়নি, সেই নারী জনপ্রতিনিধির বুকের উড়না কেরে নিয়ে তার চুলের মুঠি ধরে যারা তাকে মারধর করতে পারে এবং উল্টো আবার তারই বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে ফেরারী আসামী করতে পারে, সেইসব ছেলেপুলেরা এই শহরের আরসব সাধারন নারীর সাথে কি করতে পারে এতটুকু ধারনা হয়ত অনেকেই করতে পারছেন। আজ যদি এই নারী জনপ্রতিনিধি সঠিক বিচার না পায়, তাহলে ওরা আরও সাহসী হয়ে উঠবে।

মাননীয় এমপি শামীম ওসমান, আপনার ঘরেও নারী আছে। আপনিও ৩জন নারীর অভিভাবক। সুতরাং রাজনৈতিক খেলা বাদ দিয়ে সময় থাকতে একজন নারীর প্রতি ন্যায় বিচার করুন। এই নারী অন্য একটি দলের অুনসারী হয়েও আপনাকে সম্মান জানিয়ে আপনার ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে, আর আপনার নিজ দলের অনুসারী তথা ছোট ছোট ছেলেপুলেরা আপনারই ছবি ভেঙে আপনারই দলের মাথাদের ছবি ভেঙে এই নারীর বিরুদ্ধে উল্টো মামলা দিয়ে তাকে হয়রানী করে চলেছে, আপনার মতো জ্ঞানী গুণি রাজনীতিবিদ এসব খবর রাখেন না তা কি করে হয় মাননীয় এমপি? এই শহরের ঘরে-বাইরের তথা সমগ্র নারী সমাজ এখন শুধুমাত্র আয়শা আক্তার দিনার মতো ন্যায় বিচারকের প্রতি আপনার ন্যায় বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। তারা দেখতে চায়, আপনি এই শহরের সকলের নয়নের মণি শামীম ওসমান একজন নারী জনপ্রতিনিধির বেলায় কেমন বিচার করেন। মাননীয় এমপি একটা বিশেষ অনুরোধ আপনার কাছে- যদি নিজের দেয়া কথা রাখতে এই ঘটনার বিচার করতেই বসেন, তাহলে আপনার ঘরে থাকা ৩জন নারীর কাছে আগে জিজ্ঞেস করে ঘর থেকে বের হবেন যে- এই ঘটনার ন্যায় বিচার তারা কেমনটা প্রত্যাশা করে। আপনিতো আল্লাহকে ভয় করেন, তাহলে আপনার আর কিসের ভয়? আসুন, এবং সময়ের কাজ সময়ে করুন, ন্যায় বিচার করুন। আমি যতটুকু জানি আপনি নিজেও কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনাকে ছোট বোনের মতো স্নেহ করেন। আমরা দেখতে চাই একজন বড় ভাই, তার ছোট বোনের শ্লীলতাহানী করা অসভ্য বাচ্চাগুলোর বিচার কিভাবে করেন।

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/২:০৪পিএম/১৯/৬/২০২০ইং)