• ঢাকা
  • সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৯:১৯ অপরাহ্ন

মাথার উপরে সিসি ক্যামেরা মাথায় ছিল না খুনিদের


প্রকাশের সময় : জুলাই ১৭, ২০১৮, ১:৪২ PM / ৯৪
মাথার উপরে সিসি ক্যামেরা মাথায় ছিল না খুনিদের

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : জ্ঞানীজনেরা বলেন, প্রত্যেক অপরাধীই একটি চিহ্ন রেখে যায়। রাজধানীতে কাজী রাশেদ হত্যাকাণ্ডের বেলায়ও অমোঘ এ বাণীরই প্রতিফলন ঘটেছে। রাশেদকে গুলি করে হত্যার পর ঠাণ্ডা মাথায় তার লাশ ঘটনাস্থল থেকে অপসারণ করা হয়। অত্যন্ত সাবধানী চার যুবক হাতে পলিথিন বেঁধে রাশেদের লাশ টেনে নিয়ে ফেলে দেয় দেয়ালের অপর পার্শ্বের গলিতে।

কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। মাথার ওপরে যে সিসি ক্যামেরা আছে এবং সেখানে যে তাদের ধারণ করা হচ্ছে, সেটিই মাথায় ছিল না তাদের। অথচ রাশেদের ঘাতক হিসেবে অন্যতম অভিযুক্ত ইউসুফ সর্দার সোহেল ওরফে সুন্দরী সোহেল নিজেই মোট ৯টি ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা স্থাপন করেছিলেন ঘটনাস্থলসংলগ্ন তার অফিসের ভিতরে-বাইরে। প্রতিপক্ষ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গতিবিধি নজরদারিতে রাখতেই এ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজের নিরাপত্তায় তার নিজেরই স্থাপন করা ক্যামেরা এখন আর তাকে আইনের কাছে নিরাপদ থাকতে দিচ্ছে না।

বনানী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সুন্দরী সোহেল। আর কাজী রাশেদ ছিলেন বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং সুন্দরী সোহেলের দেহরক্ষী। গত শনিবার গভীর রাতে রাশেদকে খুনের পর লাশ সরিয়ে নেওয়া হয়। সেই দৃশ্য ধরা পড়েছে সুন্দরী সোহেলের সিসি ক্যামেরাগুলোর ফুটেজে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের পর থেকে পলাতক সুন্দরী সোহেল। পুলিশ তার অফিসের কম্পিউটারে ধারণকৃত সিসি ক্যামেরার সব ফুটেজ জব্দ করেছে।

মহাখালীর স্কুল রোডের জিপি-গ/৩৩/১ নম্বর ভবনের (কঙ্কাল বাড়ি) নিচতলায় কথিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘রেইনবো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’ নামের একটি অফিস রয়েছে। সাইনবোর্ডে প্রতিষ্ঠানটির নামের নিচে বড় বড় হরফে লেখা রয়েছে- প্রকাশক : ইউসুফ সরদার (সোহেল)। সুন্দরী সোহেলের অফিস এটি। এখানে বসেই রাজধানীর গুলশান, বনানী ও মহাখালী এলাকার ডিশ ব্যবসা, টেন্ডার, চাঁদাবাজি ও মাদকব্যবসাসহ নানা অবৈধ কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি।

গত রবিবার ভোরে এ কঙ্কাল বাড়ির পেছনের গলি থেকে উদ্ধার করা হয় কাজী রাশেদের গুলিবিদ্ধ লাশ। রাশেদের লাশ তার অফিসের সামনের সরু পথ দিয়ে টেনে ভবনটির সীমানাপ্রাচীরের উল্টোপাশে ফেলে দেওয়া হয়। এ অপকর্মের ফুটেজ এখন তদন্ত কর্মকর্তাদের হাতে।

ফুটেজে দেখা যায়, শনিবার দিনগত রাত ৩টা ৪ মিনিটে হাতে পলিথিনের ব্যাগ পেঁচিয়ে রাশেদের নিথর দেহ টেনে-হিঁচড়ে সরু ওই গলিপথ দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ৪ যুবক। একটু পরই দেখা যায়, যুবকরা ফিরে আসছে। এ সময় পাশের দেয়ালে হাতে লেগে থাকা কিছু একটা (রক্ত!) মোছেন দিপু। তারা একে একে ধীরেসুস্থে অফিসের সামনের গলি দিয়ে বেরিয়ে যান।

এ চার যুবক হলেন-মহাখালী দক্ষিণপাড়ার ডিশ ব্যবসায়ী ফিরোজ, সুন্দরী সোহেলের বডিগার্ড হাসু, সুন্দরী সোহেলের মিডিয়া নিয়ন্ত্রক দিপন ওরফে দিপু। চতুর্থ জন ফর্সা লম্বা গড়নের। তার পরিচয় উদ্ঘাটন হয়নি। ফুটেজে সুন্দরী সোহেলকে দেখা যায়নি।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, সুন্দরী সোহেলের অফিসে বা এর আশপাশে রাশেদকে হত্যা করা হয়েছে। নারীঘটিত কিংবা চাঁদার ভাগাভাগির মতো কোনো বিষয় এ হত্যার নেপথ্য কারণ বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। শনিবার দিনগত রাত আনুমানিক সোয়া ২টার দিকে কয়েকটি গুলির শব্দ শোনা গিয়েছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় একাধিক অধিবাসী। ঘটনার পর থেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে ঝুলছে তালা, লাপাত্তা সুন্দরী সোহেল ও তার সহযোগীরা।

ঘটনার দুদিনেও পুলিশ সন্দেহভাজন কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। নিহতের স্বজনরা এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দ্রুত খুনিদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তারা।

সূত্র জানিয়েছে, যুবলীগ নেতা সুন্দরী সোহেল বিশাল এক গ্যাং গড়ে তুলেছেন মহাখালীতে। এর অন্যতম সদস্য হলেন ফিরোজ, দিপু, হাসু, বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাকির হোসেন সরদার (সোহেলের চাচা এবং রাশেদ হত্যা মামলার আসামি), দক্ষিণপাড়ার রিপন, সাততলা বস্তির শাহ আলম ওরফে প্রিন্স আলম, বনানীর ২ নম্বর রোডের ঘোড়া জুয়েল। তাদের কাছে রয়েছে বৈধ-অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। তারা সুন্দরী সোহেলের নেপথ্য পৃষ্ঠপোষকতায় গুলশান, বনানী ও মহাখালী এলাকায় ডিশ ব্যবসা, টেন্ডার, চাঁদাবাজি ও মাদককারবারসহ নানা রকম অপকর্ম করত। মহাখালীস্থ বনভবনের উল্টো পাশে এস্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট নামে একটি কোম্পানি দুটি বহুতল ভবন নির্মাণ করছে। কয়েকদিন আগে প্রতিষ্ঠানটির কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করেছিল এ গ্যাং।

রাশেদের বাবা আবুল হোসেন জোর গলায় অভিযোগ করেন, সুন্দরী সোহেল ও তার সহযোগীরাই রাশেদকে গুলি করে হত্যা করেছে। খুুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারলেই হত্যার রহস্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

খুনিদের গ্রেপ্তারে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বোরহান উদ্দিন বলেন, কী কারণে রাশেদকে হত্যা করা হয়েছে, সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে নিহতের স্বজনদের অভিযোগসহ বেশ কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে আমরা তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।(আমাদের সময়)

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১:৪২পিএম/১৭/৭/২০১৮ইং)