• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন

মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ এখন ইটভাটার জ্বালানী


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৫, ২০১৭, ৮:২৭ PM / ৩৫
মধুবৃক্ষ খেজুর গাছ এখন ইটভাটার জ্বালানী

 

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : হরেক রকমের পিঠা-পুলি খাওয়ার জন্য একসময় তীব্র শীতের মাঝেও খেজুরের রস সংগ্রহের জন্য ব্যস্ত থাকতেন গাছিরা। গত কয়েক বছরের ব্যবধানে ক্রমবর্ধমান মানুষের বাড়ি-ঘর নির্মাণ আর নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে ক্রমেই খেজুর গাছের সংখ্যা কমে গেছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে।

গত কয়েক বছর পূর্বেও শীতকালে এসব এলাকার গাছিরা খেজুর গাছের রস সংগ্রহে খুবই ব্যস্ত সময় কাটাতেন। তারা খেজুরের রস ও পাটালী গুড় বিক্রি করে বিপুল অংকের টাকা আয় করতেন। কিন্তু কালের বিবর্তনে গত দু’তিন বছর ধরে তা ক্রমশ বিলুপ্ত হতে বসেছে। খেজুর রস দিয়ে শীত মৌসুমে পিঠা ও পায়েস তৈরির প্রচলন থাকলেও শীতকালীন খেজুর গাছের রস এখন দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় ও খেজুর গাছি সূত্রে জানা গেছে, পলাশবাড়ী সহ পার্শ্ববর্তী উপজেলা গুলোতে কিছু কিছু এলাকায় এখনও পর্যাপ্ত পরিমাণ খেজুর গাছ থাকলেও সঠিকভাবে তা পরিচর্যা না করা, নতুন করে গাছের চারা রোপণ না করা এবং গাছ কাটার পদ্ধতিগত ভুলের কারণে প্রতি বছর অসংখ্য খেজুর গাছ মারা যাচ্ছে। এছাড়া এক শ্রেণীর অসাধু ইটভাটার ব্যবসায়ীরা জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছ ব্যবহার করার কারণে ক্রমেই কমে যাচ্ছে খেজুর গাছের সংখ্যা।

প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও শীত পড়ার শুরুতেই উপজেলার সর্বত্র পেশাদার খেজুর গাছির চরম সংকট পড়ে। তার পরেও কয়েকটি এলাকায় শখের বশত গাছিরা নামেমাত্র খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের কাজ করছেন। ইতিমধ্যে ওইসব গাছিরা সকাল-বিকেল দুই বেলা রস সংগ্রহ করছেন। প্রভাতের শিশির ভেজা ঘাস আর ঘন কুয়াশার চাঁদর, হেমন্তের শেষে শীতের আগমনের বার্তা জানিয়ে দিচ্ছে আমাদের। এসময় মৌসুমী খেজুর রস দিয়েই গ্রামীণ জনপদে শুরু হতো শীতের আমেজ।

শীত যতো বাড়তে থাকতো খেঁজুর রসের মিষ্টতাও ততো বাড়তো। শীতের সাথে রয়েছে খেঁজুর রসের এক অপূর্ব যোগাযোগ। এ সময় গৌরব আর ঐতিহ্যের।

সূত্রমতে, প্রাচীণ বাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছ আর গুড়ের জন্য একসময় এ অঞ্চল বিখ্যাত ছিলো। অনেকে শখের বশে খেজুর গাছকে মধুবৃক্ষ বলে থাকতেন। ওইসময় শীতের মৌসুমে খেজুর রসের নলেন গুড়ের মৌ মৌ গন্ধে ভরে উঠতো গ্রামীণ জনপদ।

খেজুর রস দিয়ে গৃহবধূদের সুস্বাদু পায়েস, বিভিন্ন ধরনের রসে ভেজানো পিঠা তৈরির ধুম পড়তো। রসনা তৃপ্তিতে খেজুরের নলেন গুড়ের পাটালির কোন জুড়ি ছিল না। গ্রামীণ জনপদের সাধারণ মানুষ শীতের সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁপতে কাঁপতে ঠাণ্ডা খেজুর রস না খেলে যেন দিনটাই মাটি হয়ে যেতো। কিন্তু ইট ভাটার আগ্রাসনের কারণে আগের তুলনায় খেজুর গাছের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে।

ইটভাটায় খেজুর গাছ পোড়ানো আইনত নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও ইটভাটার মালিকেরা সবকিছু ম্যানেজ করে ধ্বংস করে চলেছে খেঁজুর গাছ। গত কয়েক বছর ধরে ইট ভাটার জ্বালানি হিসেবে খেজুর গাছকে ব্যবহার করায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে দ্রুত খেজুর গাছ ফুরিয়ে যেতে শুরু করেছে। ফলে এ জনপদের মানুষ এখন খেজুর রসের মজার মজার খাবার অনেকটাই হারাতে বসছে।

শখের বসত প্রাকৃতিক ভাবে জন্মানো খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহকারী গাছিরা বলেন, আগের মতো খেজুর গাছ না থাকায় এখন আর সেই রমরমা অবস্থা নেই। ফলে শীতকাল আসলেই অযতেœ অবহেলায় পড়ে থাকা গ্রামীণ জনপদের খেজুর গাছের কদর বেড়ে যায়। বর্তমানে এসব অঞ্চলে প্রতি হাড়ি খেজুর রস এক থেকে দেড়’শ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তাও চাহিদার তুলনায় খুবই কম।

তারা আরো বলেন, খেজুর গাছ রক্ষায় বন বিভাগের কার্যকরী কোন পদক্ষেপ না থাকায় ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে খেজুর গাছ আর শীতের মৌসুমে খেজুর গাছের রস শুধু আরব্য উপনাস্যের গল্পে পরিণত হতে চলেছে।

ঐতিহ্যবাহী এ খেঁজুর রসের উৎপাদন বাড়াতে হলে টিকিয়ে রাখতে হবে খেজুর গাছের অস্তিত্ব। আর সে জন্য যথাযথ ভাবে পরিবেশ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে ইটভাটাসহ যেকোন বৃক্ষ নিধনকারীদের হাত থেকে খেজুর গাছ রক্ষা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ইতিমধ্যে কৃষি বিভাগ থেকেও কৃষকদের খেজুর গাছ লাগানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বাড়ির আনাচে-কানাচে, রাস্তার পার্শ্বের পরিত্যক্তস্থানে কৃষকেরা পর্যাপ্ত পরিমাণ খেজুর গাছ রোপন করলে ভবিষ্যত প্রজন্মকে খেজুরের রস ও গুড়ের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। শীতকাল মানে হাড়কাঁপুনে ঠাণ্ডা।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/৮:২৬পিএম/১৫/১/২০১৭ইং)