• ঢাকা
  • বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ০৬:৪২ অপরাহ্ন

বিশ্ব ডিম দিবস ও ডিম সমাচার


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ১২, ২০১৮, ১১:৫৩ PM / ৪৯
বিশ্ব ডিম দিবস ও ডিম সমাচার

মো. রাকিবুল ইসলাম : ডিম, একটি ডিম্বাকৃতি খাদ্য। ভাজি, অমলেট, ভর্তা, ঝোল কি না করে খাওয়া যায়। আপনি বিবাহিত কিন্তু বউ বাপের বাড়ি গিয়েছে সমস্যা নেই সহজেই ডিম দিয়ে খাওয়াটা কমপ্লিট করে ফেলতে পারেন। ব্যাচেলরদের প্রধান খাদ্য হিসেবে সারা বছরই ডিমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পুষ্টির তুলনায় শরীর গরম রাখার জন্য ব্যাচেলর জাতির প্রধান অবলম্বন ডিম। ডিম নিয়ে কেন লিখছি সেটাই তো বলতে ভুলে গিয়েছি।

আজ বিশ্ব ডিম দিবস। হাসছেন??? তাহলে শুনুন ১৯৯৬ সালে ‘ইন্টার ন্যাশনাল এগ কমিশন’ ভিয়েনায় এক সেমিনারের আয়োজন করে। আমিষের চাহিদা পূরণ, মেধার বিকাশ ও জনস্বাস্থ্যেরর প্রতি খেয়াল রাখার জন্য প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় শুক্রবার বিশ্ব ডিম দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেন। প্রতি বছরের ন্যায় এবার পুরো পৃথিবীর পাশাপাশি যথাযথ মর্যাদায় আমাদের দেশেও ডিম দিবস পালিত হবে। এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো ‘সুস্থ যদি থাকতে চান প্রতিদিন ডিম খান’।

ফিরে আসি ডিমের আলোচনায়। আমরা ছোট থেকেই স্বাস্থ্যবান। কারা জানেন যারা পরীক্ষার খাতায় ডিম পেয়ে এসেছি। শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা উনারা নম্বরের পরিবর্তে আমাদের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রেখে এ পর্যন্ত ডিম খাওয়াতে খাওয়াতে পড়াশোনাটা শেষ করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

ডিম কি শুরুই খাবার জিনিস? অশ্বডিম্ব রয়েছে যা এক ইতিহাস। অশ্বডিম্ব খাবো বলে এখনো কিছু ভদ্র বাচ্চা বায়না ধরে। বলতে হবে সেসকল বাচ্চা জিনিয়াস। অশ্বডিম্ব চেয়ে মাথা ঘোলা করার জন্য তাদের অবশ্যই নোবেল ক্যাটাগরি তৈরি করে নোবেল দেয়া উচিত।

ডিম নিয়ে রয়েছে জানা-অজানা অনেক কথা রয়েছে। ইন্টারনেট ঘেটে সেগুলিই এখন আপনাদের সামনে হাজির করছি।

১। ডিমের নতুন দিনের শুরু মিসরে খ্রিষ্টপূর্ব ১৪০০ সালের কথা, মুরগির ডিমে কৃত্রিমভাবে তা দেওয়ার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছিল মিসরীয়রা। সে সময় ডিমে তা দেওয়া হতো গুহার ভেতরে। এর ফলে মুরগির সংখ্যা বেড়ে গিয়েছিল এবং সেই সঙ্গে মুরগির ডিমও। আর তাতে মিসরীয়দের খাদ্যের ভান্ডারে ডিমের অভাবও হয়নি কখনো। মিসরীয়রা ডিমকে পবিত্র বস্তু হিসেবে জানত। এ কারণে ডিম রেখে দেওয়া হতো উপাসনালয়ের ভেতরেও।

২। অমলেটের শুরু রোমে রোমান সাম্রাজ্যে ডিমের সঙ্গে মধু মিশিয়ে একটি খাবার বানানো হতো। তারা সেটার নাম দিয়েছিল ‘ওভেমেল’। বাংলা করলে যেটার অর্থ দাঁড়ায় ‘ডিম ও মধু’। কেউ কেউ বলেন, এই ‘ওভেমেল’ থেকেই ‘অমলটে’ শব্দের উৎপত্তি। আবার অনেকের মতে, ফরাসি শব্দ ‘অ্যামেলেট’ থেকেই এসেছে ‘অমলেট’। রোমানরা বিশ্বাস করত, ডিম সৌভাগ্যের প্রতীক। এ কারণে তারা ঘরের মেঝে সাজাত ডিমের খোলস দিয়ে।

৩। মুরগি কেন সারা বছর ডিম পাড়ে? বুনো পাখিরা সারা বছর ডিম পাড়ে না। মুরগি কেন পাড়ে? এই অসম্ভবকে তারা সম্ভব করল কী করে? গবেষকেরা বলেন, থায়োরয়েড-স্টিমুলেটিং হরমোন রিসেপটর (টিএসএইচআর) নামের একটি জিন বছরের নির্দিষ্ট সময়ে বুনো পাখিদের ডিম পাড়ার বিষয়টি ঠিক করে দেয়। মুরগির মধ্যে এই জিনের প্রভাব পরিবর্তিত (মিউটেশন) হয়েছে। ফলে সারা বছর এরা ডিম পাড়ে। তাই মানুষের গৃহপালিত পাখির তালিকায় মুরগি আছে সবার ওপরে।

৪। ডিম উৎপাদনে শীর্ষে চীন ‘মেড ইন চায়না, বেশি দিন যায় না’! এটা নতুন একটা প্রবাদ। চীনের অনেক পণ্য নিয়ে বিস্তর অভিযোগ আছে বলেই এমন প্রবাদের জন্ম। তবে একটি তথ্য আপনাকে ভাবাবে; বিশ্বের ৪০ শতাংশ ডিমের জোগান আসে ওই চীন থেকেই! ১৯৮৪ সালে ডিমের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিয়ে চীন উঠে গেছে শীর্ষে। তবে ওই যে চীনের বিরুদ্ধে ভোক্তার অভিযোগ এখানেও আছে। ডিমের এত বড় জোগান দিতে চীন কারখানায় ডিম তৈরিও করে! রেজিন, স্টার্চ এবং আরও কিছু উপাদান দিয়ে তৈরি নকল ডিম এতটাই নিখুঁত যে বোঝার উপায় নেই কোনটা আসল, কোনটা ‘মেড ইন চায়না’!

৫। মার্কিনরা এত ডিম খায়! যুক্তরাষ্ট্রের একেকজন প্রতিবছর গড়ে ২৫০টি ডিম খায়। সংখ্যাটা অনেক বেশি মনে হচ্ছে? তাহলে ৬০ বছর আগের হিসাবটা শুনুন। সে সময় মার্কিনরা বছরে জনপ্রতি গড়ে ৩৮৯টি ডিম পেটে চালান করত। এমন বিপুল চাহিদার অন্যতম কারণ হলো ডিম প্রোটিনসমৃদ্ধ এবং সস্তা। তার চেয়ে বড় কারণ বোধ হয়, ডিম রাঁধতে বেশি কারিকুরির দরকার নেই।

৬। ডিমের রঙের সূত্র অনেকেই বলেন, মুরগির রং যেমন, ডিমের রংও তেমন হয়। যেমন আগাগোড়া সাদা রঙের লেগহর্ন মুরগির ডিমের রং সাদা। বাদামি ও লালের মিশেল রঙের বার্নেভেল্ডার জাতের মুরগি ডিম পাড়ে বাদামি রঙের। তবে ব্যতিক্রমও আছে অনেক। ফুটকিওয়ালা জলপাই রঙের কিছু মুরগি আছে, যেগুলোর ডিমের রং কিছুটা সবুজাভ। নানা রঙের অ্যামেরাউকানা নামের এক জাতের মুরগি আছে, যেগুলো ডিম দেয় হালকা নীল রঙের!

৭। সবচেয়ে বড় ডিম ১৮৯৬ সালের কথা। যুক্তরাজ্যের ল্যাঙ্কাশায়ারে একটি মুরগি ডিম পেড়েছিল, যেটার ওজন ছিল ১২ আউন্স। পরিধির হিসেবে নয় ইঞ্চি। সেই রেকর্ডটা বহাল তবিয়তে ছিল ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে। ২০১০ সালে সেই রেকর্ড ভেঙে দেয় যুক্তরাজ্যের এসেক্সবাসী হ্যারিয়েটের একটি মুরগি। ডিমটির পরিধি ছিল ৯ দশমিক ১ ইঞ্চি!

৮। ডিম খুব ভীতিকর হ্যাঁ, কারো কারো কাছে ডিম খুব ভীতিকর বস্তু। ডিম ভয় পান এমন ব্যক্তিদের মধ্য বিশ্বখ্যাত তারকাও আছেন। হলিউডের কিংবদন্তিতুল্য পরিচালক আলফ্রেড হিচককও ডিম ভয় পেতেন। ডিমের মতো ‘নিরীহ’ বস্তু ভয় পাওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে একবার তিনি বলেছিলেন, ”সাদা ওই বস্তু যাতে কোনো ছিদ্র নেই… ডিমের কুসুমের চেয়ে বিরক্তিকর কোনো জিনিস কোনোদিন দেখেছেন?” ৮১ বছরের জীবনে একটাও ডিম খাননি আলফ্রেড হিচকক।

৯। অনেক আয়ের উৎস হতে পারে ডিম বিশ্বের সবচেয়ে দামি ডিম ‘ফাব্যার্জ এগ’। এটি অবশ্য মানুষের তৈরি নকল ডিম। রাশিয়ার প্রখ্যাত জুয়েলার পেটার কার্ল ফাব্যার্জ-এর ডিজাইনে তৈরি বলে এর নাম ‘ফাব্যার্জ এগ’। মণিমাণিক্য খচিত এ ধরনের কৃত্রিম ডিমের দাম নিলামে কয়েক মিলিনয় ডলারও ওঠে।

১০। ভবিষ্যৎও বলে ডিম প্রাচীনকালে রোমের মানুষ ভাগ্য জানতে ডিমের শরণাপন্ন হতেন। এ যুগেও যে অদৃষ্টবাদী সব মানুষ ডিমের দিকে থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তা কিন্তু নয়। এখনো কোনো কোনো দেশে পানিতে ডিম ছেড়ে ভবিষ্যৎ জানার চেষ্টা করে মানুষ। অনেকে আবার ডিমের খোসা বা কুসুম দিয়েও নিজের জীবন থেকে আপদ-বালাই দূরে রাখার চেষ্টা করেন।

১১। ডিমের জনপ্রিয়তা ইউটিউবে ডিম কিভাবে ভাঙতে হয়, কিভাবে ডিমের কুসুম ফেটতে হয়, ডিমের খোসা দিয়ে সুদৃশ্য কিছু বানানো যায় কি না- এসব দেখিয়েও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন অনেকে। ডিম জনপ্রিয়, তাই ডিম বিষয়ক ভিডিওগুলোও খুব জনপ্রিয়।

সব-ই লিখলাম কিন্তু ডিম নিয়ে কোনো কবিতা না দিলে লেখাটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ডিম নিয়ে অরূপ গোস্বামীর কবিতা দিয়ে শেষ করছি। তবে মনে রাখবেন আমেরিকান স্বাস্থ্যবিদদের মতে প্রত্যেক ব্যক্তির বছরে কমপক্ষে ১৫১ টি ডিম খাওয়া উচিত।

ডিম্ব কথা

ডিম খায় ছেলে বুড়ো সিদ্ধ বা ওমলেট,
কিছু না থাকলে ঘরে ডিম ভাত ভরপেট।

ডিম লাগে বেকারিতে কেক আর পেস্ট্রি,
ডিম খেত রাজা বাদশা জেনে নাও হিস্ট্রী।

ডিম মাখে চুলে গায়ে আধুনিকা ললনা,
পচা ডিম ছুড়ে মারো করে যে ছলনা।

ডিম থেকে ছানা দেয় মাছ আর পাখিরা,
উট পাখি ডিম দেয় বড় তার চেহারা।

ডিম পাবে হ্যাচারিতে ডিম পাবে খামারে,
সাপ ব্যাঙ ডিম পাড়ে খেয়ো না’ক বাবারে।

ডিমে আছে সব কিছু ভিটামিন প্রোটিন,
ডিম মেলে কম দামে খাও ডিম প্রতিদিন।

লেখক :
মো. রাকিবুল ইসলাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যাল, কুষ্টিয়া

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/কেএস/১১:৫২পিএম/১২/১০/২০১৮ইং)