• ঢাকা
  • সোমবার, ১৭ Jun ২০২৪, ০৭:২৩ অপরাহ্ন

বান্দরবানে অবৈধ্য ভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচার : নিরব প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ৬, ২০১৯, ২:৪৫ PM / ৩৪
বান্দরবানে অবৈধ্য ভাবে পাথর উত্তোলন ও পাচার : নিরব প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা

 

আলীকদম (বান্দরবান) প্রতিনিধি : বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় সরকারী নিয়মনীতি কোন ধরনের তোয়াক্কা না করেই চলছে র্নিবিচারে পাথর উত্তোলন। আলীকদম উপজেলার ২নং চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের বিভিন্ন ঝিরি ও পাহাড়ের পাদদেশ হতে র্নিবিচারের জনসম্মুখে অবৈধ্য ভাবে পাথর উত্তোলন ও পাথর পাচার করলেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সংশিষ্ট র্কমর্কতারা।পানির উৎস ,নদী ,খাল ,ঝিরি ও পরিবেশের চরম ক্ষতি করে পাথর উত্তোলনের মহাধবংসযঞ্জে নেমেছে পাথর দর্স্যুরা ।বারুদের মাধ্যমে ছিন্নভিন্ন করছে প্রাকৃতিক ভাবে বছর বছর ধরে সৃষ্টি হওয়া সুবিশাল পাথর ।পাহাড় ,ঝিরির বুক থেকে নির্বিচারের পাথর উত্তোলনের টুংটাং শব্দে ভাঙ্গাচ্ছে না ঘুমের ভান ধরে জেগে থাকা মানুষগুলো।না চাইলেও মেনে নিচ্ছে পাথর বক্ষণের করুণ দৃশ্য , অর্থ ও ক্ষমতার কালো কাপড়ে বেধে রেখেছে রাজা মহাশয়দের চোখ, কান ,তাই চোখ থেকেও দেখছে না ,কান থেকেও শুনছে না পাথর দুস্যুদের তান্ডবদৃশ্য। নদী ও বিভিন্ন খাল,ঝিরিতে ঘেরা আলীকদমকে মরুভুমি করার কাজে পাথর দুস্যুদের সহায়ক ভূমিকায় অর্থ লোভি একশ্রেণীর স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তি ও ক্ষমতার চেয়ারে বসে থাকা বাবুরা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ,বড় ভরিমূখ ,ছোট ভরির মুখ ,মাংগর ঝিরি ,কলারঝিরির ঝিরি থেকে নির্বিচারের পাথর শ্রমিকরা পাথর উত্তোলন করছে ২৫/৩০ জন শ্রমিক এবং গাড়ীতে করে উত্তোলনকৃত পাথরগুরো কলারঝিরি হয়ে নয়াপাড়ার পাচার করে পাথর ভাঙ্গার মেশিন দিয়ে পাথর ভেঙ্গে ছোট করা হচ্ছে। বাঘেরঝিরি ও ভরিমূখ রাস্তার পাশে পুরানো পাথরের পাশাপাশি সদ্য উত্তোলনকৃত পাথরও স্তুপ করা হয়েছে। পাথর উত্তোলন শ্রমিদের সাথে কথা বললে শ্রমিকরা টাকার জন্য জীবন ঝুঝিঁ করছে এবং রোখন উদ্দিন ও সঙ্গীয়দের নিয়োজিত শ্রমিক বলে জানান তারা।

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান ,র্দীঘদিন ধরে পাথর উত্তোলন করলেও ,পাথর উত্তোলন বন্ধের কোন র্কায়কর পদক্ষেপ নেন নি সংশিষ্ট কতৃপক্ষ । পাথর উত্তোলনে বাধা দিলে নানা হুমকি ও র্নিযাতনের শিকার হতে হয় । ২নং ক্ষ্যৈং ইউনিয়নের ভরিরমুখ ,মমপাখই পাড়ার বিভিন্ন পাহাড় , ঝিরি ও ঝিরির শাখা ,প্রশাখা থেকে প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন করলেও ,পাথর উত্তোলন কারীদের দাপটে নির্ভিকার সাধারণ মানুষ । সাধারণ মানুষকে যারা শক্তি য়োগাবে ,তারাই নিরুদ্দেশ বলে জানান স্থানীয়রা। স্থানীয়রা আরও জানান ,স্থানীয়রা কেউ পাথর উত্তোলনে বাধা দিলে পাথর উত্তোলন কারীরা জনসম্মূখে তাদের শায়েস্তা করবে ও তাদের জন্য লাঠি তৈরী করা আছে বলে হুমকি দেন ।পাথর উত্তোলনকারীরা ক্ষমতাসিন দলের হওয়ায় কেউ বাধা দিলে তাদের উপর চড়াও হন এবং পাথর ভর্তি গাড়ী দিয়ে পিষ্ট করে দেওয়া হবে বলে জানান । বিভিন্ন ঝিরিতে বছর দুয়েক আগেও পাথর থাকলেও র্বতমানে অধিকাংশ ঝিরি ও ঝিরি শাখা প্রশাখা পাথর বিহীন মরুভতি পরিণিত করেছে পাথর দস্যুরা । পাথর উত্তোলনের ফলে ঝিরিগুলোতে পানি শূন্যতা দেখা দিয়েছে । মাঝে মাঝে প্রসাশন কিছু অভিযান চালালেও স¦াভাবিক থাকে পাথর উত্তোলন কারীরাদের পাথর উত্তোলন। পাথর উত্তোলনের স্থলে অভিযান চালানোর আগেই ,পাথরদুস্যুরা জেনে যায় অভিযানের তথ্য ,ফলে পাথর দুস্যুরা সর্তক হয়ে যায় এবং গাঁ ঢাকা দেয় ,আবার পাথর উত্তোলনস্থল থেকে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া কর্তাব্যক্তিরা চলে যাওয়া পর পরই পাথর উত্তোলনশুরু হয় বলে জানান স্থানীয়রা।

সুরেশ পাড়ার বাসিন্দা দিবিয় মণি তংচক্সগ্যা বলেন , আমরা পাথর উত্তোলনকারীদের ক্ষমতার কাছে অসহায় । আমাদের বসতভিটার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বড় ভরিমুখ ঝিরিটি এক বছর আগেও পাথরের ভর্তি থাকলেও বর্তমানে কোন পাথর নেই , আমাদের গোসল করতে হলে ,পাড়া থেকে এক কিলোমিটার দুরে গিয়ে গোসল করতে হয় অল্প পানিতে ।এখন ্ প্রকৃতির ডাক ছাড়াটাও অনেক কষ্টের । পাথর উত্তোলনকারীদের পাথর উত্তোলনে বাধা দিলে , পাথর উত্তোলনে সরকারী অনুমতি আছে মর্মে একটি চিঠি দেখান এবং সুরেশ পাড়াবাসীর জন্য র্ধমীয় উপসনালয়টি পূর্ণ নির্মাণ করে দেওয়ার আশ^াস দেন বলে জানান তিনি ।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক পাথর ব্যবসায়ী বলেন, পাথর উত্তোলনে কোন অনুমতি দেওয়া নেই ,পুরানো অনুমতি পত্রটাকে দেখানো হয় সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর জন্য । তিনি আরও বলেন , বছরখানিক আগের স্তুপ করে রাখা পুরানো পাথরগুলো নিজেদের নামে পরিবহনের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন জেলা প্রসাশকের নিকট । পুরানো পাথর পরিবহনের অনুমতির আড়ালে পাথর ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ঝিরিতে থেকে যে পাথর উত্তোলন করছে এবং করবে তা সহজভাবে প্রশাসনিক কোন ঝামেলা ছাড়া পাচারের একটি মাধ্যম মাত্র । পাথর উত্তোলনে কোন প্রকার বাধা , পাথর উত্তোলন , পাচারের বৈধতা পেতে র্নিংবাচিত জনপ্রতিনিধি ,প্রশাসনের শীর্ষ মহলে তদবির ও পাথর দস্যুরা আকুতি মিনতি করছেন বলে জানান ।

পাথর উত্তোলনকারী মোঃ রোখন উদ্দিন বলেন ,পাথর উত্তেকালনে সরকারী কোন বৈধতা না থাকলেও আলীকদমের সব জায়গায় পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে ।প্রত্যক্ষ ,পরোক্ষভাবে প্রশাসন ,জনপ্রতিনিধি ,রাজনৈতিক ব্যক্তি ,মিডিয়া ব্যক্তিবর্গ সহ সবাকে বিশেষ ভাবে সন্তুষ্টি করে পাথর উত্তোল করা হয় । তিনি আরও বলেন , প্রশাসন ,জনপ্রতিনিধি,রাজনিৈতক ব্যক্তিবর্গ ,মিডিয়া ব্যক্তিবর্গ না চাইলে আমাদের দ্বারা ঝিরি ও পাহাড়ের পাদদেশ থেকে এক টুকরো পাথর উত্তোলন সম্ভব নয় । পাথর উত্তোলনে অদৃশ্যভাবে সবার হাত রয়েছে ।প্রকাশ্যেই হোক আর আড়ালেই হোক পাথর উত্তোলন চলমান থাকবে প্রশাসনিক সকল বাধা সত্ত্বেও।

আলীকদম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নাজিমুল হায়দার জানান ,পাথর উত্তোলনের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগেও আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি এবং ২ জন পাথর ভাঙ্গা মেশিন চালককে জরিমানা করা হয়েছে , পাথর উত্তোলনের স্থানগুলোতে আমরা অভিযানে গিয়েছিলাম ,সেখানে পাথরের স্থুপ দেখলেও পাথর উত্তোলনকারীদের কাউকে পাওয়া যায় নি । পাথর উত্তোলন কাজে জড়িতদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না , অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে ও অভিযান অব্যহত থাকবে । পাথর উত্তোলন রোধে সবার সহযোগীতা চান বলে তিনি জানান।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/২:৩৮পিএম/৬/২/২০১৯ইং)