• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১২:০৪ অপরাহ্ন

বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও মানবতার অপমৃত্যু


প্রকাশের সময় : জুন ২৩, ২০২০, ১১:৪৮ PM / ৫০
বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও মানবতার অপমৃত্যু

অসীম আকাশ : মোঃ রেজোয়ান হোসেন। লাইনম্যান গ্রেড-১ হিসাবে কর্মরত আছেন বাগেরহাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে। গত ১৫-০৬-২০২০ তারিখে পটুয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে পাঠানো ৬০ জন লাইনম্যানদের মধ্যে তিনি অন্যতম একজন।

এই পর্যন্ত সব স্বাভাবিক তাইনা? আসুন এবার অস্বাভাবিক এবং অমানবিকতার কথা বলি।

করোনাচলাকালিন সময়ে রেজোয়ানের স্ত্রীকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। কারণ, রেজোয়ান বাবা হবেন। নতুন সদস্য আসছে উনার ঘরে এবং এটাই উনার প্রথম সন্তান। স্বাভাবিকভাবেই মন-মনন এবং স্বপ্নের সবটা জুড়ে রয়েছে সেই নতুন অতিথি। সন্তান যেদিন পৃথিবীতে আসবে কতৃপক্ষের কাছে ছুটি চেয়েছেন তিনি। কতৃপক্ষ জানালেন- “করোনার ভিতরে যাওয়ার দরকার নেই, স্বাভাবিক হলে যাবেন।” একথা মেনে নিলেন রেজোয়ান। পৃথিবীতে আগমন হলো সন্তানের, খুশি রাখার যায়গা নেই রেজোয়ানের। কিছুদিন পর সন্তান অসুস্থ হলো। কতৃপক্ষের কাছে ছুটি চাইলেন তিনি। কতৃপক্ষ এবারও জানালেন- “করোনা পরিস্থিতিতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। যারা পাশে আছেন, তাদেরকে চিকিৎসা করাতে বলুন। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যাবেন”। বাধ্য কর্মী রেজোয়ান এবারও মেনে নিলেন কতৃপক্ষের কথা।

কিছুদিন পর ছেলেটি মারা গেল। এবার সন্তানকে বিদায় জানানোর আগে অন্তত তার মুখটি দেখতে চান রেজোয়ান। আবারও ছুটির আর্জি জানালেন। কতৃপক্ষ দুঃখ প্রকাশ করে জানালেন- “করোনার ভিতরে যাওয়া ঠিক হবেনা। এখন গেলে পরিবারের সদস্যদের করোনাক্রান্তের ঝুঁকি আছে। তাই যারা সন্তানের কাছে আছেন তাদের দাফন-কাফন করে ফেলতে বলুন এবং পরিস্থিতি স্বভাবিক হলে আপনি যাবেন।”

এবারও বাধ্য কর্মীর মত কতৃপক্ষের কথা মেনে নিলেন রেজোয়ান।

যেই করোনার অযুহাতে স্ত্রীর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, সন্তান জন্ম নেয়া, সন্তান অসুস্থ হওয়া এবং সেই প্রথম সন্তানের মৃত্যুতেও রেজোয়ানকে যেতে দেয়া হয়নি। তার ৭ দিন পরেই কিভাবে সেই করোনার মাঝেই শতভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে উনাকে দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে করোনাক্রান্ত জেলা পটুয়াখালীতে পাঠানো হলো?

কোন সিস্টেমে চাকরি করছেন আঁচ করতে পারেন? কোন নিয়মের মাঝে বাস করছেন বোধগম্য হয়? এই সিস্টেমে রেজোয়ান’রা শ্রম বিক্রি করতে এসেছে। তার পরিবার আর নিজস্ব সত্ত্বাকে বিসর্জন দিতে আসেনি।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা! একটু কি মানবিক হওয়া যেতোনা? অন্তত সন্তানের মৃত্যুর পর তাকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা যেতোনা? এতোটা অমানবিক কিভাবে হন আপনারা? অমানবিক হতে হতে আপনারা যে অমানুষ হয়ে পড়ছেন সেদিকে কি খেয়াল আছে?

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১১:৪৭পিএম/২৩/৬/২০২০ইং)