• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন

প্রশ্নফাঁস : দশ নম্বর বিপদ সংকেত


প্রকাশের সময় : জুন ১, ২০১৮, ৬:১৮ PM / ১১১
প্রশ্নফাঁস : দশ নম্বর বিপদ সংকেত

প্রিয় পাঠক , আজ আবার আপনাদের একটু বিরক্ত করতে এসেছি, একটু জাগাতে এসেছি, একটু ভাবাতে এসেছি, এসেছি একটু ঝাঁকুনি দিয়ে সম্বিৎ ফিরাতে, এসেছি এক ভয়াবহ অশনি সংকেত এর খবর দিতে, একটা বড় লজ্জার কথা বলতে, আমরা সকলে মিলে যদি এই লজ্জার কারণ না নির্মূল করতে পারি, আপনার, আমার কারো আগামী প্রজন্মকে এই বিপদের আঁচ থেকে বাঁচাতে পারবোনা, আমার এই লেখাটি কোনো প্রকার বাহবা পাওয়ার জন্য নয়, পুলিশ বা প্রশাসনের বীরত্ব গাঁথা নয়, তাই আমাদের প্রশংসা বা স্তুতিও কোনো প্রয়োজন নাই, শুধুমাত্র আপনাদের সবাইকে একটু বিপদটার ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা দেয়ার জন্যই …..

আজ প্রাইমারী স্কুল এর শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা ছিল সকাল দশটা থেকে এগারোটা পর্যন্ত, আমাদের দেশে যেকোনো পরীক্ষা মানেই , প্রশ্ন ফাঁসের আশংকা, পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতা, অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে আজকের পরীক্ষাটাও এর ব্যতিক্রম ছিলনা, যথারীতি আশংকা বাস্তবে ঘটেছে , সকালে একটি কেন্দ্রে ভিজিট করছিলাম, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর ইন্টেলিজেন্স উইং থেকে খবর পাই প্রশ্নফাঁসকারী একটা বড় চক্র কুড়িগ্রামে কাজ করছে, একটি নম্বর দেয়, কিছুক্ষন পর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা হয় এই বিষয় এ, আমরা দ্রুত দুজনেই পিটিআই, কুড়িগ্রাম পৌঁছাই , সেখানে দুজন পরীক্ষার্থী আটক করা হয়েছে, তারপর তাদের মোবাইল নম্বর , মেসেজ থেকে আমরা বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে মোট আটজন কে গ্রেফতার করি, একটি বিশাল চক্রের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে …এর চেয়ে বেশিকিছু আমি আর এখানে লিখতে পারছিনা, জেলা পুলিশ কুড়িগ্রাম এর ফেইসবুক পেজ এ এবং বিভিন্ন পত্রিকায় বিস্তারিত জানতে পারবেন ….আমি এই লেখাটার মাধ্যমে , আপনাদের পুলিশ সুপার হিসাবে, একজন শিক্ষা অনুরাগী হিসাবে সবার কাছে অনুরোধ রইলো , বিশেষ করে যারা কুড়িগ্রামবাসী আছেন তাদের বলছি , আমাদের এই জেলাটি এমনিতে শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে আছে, এর মধ্যে আবার যদি এইসব সর্বনাশা প্রশ্নফাঁসকারী চক্র কাজ করে তাহলে বলতে পারেন আপনার, আমার সন্তান কোথায় যাবে শিক্ষার জন্য ? আজ যদি এরা ধরা না পড়তো? তাহলে কি হতো ? খুব সিম্পল ,এরা কাল প্রাইমারি স্কুল এর একজন সম্মানিত শিক্ষক হতো , কে জানে হয়তো আপনার, আমার বাচ্চাকেই সে পড়াতো, কি শিখতো বাচ্চাটা তার কাছে ? এখনো যে শিখছেনা তার নিশ্চয়তাতো আমরা কেও দিতে পারিনা তাইনা ? সুতরাং আমরা কেও এই বিপদের বাহিরে নোই ! শুধু সরকার, প্রশাসন, পুলিশ এর উপর দায়ভার দিয়ে আমরা আর কতদিন ঘুমিয়ে থাকবো ? আমার কাছে এর কোনো উত্তর নেই, হয়তো আপনাদের কাছেও নেই, ফেইসবুক এর একটি পোস্ট এ আমি লিখেছিলাম এ সম্পর্কে …..দোষ যারাই করুকনা কেন , এই ব্যর্থতা যেকারো হোকনা কেন, ফলাফল এর শেয়ার কিন্তু আপনাকে, আমাকে সবাইকে নিতে হবে, তাই এভাবে আর বেশিদিন চলতে দেয়া যায়না , সামাজিকভাবে পুলিশ, প্রশাসন , জনগণ সবাই মিলে যদি এই ভয়াবহ অপরাদের মূলোৎপাটন না করি, আমাদের সামনে কঠিন বিপদ, সাউথ আফ্রিকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে লেখা আছে ….

“Destroying any nation does not require the use of atomic bombs or the use of long range missiles. It only requires lowering the quality of education and allowing cheating in the examinations by the students._”

Patients die at the hands of such doctors.Buildings collapse at the hands of such engineers.Money is lost at the hands of such economists & accountants.Humanity dies at the hands of such religious scholars. Justice is lost at the hands of such judges…

What is the moral of the text?

“The collapse of education is the collapse of the nation.”

কোনো জাতির শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা আর ওই জাতিকে ধ্বংস ….একই কথা …..

তাই , পাঠক, আমাদের প্রত্যেকের আমাদের স্ব স্ব অবস্থান থেকে কিছু না কিছু করার আছে যদি আমরা নিজেদেরকে এই দেশের একজন সুনাগরিক মনে করি , এই দেশকে, জাতিকে যদি সত্যিকারের ভালোবাসি তাহলে এখুনি জেগে উঠার সময় , নড়েচরে বসার সময় , আপনার ঘরে আগুন লাগলে আপনি কি চুপচাপ ঘরে শুয়ে থাকতে পারবেন ? পারবেন না , মনে করুন তাই হয়েছে , আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় গুটি কয়েক বিপথগামী মানুষ আগুন লাগাচ্ছে …আমাদের সবার সংখ্যার তুলনায় ওদের সংখ্যা খুবই নগন্য , এদের কাছেই আত্মসমর্পন করে আমরা এভাবে চোখের সামনে শিক্ষাকে , আমাদেরকে , আমার ভবিষ্যত প্রজন্মকে , জাতিকে ধ্বংস হতে দিতে , জ্বলেপুড়ে ছাড়খাড় হতে দিতে পারিনা ,



শিক্ষকতা , শিক্ষাদান একটি অত্যন্ত সম্মানের পেশা , কতিপয় পথভ্রষ্ট শিক্ষক, ছাত্রের জন্য এই পেশাটি অসম্মানের আঘাতে জর্জরিত , অনেক সৎ , নীতিবান শিক্ষক আজও আমাদের আছে ….তাদের তো কোনো দোষ নেই , সেইসব ভালো ছাত্রদেরতো কোনো দোষ নেই ….তবু তারা কেও এই অপবাদ থেকে মুক্ত নয় ….কেন ? আর কতদিন ? এর শেষ কোথায় ? কিছুই মাথায় আর খেলছে না …চারপাশে সবকিছু কেমনজানি ঝাপসা দেখি …দুঃস্বপ্নের সুড়ঙ্গ শেষে কোনো আশার আলো জ্বলছে কিনা তাও তো কেও বলতে পারছিনা আমরা কেও ….আলো থাকুক বা না থাকুক , আমাদের কিন্তু প্রবাহমান সময়ের সাথে সামনে এগিয়ে যেতেই হচ্ছে , হবে ….সরকার , জনগণ আমরা সবাই যখন মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়ার আনন্দ করছি ঠিক তখনি শিক্ষাক্ষেত্রে এই ঘটনা কেনজানি আমাকে ছোটবেলার পাটিগণিতের বানরের তৈলাক্ত বাঁশে ওঠার কথা মনে করিয়ে দিলো …মজার ঘটনা হলো পাটিগণিতে বানর উঠানামা করতে করতে একসময় বাঁশের মাথায় ঠিকই উঠতে পারে , কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার এই অবস্থা ,আমরা প্রতিবার যতটুকু উঠবো , তার চেয়ে বেশি নিচে নামিয়ে দিবে, এভাবে চলতে থাকলে বাঁশের মাথায় আমাদের আর কোনোদিন উঠা হবেনা ….এভাবে চলতে পারেনা আর …..

তদন্ত , জিজ্ঞাসাবাদ চলছে , কিছু না করলেও কমপক্ষে এই রমজান মাসে একটু দোয়াতো আপনারা করতেই পারেন …যেন আমরা এর শেকড়সহ উপরে ফেলতে পারি ….সকল গ্যাং কে আইনের কাঠগড়ায় আনতে পারি ….প্রিয় কুড়িগ্রামবাসি আপনারা যারা এই পোস্ট টি কষ্ট করে পড়লেন ..তাদের কাছে এই সম্পকিত কোন তথ্য থাকলে নিরভয়ে দিন। মেহেদুল করিম,, এস পি কুড়িগ্রাম।