• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:২২ অপরাহ্ন

প্রবাসে কেমন আছে নারী রেমিটেন্স যোদ্ধারা?


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ২২, ২০১৯, ১১:৫৬ PM / ২৯
প্রবাসে কেমন আছে নারী রেমিটেন্স যোদ্ধারা?

সৌদি থেকে সবুজ আহমেদ : বিশ্বের বৃহত তেল উৎপাদনকারি রাষ্ট্র সৌদি মধ্যপ্রাচ্যেরও মধ্যমণি।আরব দেশসমূহের অভিবাবকতুল্য স্বর্ণ সমৃদ্ধ দাপুটে দেশ সৌদি আরব।পবিত্র কাবা মক্কা এবং মহানবীর দেশ সোনার মদীনা হিসাবে পরিচিতি রয়েছে দুনিয়াজুড়ে। একক দেশ হিসাবে সবচেয়ে বেশি অভিবাসী বাংলাদেশি বসবাস করে দেশটিতে এবংশ্রমিক রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানোতে দেশটি রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে শীর্ষে।যা শুনে অনেকের ছানাবড় চোখ হওয়ার উপক্রম।কেননা সৌদি পাশবর্তী দেশ কুয়েতের নিজ দেশের জনসংখ্যা ৩৩ লাখেরও কম।অথচ সরকারী ও বেসরকারী তথ্য মতে ৩৩ হতে ৩৫ লাখ বাংলাদেশী বসবাস করছে সৌদিতে নির্বিঘ্নে।শ্রমের বিনীময়ে বৃহত এ জনগোষ্ঠির কর্ম এবং রিজিক দেশটি বহন করে।বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি পাল্টাতে যা বড় এক নিয়ামক শক্তি হিসাবে কাজ করে।নিঃসন্দেহে প্রবাসী শ্রমিকেরা নিজ উদোগ্যে নিজ অর্থ খরচিয়ে নিজেদের ভাগ্যবদল করতে দেশটিতে আসে,সাথে সয়ংক্রিয়ভাবে বদলে দেয় নিজ দেশের রিজার্ভ ফান্ড।পরাধীন পরিবেশে থেকে ঘামঝরা খাটুনি খেটে সকল ধকল সয়ে স্বদেশের অর্থের চাকা সচল রাখে,খেটে খাওয়া এসব বীর সেনানী শ্রমিদের কতটুকু দেখভাল করে দেশ ! এ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন আছে।বিশেষ করে ২০১১ সালে এপ্রিলে (বায়রা) ও সৌদি ন্যাশনাল রিক্রটমেন্ট কমিটির সাথে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরের নির্মিত্তে ২০১৫ হতে ২০১৮ সালে আসা ২ লাখ ২০ হাজার নারী কর্মী কেমন আছে!খোঁজ নিতে নিয়ে বেরিয়ে আসে চানচলঞ্চকর হত হৃদয়বিদারক আশাহত দৃশ্য।একই সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর ইন্দোনেশিয়া ফিলিপাইন ভারত শ্রীলংকার সাথে হলেও নারী কর্মীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সে সব দেশ নারীগৃহকর্মী দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।কোথাও কোন দেশের গৃহকর্মী না পেয়ে তখন সৌদিতে গৃহকর্মীর চাহিদা মারাত্মক আকার ধারন করে।সৌদি সরকার অল্প মুজুরি নির্ধারন করে সর্বোচ্চো ১ হাজার রিয়াল বাংলাদেশি টাকায় ২২ হাজার টাকা বিবেচনায় নিয়ে ২০১৫ সালে চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশের ১ জন নারী কর্মীর বিপরীতে ২ তিন জন পুরুষ শ্রমিক নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়।নারীকর্মীর উপর লোভনীয় টোপ পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারীকর্মী পাঠানো সুযোগ হাতছাড়া না করে ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালনাগাধ প্রায় পৌনে দুই লাখ নারী শ্রমিক সৌদিতে আসে।গত চার বছরের মধ্যে বেশি নারী গৃহকর্মী আসে ২০১৭ সালে ৮৩ হাজার ৩৫৪জন।

বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বশীলরা তোড়জোড় করে নারী শ্রমিক পাঠাতে পারলেই দায়িত্ব শেষ ভাবেন। উল্লেখিত চুক্তি অনুসারে নারীকর্মী সৌদি কফিল (স্পন্সরম্যানরা) শ্রমিকদের সে সব সুবিদা দেয়ার কথা বলে অঙ্গিকারবদ্ধ হয়েছেন,শ্রমিকেরা তা পাচ্ছে কিনা তা খতিয়ে না দেখে বরং ভুক্তভুগি শ্রমিক কর্তৃক অভিযোগ শারীরিক নিপীড়ন,যৌন হয়রানী, বেতন বৈষ্ণম,তুচ্ছ অজুহাতে মারধর, ওয়াদাবদ্ধের চাইতে বেশি ঘন্টা কাজ করানোসহ নানা অভিযোগ উঠালেও তা আমলে না নিয়ে নিরব থাকতে দেখা যায় বেশি।সামাজিক সাইড বিশেষ করে স্যোসাল মিড়িয়া জাতীয় আন্তজাতিক প্রিন্ট মাধ্যম,দেশি বিদেশী টিভিতে নির্যাতনের মাত্রা ভয়াবহতা প্রচারের পর কর্তাব্যক্তিদের টনক লড়ে,তারপর সংসদীয় কমিটি হয়, উচ্চপর্যায়ের কারগরি কমিটি সৌদি ঘুরে যান, দেখে যান,প্রেস ব্রিফিং করে উল্টো অনেকক্ষেত্রে আগবাড়িয়ে বরং দোষ চাপানোর চেষ্টা করেন শ্রমিকদের উপর।শ্রমিকেরা ভাষা জানেনা,খাবার পছন্দ না,পরিবেশ ভালো না লাগা,স্বদেশে নিজ ঘর পরিবার রেখে যাওয়া সন্তানের জন্য অতিমাত্রায় টানের কারণে নাকি নারী শ্রমিকেরা দেশে ফিরতে চান।যেসব যুক্তি সরকারীকর্তা ব্যক্তিরা দেখান আবার এসব যুক্তিকে খোঁড়া যুক্তি বলে অবিহীত করলেন অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা মহিলা শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশন (বামসা)।নাম প্রকাশে অনিহা উক্ত সংস্থার একজন নারী কর্মকর্তা সৌদিতে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফেরত নাসিমা আক্তার(৪০)ফরিদপুর এবং ফাহিমা আক্তার (২৩)পটুয়াখালী এই দুই জেলার দুটি নারীর চিত্র তুলে ধরেন।তার মতে সাধারণত চারটি কারণে নারী শ্রমিকেরা দেশে চলে আসতে বাধ্য হয়(ক) দুর্ব্যবহার ও নির্যাতনের শিকার(খ) ভারী ও কঠিন কাজ করানো (গ) অবসর বা ঘুমানোর সুযোগ না পাওয়া(ঘ)দেশে রেখে যাওয়া পরিবার হতে অবিছিন্ন বা দূর্বলতা।উক্ত মতের সাথে অনেকাংশে একমত পোষন করলেন অভিবাসনবিজ্ঞ ব্রাক’র শরীফুল হাসান।তার প্রতিষ্ঠানের ভাষ্যমতে ২০১৫ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে সৌদিতে পাঠানো হয়েছিলো যে নারী শ্রমিক তম্মধ্য ৩% হারে ঐ বছরই ৬০০০ নারী শ্রমিক ফেরত এসেছে।২০১৬ হতে ২০১৮ এই ৩ বছর ঠিক কতজন নারী কর্মী নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরেছে তার সঠিক সংখ্যা ব্র্যাক জানাতে পারেনি।তবে সঠিক সংখ্যা নিরুপন করা সমম্ভব না হলেও গড়ে মাসে ২শত নারী আসছে কোন না কোন ভাবে।শুধু মাত্র ২০১৮ সালে স্থানীয় গণমাধ্যম মতে ১০ হাজারেরও অধিক নারী দেশে ফিরছে । কেউ স্ব উদোগ্যে অন্য কেউ পারিবারিকভাবে ধর্ণা দেওয়ায় এজেন্সির তৎফরতায় তবে বেশির ভাগ জেদ্দা ও রিয়াদ বাংলাদেশ দূতাবাস এর সহযোগিতায় সেইফ হোম (ইমিগ্রেশন ক্যাম্প) থেকে আর কিছু সফর জেলে জেল খেটে আসছে।এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর সরওয়ার আলম জানালেন যথাসাধ্য দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন তারা, নির্যাতিত নারীদের সাধ্যমত আইগত সুযোগ সুবিদা দিচ্ছেন,সহজে দেশে পাঠাচ্ছেন, বেতন বকেয়া অপরিশোদ থাকলে উদ্দারের চেষ্টা চালিয়ে যান তবে সৎ সদিচ্ছা থাকা সত্বেও লোকবলসহ অনেক অক্ষমতার সত্যতা স্বীকার করে সীমাবদ্ধতার কথাও তিনি জানান।

 

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১১:৫৬পিএম/২২/১/২০১৯ইং)