• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৪:০৯ অপরাহ্ন

প্রতিদিন পর্নোগ্রাফি দেখেই যারা বেতন পান!


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৭, ২০১৮, ১১:১২ AM / ১৩৯
প্রতিদিন পর্নোগ্রাফি দেখেই যারা বেতন পান!

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সম্প্রতি তাদের কনটেন্ট মডারেশনের নীতিমালা প্রকাশ করেছে। ওই নীতিমালার আওতায় ঠিক করা হয়, ফেসবুকে কোন কন্টেন্টগুলো থাকবে, কোনগুলো থাকবে না। এরপর থেকেই রিভিউয়ের কঠিন কাজগুলো যারা করেন, তাদের ভূমিকা প্রকাশিত হয়েছে।

সারাহ কাট্জ নামে ফেসবুকের সাবেক এক কর্মী জানান, এটা করতে গিয়ে তাদেরকে প্রতিদিন এমন বাজে জিনিস দেখতে হতো যার বেশিরভাগই পর্নোগ্রাফি। ফলে তার ব্যক্তি জীবনে মারাত্মক প্রভাব পড়েছিল।

মূলত ফেসবুকের কিছু কর্মী এই কাজগুলো করেন যাতে বাজে জিনিসগুলো অন্যদের দেখতে না হয়। যখন কোনো ব্যবহারকারী আপত্তিকর কোনো বিষয়ে রিপোর্ট করেন, তখন তা চলে আসে জার্মানির বার্লিনে ফেসবুকের এক গোপন অফিসে। তারপর সেই কনেন্টটি রিভিউ করেন এ অফিসটির কর্মীরা। প্রতিদিন এমন হাজার হাজার ছবি বা ভিডিও যাচাই করার অনুরোধ আসে। বার্লিনের ওই অফিসে এসব ভিডিও বা ছবি যাচাইয়ের কাজ করতেন সারাহ কাটজ।

ওই অফিসে কাজ করতেন এমন আরেকজন কর্মী বলেন, ‘আমাকে রোজ কাঁদতে হতো। ফেসবুকে বোধহয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ এটা – আর সবচেয়ে খারাপও, কিন্তু কারও যেন সেটা নিয়ে মাথাব্যথা নেই।’

ওই কর্মী আরও বলেন, ‘রোজ অসম্ভব সব খারাপ ও যন্ত্রণাদায়ক জিনিস দেখতে হত … মাথা কেটে ফেলা, চাইল্ড পর্নোগ্রাফি, পশুদের ওপর নির্যাতনসহ নানা কিছু। একটা যেন যন্ত্রের মতো হয়ে গিয়েছিলাম – ওগুলো দেখে আঙুলের একটা ক্লিকে ঠিক করতে হতো জিনিসটা থাকবে কি থাকবে না।’

সারা কাটজ নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই, চাইল্ড পর্নোগ্রাফিটাই সবচেয়ে খারাপ- কারণ ছমাসের শিশুকে ধর্ষণ করার দৃশ্যও দেখতে হয়েছে। এ ছাড়া সন্ত্রাসবাদও আছে … জঙ্গী হামলা ও নৃশংসতার বহু রক্তাক্ত ঘটনাও দেখতে হয়েছে।’

কনটেন্ট রিভিউয়ের কাজ মানসিক সুস্থতা ও স্থিতিশীলতার ওপর সাংঘাতিক প্রভাব ফেলেছিল দাবি করে সারাহ কাটেজ আরও বলেন, ‘বেশ কয়েকবার আমি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখেছি। একবার তো দেখেছিলাম একটা উঁচু বিল্ডিং থেকে কেন জানি না লোকজন লাফিয়ে পড়ছে আর তাদের বাঁচানোর বদলে লোকজন ছবি তুলছে, ভিডিও করছে। আমি একটা বাচ্চা মেয়েকে ধরে ফেললাম, কাঁদতে কাঁদতে ঘুম ভেঙে গেল … চারদিকে রক্ত, তবু কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না – শুধু ভিডিও তুলে যাচ্ছে!’

সারাহ অভিযোগ করেন, ‘এই গভীর মানসিক সঙ্কটের সময় ফেসবুকও সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।’

কর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে ফেসবুক প্রোডাক্ট পলিসির প্রধান মনিকা বিকার্টের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কাজটা কঠিন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমি বলব রিভিউয়াররা যে ধরনের জিনিসপত্র দেখেন, এই ধরনের গ্রাফিক কনটেন্ট তার খুবই সামান্য একটা অংশ। আর ক্রমশ আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছি, যাতে কেউ ফেসবুকে এই ধরনের জিনিস আপলোড করলে তা যাতে নিজে থেকেই রিভিউ করে সরিয়ে দেওয়া যায়।’

কর্মীদের সাহায্য করা হয় না, সেই অভিযোগ মোটেও ঠিক নয় দাবি করে মনিকা আরও বলেন, ‘কাজটা কঠিন ঠিকই- কিন্তু সেটা ঠিকমতো করার জন্য যা দরকার, কর্মীদের সেটা দিতেও কিন্তু আমরা দায়বদ্ধ। তারা যদি কাজে কখনো অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, তাদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়- অন্য ধরনের কনটেন্টের কাজেও তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। ফেসবুক কমিউনিটিকে যেমন, তেমনি আমাদের কর্মীদেরও নিরাপদ ও সুস্থ রাখাটা কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।’

সারা কাটজের সঙ্গে কখনো মার্ক জাকারবার্গের দেখা হয়নি।

কিন্তু কাটেজ বহুদিন ভেবেছেন, মার্ক জাকারবার্গ যদি কখনো এ অফিসে আসেন তবে তাকে জিজ্ঞেস করবেন, ‘আমাদের মতো ছেলেমেয়েদের কেন এই সব দেখতে আপনি বাধ্য করছেন? আমরা কি মানুষ নই?’ (সূত্র : বিবিসি বাংলা)

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১১:০৮এএম/২৭/৪/২০১৮ইং)