• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১২:৪১ অপরাহ্ন

পুলিশকে গালি দেয়ার আগে…


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ৯, ২০১৮, ১২:২৫ AM / ৪০
পুলিশকে গালি দেয়ার আগে…

হুমায়ুন আহমেদ সৃজন : শয়নে স্বপনে, ধ্যানে জাগরণে, কারনে অকারনে বা তুচ্ছ কারনে বাংলাদেশে পুলিশকে গালি দেয়া এখন অনেকেরই নিয়মিত স্বভাবে পরিণত হয়েছে। এমন কোন বাজে বিশেষণ নেই যেই বিশেষণে পুলিশকে বিশেষায়িত করা হচ্ছেনা এমনকি যত ধরণের গালিগালাজ আছে তার সবটাই সর্বোচ্চ মাত্রায় ব্যবহার করা হচ্ছে পুলিশের বিরুদ্ধে। পাশাপাশি পুলিশের বাবা-মা’সহ ১৪ গোষ্ঠীও উদ্ধার করে ছাড়ছেন কেউ কেউ। প্রেক্ষাপট এতোটাই মারাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে যে এই বিষয়ে লিখতে একপ্রকার বাধ্য হচ্ছি।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও জনগনের জান-মালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত সদা সর্বদা নিবেদিত বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি পর্যায়ের প্রতিটি সদস্য অথচ দিনশেষে তারাই সবচাইতে বেশি সমালোচিত। পুলিশের সমালোচনার বিষয় আসলে প্রথমেই যে কথাটি সর্বাধিক উচ্চারিত হয় তা হলো ঘুষ। মনে করুন আপনি মটরবাইক নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছেন কিন্তু আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। এমতাবস্থায় ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা আপনার বাইক দাড় করালো এবং আপনার থেকে লাইসেন্স দেখতে চাইলো, তখন আপনি কি করবেন? আপনি জানেন আপনার লাইসেন্স নেই সুতরাং প্রচলিত আইনে আপনার বিরুদ্ধে মামলা হবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু আপনি সেই ঝামেলায় না গিয়ে কিছু টাকার বিনিময়ে আপাতত ছাড়া পেতে চাইবেন, টাকা নিতে জোরাজোরি করবেন, একে ওকে দিয়ে সুপারিশ করানোর চেষ্টা করবেন আর ওই কর্মকর্তাও অগত্যা আপনাকে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিলেন, তারপর? আপনি কিন্তু এরপর থেকে পুলিশকে ঘুষখোর বলে সমালোচনা করবেন কিন্তু আপনি নিজে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া বাইক চালানো অন্যায় জেনেও তা করবেন সেটা কিছুনা কিন্তু এটা ভেবে দেখেছেন একবারও যে আপনার অন্যায়ের কারনেই ওই কর্মকর্তা সুযোগ পেয়েছিলেন টাকাটা নিতে। আপনার যদি ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতো তাহলে কি ওই কর্মকর্তা ঘুষ নেবার সুযোগ পেতো বা তারপরে আপনি পুলিশকে ঘুষখোর বলে গালি দেবার সুযোগ পেতেন? বলে রাখা ভালো ট্রাফিক পুলিশের বেশিরভাগ কর্মকর্তাকেই কিন্তু আপনি টাকা ঘুষ দিয়ে ম্যানেজ করতে পারবেন না কারন সেখানে ভালোর সংখ্যাই বেশি। সম্প্রতি অবসরে যাবেন এমন একজন ট্রাফিক পুলিশকে নিয়ে একটি টিভি চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো আর সেখানে আমরা সবাই দেখেছি উনি সারাজীবন পুলিশে চাকরী করেও বাড়ি ভিটার বাইরে উনার কোন ব্যাংক ব্যালেন্স নেই। আপনারা যে কথায় কথায় সকল পুলিশকে ঘুষখোর বলছেন তাহলে ওই পুলিশের ঘুষের টাকাগুলি কোথায়?
পুলিশের বিরুদ্ধে আরেকটি বড় অভিযোগ হলো থানায় টাকার বিনিময়ে আসামীকে ছেড়ে দেয়া হয়। অথচ মাস দু’য়েক আগে যখন আমাকে একটি মিথ্যা অভিযোগে আটক করলো পুলিশ তখন সেই পুলিশ অফিসার, সংশ্লিষ্ট থানার ডিউটি অফিসার, অফিসার ইনচার্জ সহ অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা আমার প্রতি যে আন্তরিকতা দেখিয়েছিলেন তাতে আমি নিজেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি সম্পুর্ন মিথ্যা বুঝতে পারার পর তারা আমাকে কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে উল্টো মিথ্যা অভিযোগের জন্য বাদীকেই আটকে দিয়েছিলেন। আর এটা দেখার পর পুলিশের প্রতি আমার নিজের দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে গিয়েছিলো যেকারনে তারপর আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলাম। একটা টাকা নেয়াতো দূরের কথা বরং উচ্চস্বরে একটা কথাও বলেননি কর্মরত একজনও বরং যথেষ্ট সম্মান দিয়েছেন তারা।
এরকম হাজারটা অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে করতে পারবেন আপনি বা আপনারা কিন্তু আপনাদের নিজেদের কাছেই প্রশ্ন করছি যে অভিযোগগুলি আপনারা করবেন বা করছেন তার কয় শতাংশ আপনাদের সাথে ঘটেছে বা উনারা ঘটিয়েছেন? নিজেদের জীবনকে বিপন্ন করে ২৪ ঘন্টা আমার আপনার নিরাপত্তার জন্য যারা পরিশ্রম করছে; জঙ্গিবাদ, মাদকসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ নির্মুলের মাধ্যমে যারা আমাদের সমাজকে অপরাধের ছোবল থেকে মুক্ত করতে অবিরত লড়াই করে যাচ্ছেন তাদেরকেই দিনশেষে আপনারা গালি দিচ্ছেন, তাদের ১৪ গোষ্ঠী উদ্ধার করছেন। একবার ভাবুনতো কতখানি ঠিক করছেন আপনি বা আপনারা? খারাপ ভালো মিলিয়েই আমাদের সমাজ, আমাদের সমাজের একটা স্তরও দেখাতে পারবেন যেখানে অনিয়ম হয়না, দুর্নীতি নেই অথবা ক্ষমতার অপব্যবহার হয়না? তাহলে শুধু পুলিশকে গালি দিবেন কেন? কথা হচ্ছে অনিয়ম থাকলে তার জন্য প্রচলিত আইনে শাস্তিরও বিধান রয়েছে, প্রতিটি অপরাধের জন্য শাস্তির বিধান আমাদের সংবিধানে রয়েছে। একজন পুলিশ অফিসার অন্যায় করলে তার বিরুদ্ধে আপনার অভিযোগ করার সুযোগ রয়েছে, এরপর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অপরাধ প্রমানিত হলে উনি শাস্তি পাবেন এটাও খুব স্বাভাবিক। আজকে পুলিশকে যে ধরণের নোংরা ভাষায় আক্রমন করা হচ্ছে, যে ধরণের গালিগালাজ করা হচ্ছে তা খুবই দুঃখজনক, অনভিপ্রেত এবং কোনভাবেই মেনে নেয়ার মত না। একটি সভ্য সমাজে পুলিশের বিরুদ্ধে এই গালিগালাজ কখনোই গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা।
পুলিশে কর্মরত কেউ কেউ যে অন্যায় করেননা তাও কিন্তু না, কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু সময় কিছু পুলিশের সদস্যদের অতি উৎসাহী  কার্যকলাপের খবরাখবর প্রকাশিত হয়, কিছু পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেবার অভিযোগ পাওয়া যায় কিন্তু তা সংখ্যায় খুব কম। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমান পেলে তাদেরকে শাস্তির আওতায়ও নিয়ে আসা হয়। পুলিশে হাতে গোনা অল্প কিছু সদস্যের অনিয়ম, দুর্নীতি বা অন্যায়ের জন্য আজকে সমগ্র পুলিশ বাহিনীকে গালিগালজ করা হচ্ছে, তাদের সমস্ত অর্জনকে পাশ কাটিয়ে ওই এক দুটা অন্যায়ের ঘটনাকেই ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে রঙ মাখিয়ে পরিবেশন করা হচ্ছে কিন্তু কেন? পুলিশ কি ভালো কাজ করছেনা? পুলিশের ভালো কাজগুলি নিয়ে কয়জন কথা বলছেন আপনারা?
পুলিশকে গালি দেবার আগে দয়া করে একবার ভাবুন, বারবার ভাবুন- আপনার আমার স্বাভাবিক নিরাপদ জীবন যাপনের বিপরীতে তাদের অবদান কতখানি, একবার ভাবুন আপনাদের এই ধরনের গালিগালাজের জন্য তারা কতোটা কষ্ট পেতে পারেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা কতখানি অপমান বোধ করতে পারেন। ভাবুন একবার আপনাদের এই ধরণের নেতিবাচক কর্মকান্ড তাদেরকে একটু হলেও নিরুৎসাহিত করতে পারে, সমালোচনা করতে হয় তাও করুন কিন্তু সেটা উপযুক্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে, যৌক্তিক সমালোচনা করুন তাতে সবার ভালো। সমালোচনা করতে গিয়ে অপপ্রচার থেকে বিরত থাকুন, গালিগালাজ তো প্রশ্নই আসেনা, পুলিশ জনগনের বন্ধু, তাদের সাথে বন্ধুসুলভ আচরন করুন তারপর দেখুন প্রেক্ষাপট বদলে যাবে, তারাও আপনার সাথে বন্ধুসুলভ আচরনটাই করবে।
আমি জানি এই লেখা প্রকাশিত হবার পর আপনাদের অনেকেই আমাকে পর্যন্ত গালিগালাজ করবেন, এটা জেনেও আমি লিখছি কারন পুলিশকে নিয়ে আপনারা নোংরা গালিগালাজের যে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তা কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। পুলিশ মানেই গালি দেয়ার বস্তু বা পুলিশ মানেই খারাপ এই নেতিবাচক ধ্যান ধারনা থেকে সকলের বের হয়ে আসা জরুরি। যত দ্রুত তা হবে সমাজের জন্য ততোটাই কল্যাণকর ফলাফল বয়ে নিয়ে আসবে। নেতিবাচকভাবে নয় চলুন ইতিবাচকভাবে বাংলাদেশ পুলিশের ভালো কাজগুলি বিশ্লেষণ করি, সবার মাঝে তুলে ধরি, দু’একজন পুলিশের খারাপ কাজের জন্য সম্পুর্ন বাহিনীর উপর দায় চাপানো বা তাদের সমস্ত অর্জন প্রশ্নবিদ্ধ হয় তা থেকে বিরত থাকি, ধন্যবাদ।
লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ সৃজন,
সংবাদকর্মী, অনলাইন ও সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট।
মোবাইলঃ ০১৭১৯২০৮৩৪০,
ই-মেইলঃ nirobota4humayun@gmail.com

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১২:২৫এএম/৯/৮/২০১৮ইং)