• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন

পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের ৩৯তম বার্ষিক অধিবেশন সমাপ্ত


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৯, ২০২৪, ১০:৫১ PM / ২৩৬
পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের ৩৯তম বার্ষিক অধিবেশন সমাপ্ত

কলকাতা প্রতিনিধি : নিউব্যারাকপুর আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজে অনুষ্ঠিত পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের ৩৯ তম বার্ষিক অধিবেশন সমাপ্ত হয়েছে ১৪জানুয়ারি। গত ১২জানুয়ারি আন্তর্জাতিক এই অধিবেশনের সূচনা হয় পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক রাজকুমার কোঠারী, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সৈয়দ রফি আহমেদ, কলেজের সভাপতি ড. নিখিল হালদার, ইতিহাস সংসদের সভাপতি অধ্যাপক অরুণ বন্দোপাধ্যায়,
সহ সভাপতি অধ্যাপক সুস্নাত দাশ, সম্পাদক অধ্যাপক আশীষ কুমার দাস, যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক মহীতোষ গায়েন ও অধ্যাপক বিমান সমাদ্দারের উপস্থিতিতে।

অধিবেশনের প্রথম দিন অর্থাৎ ১২জানুয়ারি প্রধান অতিথি ও সভাপতির ভাষণের পর বিগত অধিবেশনে বিভিন্ন বিভাগে পঠিত নির্বাচিত ১০৪টি প্রবন্ধ সমূহের সংকলন ‘ইতিহাস অনুসন্ধান -৩৭’-এ প্রকাশিত হয়। ৩৮তম অধিবেশনে পঠিত এবং ‘ইতিহাস অনুসন্ধান -৩৭’-এ প্রকাশিত প্রবন্ধগুলির মধ্য থেকে এবার ইন্দ্রানী রায় স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন মাল্যবান চট্টপাধ্যায়, কৃষ্ণ কুমার সরকার, শঙ্কর দেব মাইতি। গৌতম চট্টোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন মো: মোরশেদুল আলম। রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন অনিরুদ্ধ ঘটক, ধনঞ্জয় দাশ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন নিমাই মুর্মু,। মঞ্জু চট্টপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন সঙ্গীতা কোলে। সব্যসাচী ভট্টাচার্য স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন মিলি সাহা পোদ্দার। অনিরুদ্ধ রায় স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন সুতপা ভট্টাচার্য। নলিনী প্রভা ঘোষ স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন বুবাই জানা। বিষ্ণুপদ দাস স্মৃতি পুরস্কার অন্তরা বেরা ও ঋত্বিক বিশ্বাস। সুবাসসিঞ্চন রায় স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছেন শ্রাবন্তী কাঞ্জিলাল এবং সায়ন্তনী ভট্টাচার্য পুরস্কার পেয়েছেন অর্ণব চ্যাটার্জী।

অধিবেশনে মূল নিবন্ধকারের ভাষণ দেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমর ফারুকি, তার ভাষণে উঠে আসে ভুয়ো ইতিহাস ও সোস্যাল মিডিয়ার হাত ধরে সেই ইতিহাসকে জনমনে প্রভাব বৃদ্ধির ভয়ঙ্কর প্রবণতার কথা। এরপর বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে ভাষণ দেন, প্ৰাচীন ভারতে অধ্যাপিকা সায়ন্তনী পাল, মধ্যযুগীয় ভারতে অধ্যাপিকা সাফুরা রাজেক, আধুনিক ভারতে সুভাষ চন্দ্র সেন। ভারত বহির্ভূত অন্যান্য দেশ বিভাগে ভাষণ দেন অধ্যাপক কিংশুক চট্টোপাধ্যায়। প্রত্যেকের ভাষণে প্রকাশ পায় বাংলা ভাষায় ধর্ম নিরপেক্ষ ইতিহাস এবং রাজনীতির ঊর্ধ্বে থেকে সঠিক ইতিহাস চর্চার প্রচার, প্রসারে গবেষক ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান।

এবছর ইতিহাস সংসদের এক অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা
অধ্যাপক গৌতম চট্টোপাধ্যায়ের জন্মশতবর্ষ,সেই উপলক্ষ্যে এদিনের শেষ পর্বে গৌতম চট্টোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক শোভনলাল দত্ত গুপ্ত। এদিন অধ্যাপক চট্টোপাধ্যায় স্মরণে ইতিহাস সংসদ প্রকাশ করে ‘স্মরণে মননে সংগ্রামী ঐতিহাসিক গৌতম চট্টোপাধ্যায় ‘ গ্রন্থটি।
১৩জানুয়ারি অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে আগত গবেষকরা বিভিন্ন বিভাগে তাদের গবেষণা প্রবন্ধ পাঠ করেন। এদিন বেলা ৩টেয় অধ্যাপক আবদুল ওয়াহাব মাহমুদ স্মারক আলোচনা চক্র অনুষ্ঠিত হয়, আলোচনার বিষয় ছিল: “পুনর্বিবেচনার আলোকে ইতিহাস চর্চা: প্রসঙ্গ প্রাচীন ভারত “, আলোচনায় অংশ নেন অধ্যাপক নুপুর দাশগুপ্ত, কণাদ সিন্ হা ও রজত স্যান্যাল। আলোচনা চক্রে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক অরুণ বন্দোপাধ্যায়।

অধিবেশনের তৃতীয় তথা শেষ দিনে প্রথম পর্বেও
প্রথম ও দ্বিতীয় দিনের মত প্রাচীন ভারত, মধ্যযুগ, আধুনিক ভারতের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক, আন্দোলন ও সমাবেশ, আঞ্চলিক, চিন্তাচেতনা, সাংস্কৃতিক,সাহিত্যকেন্দ্রিক উপবিভাগে এবং লিঙ্গের ইতিহাস(এবার নতুন যুক্ত) ও নারী, বিজ্ঞান,প্রযুক্তি,পরিবেশ ও স্বাস্থ্য, ক্রীড়া ইতিহাস
(এবার নতুন যুক্ত) ,ভারত বহির্ভূত অন্যান্য দেশ বিভাগে
গবেষকরা তাদের গবেষণা নিবন্ধ পেশ করেন। ৩ দিনের এই অধিবেশনে বিভিন্ন দিনে ২৯৪ জন গবেষক তাদের গবেষণা নিবন্ধ পাঠ করেন।

অধিবেশনের শেষ দিনের শেষ পর্বে রীতি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয় বার্ষিক সাধারণ সভা। সভায় সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আশীষ কুমার দাস,আয় ব্যয়ের বার্ষিক হিসাব পেশ করেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সাজেদ বিশ্বাস, সাধারণ সভায় বেশ কিছু প্রস্তাব পেশ হয়। সহ সভাপতি অধ্যাপক সুস্নাত দাশ গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রস্তাব পেশ করেন। প্রস্তাবটি সমর্থিত ও গৃহীত হয়।

যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক মহীতোষ গায়েন নালন্দা সহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সংস্কার করে পুনরায় চালু এবং ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান, স্মৃতিসৌধগুলি সংরক্ষিত করার ২টি প্রস্তাব দেন, সর্মথন করেন কার্যনির্বাহী সদস্য অমিয় ঘোষ, সভায় তা গৃহীত হয়। কার্যনির্বাহী সদস্য অনুপ পল্লে জাতীয় শিক্ষানীতির অভিমুখের বিরুদ্ধে এবং ইতিহাসের গৈরিকীকরণের বিরুদ্ধে প্রস্তাব পেশ করেন, এটিও সমর্থিত ও গৃহীত হয়।

যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক বিমান সমাদ্দার ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার পর অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন সংসদের সভাপতি অধ্যাপক অরুণ বন্দোপাধ্যায়। তিন দিনের এই আন্তর্জাতিক অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও বাংলাদেশ থেকে ৩৭৫ জন গবেষক, শিক্ষক,অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ, ছাত্রছাত্রী প্রতিনিধি যোগ দেন।

বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানভিত্তিক ও দল- মত- ধর্ম নিরপেক্ষ ইতিহাস চর্চার সর্ব বৃহৎ অমোঘ পীঠস্থান পশ্চিমবঙ্গ ইতিহাস সংসদের আন্তর্জাতিক এই অধিবেশন যে সার্বিক অর্থে সফল তা নিশ্চিত করে বলা যায়।