নিজস্ব প্রতিবেদক : মোহাম্মদ আনিসুর রহমান গ্রেড-২ (ডিমোশন এরপর) দীর্ঘদিন যাবত বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বাবা-মা স্ত্রীকে নিয়ে ভালোই চলছিল তাদের সংসার জীবন। ৩ সন্তানের জনক আনিসুর রহমান এর বড় ছেলে ঢাকা আহসান হাবীব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, মেয়ে ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী এবং ছোট ছেলের বয়স প্রায় ১৪ মাস। পারিবারিকভাবেই তার দায়িত্বটা একটু বেশি হয়ে ওঠে। পরিবারের সকলের ভরণপোষণ, সন্তানাদির লেখাপড়ার খরচ চালানো তার পক্ষে কষ্টকর হয়ে ওঠে। তবুও পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে চলছিলেন তিনি। তবুও যখন তার পক্ষে সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে যায় এবং তার স্ত্রী রোড এক্সিডেন্ট এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় তখন বাধ্য হয়ে ঋণ গ্রহণ করে জীবন চালাচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় আনিসুর রহমান তাঁর কর্মস্থল বগুড়া পবিস-২ এ হাউজ লোনের জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ তাকে লোন না দিয়ে বাইরে থেকে কিছু টাকা ঋণ নেওয়ার অপরাধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাকে প্রথমে সাময়িক বরখাস্ত এবং পরবর্তীতে ইনক্রিমেন্ট হেলথ আপ পূর্বক ডিমোশন দিয়ে আর্থিক ক্ষতিসাধন সহ মানসিক চিন্তা বাড়িয়ে দেয় এবং কর্তৃপক্ষ তাকে কথায় কথায় কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান ও গালিগালাজ সহ নানা ধরনের মানসিক অত্যাচার শুরু করে। অভিমানে এক সময় চাকরি হতে অব্যাহতি প্রদানের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট পত্র প্রদান করেন। কর্তৃপক্ষ অব্যাহতিপত্র গ্রহণ না করায় এমতাবস্তায় মানসিক চাপ ও চিন্তার সম্মুখীন হয়ে চলে যায় তার গ্রামের বাড়িতে নিজের শেষ সম্বল ভিটেমাটি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়ে।
এদিকে ভিটেমাটি বিক্রি করতে তার মা অমত পোষণ করে এবং ছেলের করুণ অবস্থা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আনিসুর তার মায়ের কান্না সহ্য করতে না পেরে ফিরে আসেন তার কর্মস্থলে।
যোগ দিয়ে পুনরায় ৪ জুলাই শনিবার উক্ত পবিসের ম্যানেজমেন্ট এর কাছে স্ত্রী সহ হাত পাতেন হাউজ লোনের জন্য। কিন্তু এবারও মুখের উপর না করে দেন ম্যানেজমেন্ট। আনিসুর হতাশাগ্রস্ত ও মানসিক দুশ্চিন্তা নিয়ে ফিরে যায় তার পরিবারের কাছে। সেদিন দিবাগত রাত ২টার দিকে অধিক টেনশন ও মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে স্ট্রোক করেন তিনি।
কিন্তু অসুস্থ হওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হলে অফিসের কোনো লোক যেন সহযোগিতা বা তাকে দেখতে না যায় এ ব্যাপারে অফিস প্রধান (ডিজিএম) সকল কর্মচারীদের নির্দেশ দেন বলে একটি সূত্র থেকে জানা গেছে।
এদিকে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে থাকা অসহায় আনিসুর রহমানকে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার সহযোগিতায় প্রথমে শেরপুর হাসপাতাল এবং পরবর্তীতে জিয়া মেডিকেল কলেজ বগুড়া গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন জানান, পল্লী বিদ্যুতে থাকা শুধু এতেই ক্ষান্ত হয়নি পল্লী বিদ্যুৎ কতৃপক্ষ। তার লাশ পর্যন্ত যেনো কোনো সহকর্মী দেখতে না যায় সে বিষয়েও নির্দেশ প্রদান করেন অফিস প্রধান।
সহকর্মীদের একটাই আর্তনাদ লাশের কী দোষ? এমনকি লাশের সাথে কোনো অফিস প্রতিনিধিও পাঁঠায়নি অফিস।
অপরদিকে, উক্ত ঘটনাটিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষ উক্ত মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে প্রচারণা চালায়।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আনিসুর রহমান এর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পল্লী বিদ্যুতে কর্মরত কর্মচারী সহ পরিবারের লোকজন ফুঁসে উঠেছে। যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৭:৫২পিএম/৫/৭/২০২০ইং)
আপনার মতামত লিখুন :