• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০১:৪২ অপরাহ্ন

পথ হারাবেনা বাংলাদেশ!


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ৬, ২০১৮, ৭:১১ PM / ৮১
পথ হারাবেনা বাংলাদেশ!

ইসমেত জেরিন বিনতে নিজাম : আন্দোলন, সংগ্রামের এক গৌরবময় স্বর্ণালী অতীত আছে এ ভূখণ্ডের। অথচ স্বাধীনতার চার দশক পরে কিছু যৌক্তিক,স্বতস্ফূর্ত আন্দোনলের অনাকাঙ্ক্ষিত করুণ পরিণতি প্রত্যক্ষ করলাম আমরা।

আমার ক্ষুদ্র বোধ মোটাদাগে চারটি কারণ চিহ্নিত করে:
-আমাদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব।
-প্রতিবাদের ভাষা।
-সময়মত আন্দোলনের পরিসমাপ্তি টানতে না পারার ব্যর্থতা।
-বুমেরাং গুজব।

আমি একজন গর্বিত আওয়ামী সমর্থক কিন্তু দলকানা নই এবং একইসাথে পরমতসহিষ্ণু।

কেবলমাত্র জাতির জনকের কন্যা হিসেবে না, একজন শিক্ষিত, দৃঢ়চেতা, ক্ষুরধার দূরদৃষ্টির রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে আমি শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা চলমান নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের অন্যকোন জননন্দিত সমাধান তিনি দিতে পারতেন কিনা-এ প্রশ্নের উত্তরে দ্বিতীয় ভাবনার অবকাশ রয়েছে।

আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমি ছাত্রলীগের সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম।তাই বলে আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই দেশব্যাপী ছাত্রলীগের সমসাময়িক নেতৃত্ব,তাদের ভাষাজ্ঞান, জানার পরিধি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, রাজনীতির ধরণ কোন কিছু নিয়েই খুব একটা গর্ব হয় না কেবল অতীতের কথা স্মরণ করে আফসোস হয়। ভেবে কূল পাই না-যে ছাত্রলীগ মুজিব, তাজউদ্দীন, নজরুলের মত বলিষ্ঠ, যৌক্তিক, জনবান্ধব নেতৃত্বের সূতিকাগার ছিল সেই ছাত্রলীগ গত কয়েক দশকে আর কোন অনুকরণীয় নেতৃত্বের জন্ম দিতে কেন ব্যর্থ হল!

অন্য ছাত্ররাজনীতির দলগুলোর অবস্থা করুণতর। বামেরা জ্ঞানপাপী ,ছাত্রদলের জন্য সমবেদনা আর শিবির আমার কাছে আলোচনার কোন টপিকই না।

ঘোলা পানির মাছ শিকারীদের সাম্প্রতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন কিংবা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে পারার সফলতা পক্ষান্তরে ছাত্রলীগের চরমতম ব্যর্থতা বৈ আর কিছুই নয়।এই যৌক্তিক আন্দোলন গুলো তো হবার কথা ছিল ছাত্রলীগের নেতৃত্বে।তাহলেই না ছাত্রলীগ তার পূর্বসূরীদের সম্মান করতে পারত।

অন্যদিকে বিরোধী দলগুলো জানেই না গণতান্ত্রিক কাঠামোতে তাদের কাজ কি! যে কোন আন্দোলনকে সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ দেবার নীলনকশা না করে জনগণের চাহিদার সাথে একাত্মতা ঘোষণা করলে যে ক্ষমতায় আসতে নীলনকশা লাগে না তা তারা ভুলে গেছেন।

প্রতিবাদের সফলতা যে প্রতিবাদের ভাষায় তার প্রমাণ খুজতে তো আমাদের শতাব্দী পেছনে যাবার প্রয়োজন নেই। ‘৫২ ,’৬৬ ,৭১ তো অতীতের গর্ভে বিলীন হয়ে যায় নি?কোটা সংস্কার আন্দোলনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদেরকে কটাক্ষ করে বিদ্রুপাত্মক কিংবা নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে রাষ্ট্রের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের চরমতম অপমানকরে লেখা পোস্টার গুলোকে যারা বাহবা দিয়েছেন তাদের জন্য করুণা হয়!

আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এই ভালবাসাবশত নিজেদের ঘাড়ে সুবিধাবাদীদের কাঠাল ভেঙে খেতে দিতে আমরা যারপরনাই উত্‍সাহী।চুষে খাওয়ার চকলেট কামড়ে খাওয়া এ জাতির ধৈর্য্য নেই বললেই চলে। ঠিক কখন ঘরে ফিরে গেলে, আরেক ফাল্গুনে দ্বিগুণ হয়ে ফেরত আসা যায় তা ভেবে দেখবার অবসর হয় না আমাদের অতি উত্‍সাহের তোড়ে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জ্বালা হয়েছে দ্রুততম সময়ে ক্ষুদ্রতম গুজবটিকে আবেগী জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া। আর এই লাইক কমেন্ট শেয়ারের বন্যায় কখন যে মিথ্যা সত্য হয় আর সত্য মিথ্যা তা বোঝা বড়ই মুশকিল!

মিথ্যার মেঘ সরে সত্যসূর্য্য উদিত হলে আমরা অনেকেই হয়ত বিব্রত হব কিন্তু নতুন প্রজন্ম যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেল তাতে দলমত নির্বিশেষে আমরা আশাবাদী হয়েছি এ কথা অনস্বীকার্য।এই কদিনে আমার প্রাপ্তি এই ছবিগুলো, বাকি যা কিছু তা ম্লান হোক এগুলোর শক্তিতে। যখন এদের কাঁধে দেশ, পথ হারাবেনা বাংলাদেশ।

লেখক : ইসমেত জেরিন বিনতে নিজাম, সাংস্কৃতিক কর্মী।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৭:১০পিএম/৬/৮/২০১৮ইং)