• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:১৫ অপরাহ্ন

নির্যাতিত শিশু আশামনির দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৫, ২০১৯, ১১:০৭ AM / ৩২
নির্যাতিত শিশু আশামনির দায়িত্ব নিলেন জেলা প্রশাসক

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : জন্মদাতা পিতার হাতে নির্দয় নির্যাতনের শিকার শিশু আশামনির খোঁজখবর নিতে উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন। বুধবার বিকালে তিনি সিভিল সার্জন ডা. এস.এম আমিনুল আসলাম, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি এড. আহসান হাবীব নীলু, উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র সরকার, সাংবাদিক পরিমল মজুমদারকে সাথে নিয়ে আশামনির সার্বিক খোঁজ খবর নেন এবং নগদ অর্থ, নতুন জামা কাপড়সহ উন্নত চিকিৎসার জন্য সব দায়িত্ব নেন। একই সঙ্গে নির্যাতনের শিকার শিশু আশামনির নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সঠিক এবং নিরাপদ অভিভাবকের হাতে তুলে দেয়ারও প্রতিশ্রুতিদেন। ব্যাপক আলোচিত শিশু আশামনির নির্যাতরে ঘটনাটি শুধু উলিপুরে নয় কুড়িগ্রাম জেলা শহরেও এখন টক অব দ্যা টাউন।
কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার শিশু নির্যাতনের ঘটনাটি বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিষয়টি জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি গোচর হয়। নির্যাতনের ঘটনায় পাষন্ড বাবা আশরাফুল আলমের বিরুদ্ধে শিশুটির পালিত বাবা ইদ্রিস আলী শিশু আইনে উলিপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আশরাফুল আলমকে গ্রেপ্তার করে বুধবার আদালতের মাধ্যমে জেল-হাজতে প্রেরণ করে।
উল্লেখ্য, জেলার উলিপুর উপজেলার ধরনীবাড়ি ইউনিয়নের মাদারটারি গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র আশরাফুল আলম ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগম কন্যা সন্তান আশামনি (৪) কে প্রতিনিয়ত কারনে-অকারনে শারীরিক নির্যাতন করত। এরই এক পর্যায়ে গত সোমবার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিশুটির উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। শিশুটি গুরুত্বর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে এলাকাবাসী শিশুটি উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে এবং পাষন্ড বাবা-মাকে আটক করে পুলিশে খবর দেয়। পরে পুলিশ শিশুটির বাবাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
ইদ্রিস আলী জানান, শিশুটিকে তাঁর বাবা-মা ৪০দিন বয়সে তাঁর স্ত্রীর কাছে রেখে ঢাকায় গার্মেন্টেসে কাজে যায়। টানা সাড়ে ৩ বছর এই শিশুটিকে তারা লালন-পালন করে। ছয় মাস আগে তারা বাড়ীতে ফিরে এসে তারা শিশুটিকে নিয়ে যায়। কিন্তু অবোধ এই শিশুটি আমাদেরকেই বাবা-মা হিসেবে জানতো ও ডাকতো। প্রকৃত বাবা-মায়ের কাছে গেলেও তাদেরকে বাবা-মা বলে ডাকতো না। আমাদের কাছে আসার জন্য পীড়াপিড়ি করতো। এছাড়া শিশু সুলভ ছোটখাটো দুষ্টুমিতো ছিলই। পান থেকে চুন খসলেই এই শিশুটির উপর নেমে আসত পাষবিক নির্মম নির্যাতন। খাবার না দিয়ে কখনো হাত-পা বেঁধে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে গোটা শরীরে পেটানো হতো। হাত বেঁধে পুকুরের পানিতে দাঁড় করিয়ে রাখা হতো। এমনকি মাটিতে গর্ত করেও রাখা হতো। গত সোমবারের ঘটনায় শিশুটি সজ্ঞাহীন হয়ে পরলে তাকে উলিপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
উলিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা: সুভাষ চন্দ্র সরকার জানান, শিশুটির গোটা শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন রয়েছে। এক্সরে করার পর তার ডান দিকের কলার বোনে ফাঁটল দেখা দিয়েছে। এছাড়াও শিশুটি মানসিকভাবে ট্রমায় ভুগছে। বুধবার জেলা প্রশাসক পরিদর্শন করে তার উন্নত চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে স্থান্তরের নির্দেশ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাকে শারীরিক ও মানষিক চিকিৎসার জন্য কুড়িগ্রাম হাসপাতালে প্রেরণ করা হবে।
উলিপুর থানা অফিসার ইনচার্জ মোয়াজ্জেম হোসেন জানান,খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। শিশুটিকে নির্মমভাবে প্রহার করার কারণে তার বাবাকে গ্রেফতার করা হয়। এ ঘটনায় শিশুটির মা ফাতেমা বেগমের চাচা বাদী হয়ে মামলা করেন। আশরাফুলের বিরুদ্ধে শিশু আইনের ৭০ধারায় নিয়মিত মামলা নেয়া হয়েছে এবং আসামীকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন জানান, এরকম নির্দয় বাবা-মা হতে পারে তা আশামনির শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখে বুঝতে পারলাম। আশামনির মতো একটি ফুটফুটে সদা হাস্যজ্জ্বল শিশুকে দেখলে পাষানেরও হ্নদয় গলার কথা। জেলা প্রশাসন আশামনির চিকিৎসাসহ অন্যান্য বিষয় দেখভাল করবে। একই সঙ্গে আশামনির উজ্জ্বল ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ জীবনের চিন্তা করে আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নতুন অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১১:০৪এএম/২৫/৪/২০১৯ইং)