• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৯:০৩ অপরাহ্ন

নির্ভেজাল মাপকাঠি


প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮, ২:১১ PM / ৫২
নির্ভেজাল মাপকাঠি

সাব্বির আহমেদ : পৃথিবীর নানাবিধ আবিষ্কারের মধ্যে এক বিস্ময়কর বিস্ময় দাঁড়িপাল্লা। আবিষ্কারের পরে মানুষের চোখে মুখে সেকি হাসি, দেখার মতো। ব্যবসায়িক বাজারের এতোদিনের সব সংশয় কে একেবারে নাই করে দিল এই বিস্ময়। সবকিছু পরিমাণ করা হতে লাগলো একই মাপে। ভুলেও ভুল হওয়ার আর কোন উপায় থাকলো না।

এরপর পুরো বিশ্বকে একই মাপকাঠিতে নিয়ে আসতে ১৯৬০ সালে শুরু হলো এস.আই পদ্ধতি। এরপরের গল্প তো ইতিহাস,  আর বর্তমান হলো তার বাস্তব উদাহরণ। একই মাপকাঠিতে পুরো বিশ্ব যখন তখন আর ভয় কিসের। এই ভয়টাই হয়তো করেছিলেন আদি মানুষেরা, তাইতো পুরো বিশ্বকে একই মাপকাঠিতে নিয়ে আসতে সময় লাগলো অনেকগুলো বছর।পূর্বে পরিমাপ করা হতো বিভিন্ন উপায়ে, আর এখনতো ডিজিটাল স্কেলে পরিমাপ করা যায় নিমিষেই।

বর্তমান সময়ে এমন এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে,  যার অস্তিত্ব আমাদের ইন্দ্রিয়কে স্পর্শ করবে একেবারে শেষ সীমানায়।কারণটা আমাদের মজ্জাগত। আমরা তো কোন সমস্যার আগমনী বার্তা তখনই অনুমান করি যখন সমস্যা আমাদেরকে পুরোপুরি গ্রাস করে ফেলে।ঠিক যেমনটা বর্তমানে।

আজকের বিশ্বে আমরা পরিমাপের জন্য যেসকল মাপকাঠি ব্যবহার করি সেগুলোতেই তো ভেজালের অস্তিত্ব দৃশ্যমান।যা দিয়ে পরিমাপ করা হবে, সেটাই যদি ভেজাল হয়, তাহলে ভেজালের ভেজাল নির্ণয় করবে কে?  ব্যাপারটা এমন,  যখন পুলিশই চোর তখন চোর ধরবে কে। আবার চোর ধরলেও যে তার প্রতি আস্থা রাখা যাবে তেমনটা নয়,  কারণ ওই পুলিশই তো চোর।আমি এখানে পুলিশকে ছোট করছি না, শুধুমাত্র উদাহরণ দিয়েছি।

ছেঁড়া জাল দিয়ে যদি মাছ শিকার করার ফন্দি করা হয় তাহলে দিনশেষে জালে মাছের উপস্থিতি যে ঢের হবে তা হলফ করে বলা যায়।মজা করছি না, বাস্তবতা থেকে বলছি। ছেঁড়া জাল দিয়ে যেমন মাছ ধরা যায় না, ঠিক তেমনি ভেজাল দাঁড়িপাল্লা দিয়ে ভেজাল নির্ণয়ের কৌশলও একরকম বৃথা চেষ্টা।

সময়ের গন্ডিতে সময় যেন আজ বড়ই অচেনা কোন গন্তব্যের পথে,যার পথিক আমরা সবাই।বিশ্বাস নামক শব্দের শুরুতেই এখন অবিশ্বাসের গন্ধ পাওয়া যায়।বিশ্বাস হারিয়েছে তার মুখশ্রী।

আমাদের সমাজের তথাকথিত অনেক জ্ঞানী বিজ্ঞ মানুষের মুখে এইসব বিষয়ে কথার ফুলঝুড়ি ঝরে না।তারা তো ব্যস্ত অন্যরকম মহান কাজে। আসলে তারা এইসব বিষয়ে কথা বলতে অপারগ, কারণটা নিশ্চয় আমাদের অজানা নয়।কথা বললে সর্বপ্রথম মাপকাঠিতে যে ভেজাল নির্ণয় হবে তার প্রতিচ্ছবি ওইসব তথাকথিত জ্ঞানী বিজ্ঞ মানুষ। সেইজন্যই হয়তো কখনো কথার ফুলঝুড়ি ঝড়বে না এইসব বিষয়ে। আর আমাদের মতো সাধারণ আমজনতার কথা নাহয় বাদই দিলাম, আমরাতো ভেজালের গন্ডিতে আসল নকলের সমতা সাধন করে ফেলেছি।

হাজারো প্রশ্নের মাঝে এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন হলো, বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে। আমরা সবাই যেখানে দোষী সেখানে দোষারোপ করে কাউকে আসামীর কাঁঠগড়াতে তুলতে আমরা যে বড়ই অলস তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

জয় পরাজয়ের এই পৃথিবীতে জাতি যেখানে অন্যকে পরাজিত করে মিথ্যে মুকুট আহরণে লিপ্ত,সেখানে এর থেকে বেশি আশা করাটা নিরর্থ।মাপকাঠির ভেজাল নির্ণয়ে আমাদের সফলতা অর্জনই হবে ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতি আমাদের শ্রেষ্ঠ উপহার।

লেখক : সাব্বির আহমেদ,
বায়োটেকনোলজি বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়া

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/২:১পিএম/২১/৯/২০১৮ইং)