• ঢাকা
  • সোমবার, ০৩ Jun ২০২৪, ০৪:৩৮ পূর্বাহ্ন

‘নিজেদের পুরুষ ভাবা বন্ধ করুন, মানুষ ভাবতে শিখুন’


প্রকাশের সময় : মার্চ ৮, ২০১৮, ১০:১৬ AM / ৪৫
‘নিজেদের পুরুষ ভাবা বন্ধ করুন, মানুষ ভাবতে শিখুন’

 

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : সহকর্মী নারীদের বোন ভাবা ছাড়ুন। মা, বোন, কন্যা এসব পরিবারের বাইরে কর্মস্থলে খুঁজবেন না। কর্মস্থলে কঠোর পরিশ্রম আর নিজের কর্মদক্ষতা দিয়ে যে নারী তাঁর যোগ্য অবস্থানে পৌছেছে, তাকে নিয়ন্ত্রণ করার প্রবল ইচ্ছে থাকলে তার চেয়ে যোগ্যতা ও দক্ষতা দেখান আপনার কর্মে, আচরণে নয়। কর্মস্থলে আপনি নিজেই যে নারীর অধিনস্থ কিংবা সমকক্ষ সেই নারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইবার দু:সাহস আপনারা পান কোত্থেকে? নিজেদের পুরুষ ভাবা বন্ধ করুন। মানুষ ভাবতে শিখুন। যোগ্যতার প্রমান করুন কর্মদক্ষতা দিয়ে, দুর্বল প্রাণীর মতো নিজেদের ভাই ভাই বলে চিৎকার করে নয়। যার তার সামনে নারী সহকর্মীকে সামনে পেলেই ‘আমি তোমাকে ছোট বোন মনে করে বলছি, কিছু মনে কোরো না, এসব ছাড়ো, ভালমতো চলো, বাসায় থেকে নামাজ-রোজা করো, সন্তান নাও, নারীর জন্য শুধুই সংসার……….’ হায়রে পুরুষ! অহরহ এমন কথার মুখোমুখি হোন আমাদের কর্মজীবী নারীরা। বলতে কোনো দ্বীধা নেই- আমি নিজেও এমন আচরণ পেয়ে থাকি সহকর্মী জুনিয়র/সিনিয়র/সমসাময়িক পুরুষদের থেকে। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্য হই যখন দেখি যে সময়টায় আমি প্রথম সাংবাদিকতা শুরু করেছি, সেই সময় যে ছেলেটা প্রাইমারীর দ্বিতীয় বা তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র ছিল, সেই ছেলেটা যখন বিএ/অনার্স করে এসে এক পর্যায়ে আমার অধিনস্থ হয়ে কর্মক্ষেত্রে কাজ করছে তখন ওদের কথা শুনে- ‘আপনি আমার চেয়ে বেশি বুঝেন, আপনি জানেন এসব, মেয়ে মানুষ একটু বেশি বুঝে, বুঝতে হবে মেয়ে মানুষ বলে কথা, আরে মেয়ে মানুষের মাথায় বুদ্ধি আছে নাকি’…….ওহ্ আরো কত কি। চুপ হয়ে যাই, কিচ্ছু বলিনা। কারণ, তর্কে যেয়ে লাভ নেই এসব মূর্খদের সাথে। ওদের কি দোষ। ওদের মগজতো খেয়েছে ওদের পরিবার থেকে শুরু করে এ সমাজ। যেখানে জন্মের পরই রোবটিক উপায়ে একটি ছেলেশিশুর মাইন্ড সেট করে দেয়া হয়- ‘তুই পুরুষ, তোর উপরে কেউ নেই, তুই যোগ্যতায়, দক্ষতায় যতই অধিনস্থ থাকিস্ না কেনো, উচ্চপদস্থ নারী তোর কাছে দুর্বল, অযোগ্য’। আমিতো বলব – আসলেই নারী অযোগ্য। প্রথমত ওই নারী অযোগ্য, যে নারী প্রথম এদেরকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে। ওই নারীর কোনো মগজই নেই, নয়ত এদের মতো এমন অযোগ্য ছেলেকে জন্ম দেয় কি করে? এদেরকে বুকে রেখে কি করে মমতা আর পরম যত্নে খাইয়ে পরিয়ে বড় করে পুঁথিগত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলে। যাদের ভেতরে নৈতিক শিক্ষা দিতে পারেনি বিন্দুমাত্র। যারা ছেলে সন্তানদেরকে শেখায়- ‘নারী তোমার মা, নারী তোমার বোন। অর্থাৎ পরিবারে যেভাবে তুমি তোমার মা/বোনদের(ছোট/বড়) নিয়ন্ত্রণ করো, সেভাবেই সকল স্থানে নারীকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তাদের উপর চিল্লাবে, ধমকাবে, অপমান করবে, অপদস্থ করবে। এসব তোমার জন্মগত অধিকার।’ হায়রে নারী! সমাজের কি দোষ? সন্তানের প্রথম শিক্ষক হলে তুমি। অথচ যে সন্তান তোমার থেকে প্রথম কথা বলতে শিখেছে, তাকে তোমার প্রতিই সন্মানবোধ শেখাতে পারলে না? আসলেই তুমি ব্যর্থ, দুর্বল, অযোগ্য। নিজেকে সবল ভাবতে শিখো নারী। তোমার ইচ্ছে ছাড়া একজন মানুষ এই পৃথিবীর আলো দেখতে পারে না। সুতরাং ইচ্ছে করলে তুমি সমাজটাকে বদলে দিতে পারো সন্তানের প্রতি তোমার প্রথম শিক্ষা দিয়ে। ওদেরকে তোমরা মানুষ হতে শেখাও, পুরুষ হতে শিখিও না। সমাজটাকে এভাবে ধ্বংস করে দিও না।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট, সমাজকর্মী
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১০:১০পিএম/৮/৩/২০১৮ইং)