• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৬:১২ অপরাহ্ন

নিউজিল্যান্ডে মসজিদে নৃশংসতা : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪০


প্রকাশের সময় : মার্চ ১৫, ২০১৯, ১:৪৬ PM / ২৮
নিউজিল্যান্ডে মসজিদে নৃশংসতা : নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪০

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে হামলার ঘটনায় নিহত বেড়ে ৪০ জনে দাঁড়িয়েছে। সেইসঙ্গে ২৭ জন গুরুতর আহতাবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আর্ডার্ন হতাহতের এ সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে।

শুক্রবার জুমার নামাজের সময় ক্রাইস্টচার্চের আল নুর মসজিদ এবং লিনউড এলাকায় আরেকটি মসজিদে এ হামলা চালানো হয়।

নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড বলছে, নিহতদের মধ্যে ৩০ জন হ্যাগলে পার্কের কাছের আল নুর মসজিদ এবং লিনউডের মসজিদে ১০ জন মারা গেছেন।

এক হামলাকারী অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত শেতাঙ্গ বন্দুকধারী নিরাপত্তাবাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এ ঘটনায় সর্বশেষ খবর অনুযায়ী চারজনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আটকদের তিনজন পুরুষ ও একজন নারী।

নিউজিল্যান্ড হেরাল্ড বলছে, স্বয়ংক্রিয় বন্দুকের এলোপাথারি গুলিতে ওইসব লোক নিহত হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কিছু লোক গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে।

দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা এ ঘটনাকে দেশটির ইতিহাসে ‘অন্ধকার দিন’ দিন হিসেবে অভিহিত করেছেন। এই ঘটনাকে সন্ত্রাসী হামলা উল্লেখ করে জড়িতদের খুঁজে বের করার কথাও বলেছেন তিনি। ঘটনার পর এক সংবাদ সম্মেলনে জাসিন্দা এসব কথা বলেন।
এ ঘটনায় সামজাকি যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। যেখানে দেখা যায়, এক বন্দুকধারী স্বয়ংক্রিয় বন্দুক থেকে নির্বিচার গুলি চালাচ্ছে, আর মসজিদে নামাজ পড়তে আসা লোকজন পাখির মতো ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ছে। বন্দুকধারী নিজেই নৃশংসতার ঘটনা সরাসরি প্রচার করে।

আলজাজিরা বলছে, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় এক বন্দুকধারী আল নুর নামের ওই মসজিদে ঢুকে পড়ে এবং এলোপাথারি গুলি চালায়। এ সময় মসজিদে ৫০ জনের মতো লোক ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন।

দেশটির পুলিশ বলছে, তারা পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে। ঘটনাস্থলের আশপাশের রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে লোকজনকে ঘরে নিরাপদ স্থানে থাকতে বলা হয়েছ।

পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সক্রিয় বন্দুকধারীর কারণে ক্রাইস্টচার্চে একটি গুরুতর ও নব্য পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’

এদিকে, ওই মসজিদেই নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কয়েকজন সদস্য। তারা নিরাপদে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে পেরেছেন বলে টিমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে তারা মানসিকভাবে ‘আঘাত’ পেয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী লেন পেনেহা বলেছেন, তিনি দেখেছেন কালো পোশাক পড়া একজন লোক আল নুর মসজিদে প্রবেশ করতে এবং তার পরই বেশ কিছু গুলির শব্দ শুনেছেন তিনি। ভয়ে লোকজনকে ছোটাছুটি করতেও দেখা গেছে বলেও জানান তিনি।

এমার্জেন্সি সার্ভিসের লোকজন আসার আগেই ওই বন্দুকধারী পালিয়ে যায় বলেও জানান তিনি।

পেনেহা বলেন, তিনি মসজিদে প্রবেশ করে সাহায্যের চেষ্টা করেন। ‘আমি সর্বত্র মৃত মানুষ দেখেছি’, বলেন তিনি।

আলজাজিরা বলছে, মসজিদের ভেতর রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এ ব্যক্তি বলেছেন, গুলি শুরু হলে তিনি একটি বেঞ্চের নিচে লুকিয়েছিলেন। তিনি জানান, মসজিদে প্রায় ৫০ জন লোক ছিলেন।

স্যাম ক্লার্ক নামে নিউজিল্যান্ড টিভির এক রিপোর্টার মসজিদের ভেতরের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন।

তিনি আলজাজিরাকে বলেন, একজন লোক মেশিনগান নিয়ে মসজিদে ঢোকেন এবং গুলি চালাতে থাকেন।

ক্লার্ক বলেন, ‘হেলমেটসহ কালো পোশাক পরা এক ব্যক্তি মেশিনগান নিয়ে মসজিদের পেছন দিক থেকে এসে ভেতরে প্রবেশ করে এবং প্রার্থনারত লোকদের ওপর গুলি চালাতে থাকে।’

তিনি আরো বলেন, অনেকেই মসজিদের জানালা ও দরজা দিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন, কিন্তু অনেক লোক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, এর মধ্যে অনেকে ১৬ বছরের মতো যুবকও রয়েছে।

এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এবং নিউজিল্যান্ডে মার্কিন রাষ্ট্রদূত স্কট ব্রাউন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

হামলাকারী ব্রেনটন টারান্ট যে অস্ট্রেলীয় নাগরিক সেটা নিশ্চিত করেছেন স্কট মরিসন।

ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব ওয়েলিংটনের ২০১৩ সালের এক গবেষণার বরাত দিয়ে সিএনএন বলছে, দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা মাত্র ৫০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ১ শতাংশ মাত্র। তবে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশটিতে মুসলমানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে বলেও ওই গবেষণার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১:৪৭পিএম/১৫/৩/২০১৯ইং)