• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ১২:৪৯ পূর্বাহ্ন

না’গঞ্জের ৫টি আসনে হতে পারে পুরোনো ৫ প্রার্থীর জয়


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ২৯, ২০১৮, ১২:৩৮ PM / ৩৯
না’গঞ্জের ৫টি আসনে হতে পারে পুরোনো ৫ প্রার্থীর জয়

সাইফুল্লাহ মাহমুদ টিটু, নারায়ণগঞ্জ : নারায়ণগঞ্জ জেলার সমগ্র অঞ্চল ঘুরে নির্বাচনী হালচাল পর্যবেক্ষণ করে জানা গেছে ৫টি আসনেই পুরোনোরাই আসছে ফিরে নতুন করে এমপি হয়ে। যোগ্যতা জনপ্রিয়তা প্রভাব-প্রতিপত্তি উন্নয়ন ক্ষমতা সর্বদিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন তাঁরা। আর রাজনৈতিক অবস্থান, প্রচার-প্রচারণা এবং মামলা-হামলা জনিত কারণে অনেকাংশে পিছিয়ে পড়েছেন শেখ হাসিনার দল আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রতিপক্ষ ড. কামাল হোসেনের দল বিএনপি-জামাত নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

প্রতিটি আসনু পর্যবেক্ষণকালে সাধারণ জনগন বলেন, সবদিকেতো নৌকা আর লাঙ্গলই দেহি, ধানের শীষতো তেমন একটা দেহিইনা। কেমনে বুঝমু ধানের শীষ জিতব। অপরদিকে এ আসনের ধানের শীষ প্রার্থী নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান মনির। তিনিও আদ জল খেয়ে মাঠে নেমেছেন। কিন্তু তাকে সব সময় মাঠে পাওয়া যায়না বলে জানান সাধারন ভোটররা। সেক্ষেত্রে দিনরাত ২৪ ঘন্টা মাঠে আছেন গোলাম দস্তগীর গাজী। সাধারণ মানুষ ও এরই ব্যাপক সারা দিয়েছেন গাজীর শিবিরে।

নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে গোলাম দস্তগীর গাজী সম্পর্কে সাধারণ জনতা বলেন গাজীতো এক রকম পাশ হইয়াই রইছেন। রুপগঞ্জের মানুষতো হগ্গলেই কয় হুনি আবারও গাজী পাশ করবো।

নারায়ণগঞ্জ-২ তথা আড়াইহাজার উপজেলা এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র বিরাজ করছে সেখানেও। তবে এ আসনে মহাজোট তথা আওয়ামীলীগ প্রার্থী আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম বাবু’র প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপি প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মোটামুটি প্রচারণায় অনেকটা এগিয়ে গেছে যাতে মনে করা যায় এ আসনে নৌকা বনাম ধানের শীষে এক রকম হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও হতে পারে। কিন্তু আওয়ামীলীগ প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবু দাবী করেন তিনি ধানের শীষের চেয়ে ২ লক্ষ ভোট বেশী পেয়ে বিজয়ী হবেন। এ প্রসঙ্গে ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, যদি অবাধ, সুষ্ঠু এবং নির্বাচন হয় এবং প্রত্যেক ভোটার যদি তাদের স্ব-স্ব ভোট প্রদান করতে সক্ষম হন তবে আমি আজাদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হব ইনশাল্লাহ।

নারায়ণগঞ্জ-৩ তথা সোনারগাঁ আসনে গিয়ে দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভীন্ন চিত্র। এখানে হচ্ছে ত্রিমুখী নির্বাচন। এ আসনে প্রচার-প্রচারণায় সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন মহাজোট প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীকধারী লিয়াকত হোসেন খোকা। তার প্রতিপক্ষ ধানের শীষের প্রার্থী আজহারুল ইসলাম মান্নানকে মাঠেও দেখা যায়নি বাড়িতেও নেই এমনকি তাকে ফোনেও পাওয়া যায়নি।

এদিকে অপর প্রতিপক্ষ সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত দলীয় মনোনয়ন তথা নৌকা প্রতীক না পেয়ে হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী। নৌকার বদলে সিংহ মার্কা নিয়ে তিনি হয়েছেন মহাজোটের বিদ্রোহী প্রার্থী। তিনি আশা করেছিলেন সিংহ মার্কায় নৌকার ভোট নিয়ে তিনি মহাজোটের লাঙ্গল ঠেকাবেন। কিন্তু সরেজমিন পর্যবেক্ষনে মিলে ভীন্ন চিত্র। সোনারগাঁ আওয়ামীলীগের অধিকাংশরাই বলেন যিনি দলীয় নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশ উপেক্ষা করেছে তাকে ভোট দিলেতো দলের সাথে বেঈমানী করা হবে। যেহেতু আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে আওয়ামীলীগ এর রাজনিিত করি এবং সে দলের বর্তমান পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সেহেতু দলের সিদ্ধান্ত আমাদের মেনে নিতে হবে। তাছাড়া শেখ হাসিনা যেমন আওয়ামীলীগের নেত্রী তেমনি তিনি মহাজোট নেত্রী। অতএব মহাজোট যেখানে আমরা আছি সেখানে। নৌকা যেখানে নাই সেখানে লাঙ্গলই আমাদের নির্বাচনী প্রতীক শেখ হাসিনার প্রতীক। আমরা চাই নৌকা আর লাঙ্গলের ভোট নিয়ে মহাজোট আবারও পাশ করবে এবং সরকার গঠন করবে।

কিন্তু এ ব্যাপারে মহাজোটের বিদ্রোহী প্রার্থী সিংহ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী কায়সার হাসনাতকেও বারবার ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি।

নারায়ণগঞ্জ-৪ এবং ৫ আসনে মহাজোটের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জেলার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈকি পরিবার তথা ওসমান পরিবারের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী দুই সহোদর এ কে এম শামীম ওসমান এবং এ কে এম সেলিম ওসমান। উল্লেখিত দু’টি আসনেই ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপি নয় তবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনীত প্রার্থী মুফতি মাওলানা মনির হোসেন কাসেমী এবং আওয়ামীলীগের সাবেক এমপি এস এম আকরাম।

এদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে অত্যন্ত খ্যাতিমান এবং জাদরেল আওয়ামীলীগ প্রার্থী শামীম ওসমানের প্রতিদ্বন্দ্বি হিসেবে মনির হোসেন কাসেমী একেবারেই আনকোরা আনারি এবং সম্পূর্ণ অপরিচিত মুখ। তিনি জমিয়াতে ইসলাম নামে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের মনোনীত প্রার্থী যে দলের নামও নারায়ণগঞ্জ তথা সারা বাংলাদেশের কেউ কোনদিন শোনেননি। কিন্তু শামীম ওসমানের প্রতিদ্বন্দ্বি হওয়ার বদৌলতে এখন তাকে বিশ্ব বাঙালী সবাই চিনে ফেলেছে। তবে ভোটের বাজারে এই পরিচিতির প্রভাব কতটুকু পড়তে পারে তা দেখতে হলে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের দিন পর্যন্ত।

এ ব্যাপারে প্রার্থীর অনুভ’তি জানতে তার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তবে অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে তিনি অসুস্থ এবং ঢাকা ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ভর্তি আছেন।

অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের মহাজোট প্রার্থী সেলিম ওসমানের প্রতিদ্বন্দ্বি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ এর আহ্বায়ক পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী

নেতা ও এ আসনেরই এক সময়ের আওযামীলীগের এমপি এস এম আকরাম যেন মাঠেই নেই। সেলিম ওসমানের প্রচার-প্রচারণার তুলনায় এস এম আকরামের প্রচারণা নেই বললেই চলে। তবুও সাবেক এমপি হিসেবে তাঁকে সবাই একজন হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। বর্তমানে তিনি মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্ঠা এবং এ দলেরই মনোনীত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী।

এ আসনের সাধারণ ভোটররা বলেন যেহেতু তিনি মাঠের প্রচারণায়ই তেমন আগাতে পারেন নি সেহেতু তার জয়ের সম্ভবনা ও অনেকটা ক্ষীণ। সে হিসেবে নারায়ণগঞ্জের পুরো ৫টি আসনেই পুরোনোরা আবার ফিরে আসছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বোদ্ধারা। তবে শতভাগ সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে মহাজোট নয় নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনেই জিতবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা। এমনটাই দাবী করেছন তাদের দলীয় সমর্থকরা।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১২:৩৮পিএম/২৯/১২/২০১৮ইং)