• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৪:৫৬ অপরাহ্ন

নওগাঁয় কমছে খেজুর গাছ : সংকটেও পেশা ধরে রেখেছেন মৌসুমি গাছিরা!


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ১৭, ২০১৯, ১০:০১ AM / ৪২
নওগাঁয় কমছে খেজুর গাছ : সংকটেও পেশা ধরে রেখেছেন মৌসুমি গাছিরা!

ইখতিয়ার উদ্দীন আজাদ, নওগাঁ থেকে: খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ এবং গুড় তৈরি মূলত একটি মৌসুমি পেশা। এর সঙ্গে যারা যুক্ত, তাদের অধিকাংশই কাজটি করছেন বংশানুক্রমিকভাবে। তবে দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় পেশাটি বর্তমানে সংকটাপন্ন। এ অবস্থার মধ্যেও নওগাঁয় প্রতি বছর শীতের সময় খেজুরের রস সংগ্রহে অন্য জেলা থেকে বেশকিছু গাছি আসছেন। যারা গাছ ভাড়া নিয়ে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির মধ্য দিয়ে ঐতিহ্যবাহী পেশাটি ধরে রেখেছেন। নওগাঁয় ১১ উপজেলায় রয়েছে কয়েক হাজার খেজুর গাছ। এ বছর শীতের শুরুতেই এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহের জন্য রাজশাহী, বগুড়া ও নাটোর থেকে গাছিরা এসেছেন। সূর্যাস্তের আগে তারা গাছ পরিষ্কারসহ হাঁড়ি বাঁধার কাজ শুরু করেন। খুব ভোরে সংগ্রহ করেন হাঁড়িতে জমা হওয়া রস। এরপর চলে রস জ্বালিয়ে গুড় তৈরির কাজ। গাছিরা জানান, আরো দুই মাস তারা এভাবে রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি করবেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলা থেকে আসা দুলাল, জান্নাত, আলম, জাহাঙ্গীর, সবুজ, রবিউলসহ একাধিক গাছি জানান, কষ্ট হলেও তারা বাপ-দাদার এ পেশা ধরে রেখেছেন। তবে যে হারে খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে, তাতে পেশাটির ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আছেন। বাজারে খেজুরের গুড়ের দাম এখনো বেশ ভালো, তাই কষ্ট হলেও পেশাটি তারা ছাড়ছেন না। কথা হলে পাঁচবিবির দরগাপাড়ার আবু তাহের বলেন, স্থানীয়রা যাদের খেজুর গাছ আছে, তারা সাধারণত এ কাজ করেন না। ফলে তারা অন্য জেলা থেকে আসা গাছিদেরকে গাছ ভাড়া দিয়ে দেন। এর বিপরীতে গাছিরা তাদেরকে গাছপ্রতি ২-৩ কেজি গুড় দিয়ে থাকেন। গাছিরা জানান, প্রতিজন গাছি শীতের তিন মাসে কমপক্ষে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন। তাদের সহকারীরাও আয় করেন ৩০ হাজার টাকার মতো। উৎপাদিত গুড় প্রতি কেজি পাইকারি হিসেবে বিক্রি করছেন ৬৫-৭৫ টাকায়, যা খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা দরে। তবে তারা দুঃখ করে বলেন, ইদানীং আশঙ্কাজনক হারে খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে প্রতিনিয়ত খেজুর গাছ কাটা হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও এ অঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলে, ঝোপঝাড় ও রাস্তার পাশে খেজুর গাছ ছিল। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে সবাই এগিয়ে আসতে হবে। এজন্য সরকারিভাবে তালগাছের মতো খেজুর গাছও লাগানো যেতে পারে। পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ প্রকাশ চন্দ্র সরকার জানান, খেজুর গাছের চারা সরকারিভাবে রোপণ করা হয়। ব্যক্তি উদ্যোগে সাধারণত কেউ রোপণ করে না। খেজুর গাছের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ব্যক্তিগতভাবেও এর চারা রোপণ করা দরকার। তিনি আরো বলেন, আমরা বীজ থেকে খেজুর চারা উৎপাদন করি। কিন্তু বেসরকারিভাবে কেউ তা কেনেন না। যে কারণে শুধু সরকারিভাবে খেজুর গাছ রোপণ করে সফলতা মিলছে না।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/কেএস/১০:০০এএম/১৭/১/২০১৯ইং)