সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : ‘দুঃখে হাসতে শিখেছি, সুখে কান্না পায়, এভাবে ছোট বেলা থেকে নিজেকে গরে তুলতে চেষ্টা করেছি। মানব প্রেম আর এতিমের দোয়ায় আল্লাহ আমাকে জীবনপথে চলার সক্ষমতা এনে দিয়েছেন। এইতো জীবন আমার’।
কথাগুলো কোনো কবি-সাহিত্যিক কিংবা আধ্যাত্মিক কারো নয়, দেশের এক স্বনামধন্য ও প্রতিষ্ঠিত তরুণ ব্যাবসায়ী এবং রাজনীতিক এর। সাধারন রক্ত মাংসের মানুষ হলেও অসংখ্য দরিদ্র ও দুঃখীজনের কাছে যিনি ‘সুপার হিরো’। আমাদের আজকের বিশেষ সাক্ষাৎকার বিভাগের অতিথি তুখোড় রাজনীতিক খান তারেক আকিজ।
সারসংক্ষেপ :
খান তারেক আকিজ খুলনার ‘সার্চ লাইট সি ফুড এন্ড এগ্রিকালচার’ এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং ‘মেসার্স টি এ ফিশ টেড্রার্স এন্ড লিম ফিশ সাপ্লায়ার্স’ (দেশের অন্যতম রপ্তানি যোগ্য চিংড়ী মাছ সরবরাহকারী ও কমিশন এজেন্ট) এর সত্ত্বাধিকারী। পাশাপাশি রয়েছে তার ঠিকাদারী ব্যবসা। এছাড়া ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গ দল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি। রাজনীতিক, সফল ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবার পাশাপাশি যিনি অবসরে গীটার বাজিয়ে গান গাইতেও ভালবাসেন। ভালবাসেন শত ব্যস্ততার মাঝেও খনে খনে সাগরপরীর কাছে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে। কখনোবা পথ চলতে চলতে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে দু’হাত ছড়িয়ে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিয়ে মা-মাটি আর মাটির গন্ধে নিজেকে চাঙ্গা করে নিয়ে ফের ছুটে চলেন যিনি। বিভিন্ন জাতীয় দিবস থেকে শুরু করে ছুটিতে প্রিয় সন্তানদের নিয়ে ঘুরে বেরাতে পছন্দ করেন দেশ-বিদেশে। সদা হাস্যোজ্জ্বল এ মানুষটিকে নিয়ে আমাদের আজকের এই আয়োজন।
জন্ম ও পারিবারিক পরিচয় :
১৯৭৮ সালের ১৮ অক্টোবর খুলনার রুপসা থানার আইচগাতি উপজেলার যুগীহাটি গ্রামের এক মুসলিম পরিবারে জন্ম। বাবা ব্যবসায়ী আলহাজ্ব খান শহীদ আলী। খান সাহেবের ৩ পুত্র ৩ তিন কন্যার মধ্যে আমি ৫ম। বর ভাই বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী খান সাইফুল ইসলাম (একাধারে যিনি পরিচালক- খুলনা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইডা, ১ম শ্রেনীর ঠিকাদার, ঔষধ ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক)। মেঝো ভাই খান আরিফ হাসান গার্মেন্টস শিল্প ব্যবসায়ী এবং সবার ছোট আমি। ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত মেধাবী ২ সন্তানের বাবা।
শিক্ষা জীবন :
খুলনা জেলা স্কুল থেকে ১৯৯৩ সালে এসএসসি। খুলনা সরকারী বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে ১৯৯৫ সালে এইচএসসি। মাঝে কিছুদিনের জন্য পরিবারের চাপে নৌ-বাহিনীতে। এরপর ফিরে এসে পূনরায় বিএ ডিগ্রী সম্পন্ন করেন ১৯৯৭ সালে।
রাজনৈতিক পরিচয় :
বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম অঙ্গ দল বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এবং খুলনা জেলা কমিটির সভাপতি।
রাজনৈতিক ক্যারিয়ার :
ছাত্র জীবনে ১৯৯৩ সাল থেকেই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতি পছন্দ করতাম। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি-আদর্শকে বুকে ধারন করে তৎকালীন সময় থেকে সকলের সহায়ক হয়ে কাজ করে এসেছি। পদ-পদবি না নিলেও সব সময়ই রাজনৈতিক যে কোনো কাজে অর্থ ও স্বশরীরে নিজে উপস্থিত থেকে কাজ করেছি। তবে ইচ্ছে ছিল নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে তারপর সক্রীয়ভাবে রাজনীতিতে আসব এবং করেছিও তাই। ২০১৩ সালের মাঝামাঝিতে আমি পদবি নিয়ে সক্রীয়ভাবে রাজনীতিতে যোগ দেই।
ছাত্র জীবন থেকেই দলের যে কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে আপনার সরব উপস্থিতি ছিল। আপনাকে দেখেছি অর্থ দিয়ে এবং স্বশরীরে বরাবরই আপনি দলের ক্রান্তিলগ্নে রাজপথে থেকেছেন। তবে কেনো দীর্ঘ বিরতির পরে পদ-পদবি নিয়ে দলে সক্রীয় হলেন :
সেই সময় দলীয়ভাবে নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত কোন্দলের কারণে আমাকে যথাযোগ্য পদ না দেয়াতে আর কোনো পদ পদবি নিয়ে রাজনীতি করতে চাইনি। সেই সময় যিনি আমাকে পদ-পদবি না দিয়ে হেয় করার চেষ্টা করেছিলেন তিনি বর্তমানে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের একজন সুপরিচিত নেতা। তবে আমি তার নাম প্রকাশ করতে চাইনা। আমি বরাবরই পদ-পদবির চেয়ে দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করার চেষ্টা করেছি দলকে ভালবেসে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দুর্দিনে যখন যেভাবে পেরেছি আর্থিক সহযোগিতা করেছি। এমনকি একসময় দলের পক্ষে জ্বালাও পোড়ার আন্দোলনেও জড়িয়ে পড়ি।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের মূল প্রতিপাদ্য কি :
মুক্তিযোদ্ধের চেতনাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে পৌছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে এই বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের জন্ম। তরুণ সমাজের মাঝে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধকালীন নানা প্রামান্যচিত্র ও স্বচিত্র লেখনীগুলোকে নিয়ে আমরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোকচিত্র প্রদর্শণী করে থাকি। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, কেবল তারাই এই দলের সদস্য। তবে জামায়াত পরিবারের কেউ এই দলে থাকতে পারবেনা।
রাজনীতির মাঠে খান তারেক আকিজ :
বিগত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের কিছুটা আগে থেকেই দলের পক্ষে আন্দোলনে সক্রীয়ভাবে মাঠে-ময়দানে থাকার সুযোগ হয়েছিল আমার। জামায়াত-শিবিরের তান্ডবলীলা ঠেকাতে ঢাকার রাজনীতিতে ফাতেমা জলীল সাথী আপার হাতে হাত রেখে বিএনপিকে প্রতিহত করার লড়াইয়ে নামি। সেই সময় জাতীয় প্রেসক্লাবে জামায়াত-বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন সেখানে উপস্থিত সাংবাদিক ভাই-বোনদের অবরুদ্ধ করে রেখেছিল, আজকে দলের পক্ষে বড় বড় ভাষন দানকারী জাতীয় চাঁপাবাজদের কেউই সেদিন ছিলনা। সেদিন একমাত্র অগ্নিকন্যা ফাতেমা জলীল সাথী আপার নেতৃত্বে আমরা অবরুদ্ধ সাংবাদিকদের উদ্ধার করি। এমনকি সেদিন আন্দোলনরত মির্জা ফখরুলকে শার্টের কলার ধরে পুলিশের কাছে নিয়ে সোপর্দ করেছিল সাথী আপা একাই।
২০১৬ সালের ১৫ ই আগষ্ট আপনার সম্পাদনায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি বিশেষ স্বরণিকা করেছিলেন :
হ্যা, সে বছর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ৬৪ পৃষ্ঠার বিশেষ স্বরণিকা করেছিলাম জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে। দেশের সেরা ১০টি স্বরণিকার মধ্যে এটি শ্রেষ্ঠ হয়। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সেটিকে দেশের শ্রেষ্ঠ স্বরণিকা বলে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। যেখানে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এক্সক্লুসিভ চিত্র ও লেখা রয়েছে। স্বরণিকা কে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সংগঠন থেকে আমাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি খুব শীঘ্রই মুক্তিযোদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা দেয়া হবে বলে জানতে পেরেছি।
রাজনীতি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা :
যাকে দেখে ছাত্রজীবন থেকে আমি রাজনীতি ও সমাজ সেবা করতে অনুপ্রাণিত হয়েছি, আমার সেই রাজনৈতিক অভিভাবক- খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জনাব এস এম মোস্তফা রশীদি সুজা (এমপি), মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এমপি (বীর বিক্রম) ভাই, দক্ষিণ বাংলার উন্নয়নের প্রতিক জনাব শেখ হেলাল উদ্দিন (এমপি) ভাই, মুুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানীত ও সংগ্রামী সভাপতি ফাতেমা জলিল সাথী আপা, এস এম কামাল ভাই, জাতীয় ক্রীকেট বোর্ডের লজিস্টিক চেয়ারম্যান আমার শ্রদ্ধেয় শেখ সোহেল ভাই ( যিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহের চাচাতো ভাই ) যদি চান এবং সকল আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সহযোগিতা ও দোয়া পাশে থাকলে ২০১৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা ৬নং আসন থেকে আমি প্রার্থী হবোই ইনশাআল্লাহ।
রাজনৈতিক জীবনে যাদের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ :
আমার রাজনৈতিক অনুপ্রেরনা ও বিশেষ অবদান এর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যুবনেতা সরদার আনিছুর রহমান পপলু ভাই, আলহাজ্ব মিজানুর রহমান মিজান (এমপি) ভাই, যুবনেতা শফিকুর রহমান পলাশ ভাই, মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি মিনহাজ সুজন, মহানগর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ রাসেল, জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মেধাবি ছাত্রনেতা মুসফিকুর রহমান সাগর, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব সরফুদ্দিন বাচ্চু ভাইয়ের প্রতি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই মানুষগুলোই আমার রাজনৈতিক জীবনের অনুপ্রেরনা ও উৎসাহ।
সামাজিক কর্মকান্ড সম্পর্কে বলুন :
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি সম্পূর্ণ নিজ খরচে একটি এতিমখানা পরিচালনা করে আসছি। পাশাপাশি বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ কে আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে আসছি প্রতি বছর। এছাড়া এলাকার গরিব ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া ও পোশাক সহ যে কোনো ধরনের সমস্যায় আর্থিকভাবে সহযোগিতা করি। যার জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিন-ক্ষণ নেই। আমার উপার্জনের একটি নির্দিষ্ট অংশ আমি বরাবরই এসব সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য ব্যয় করি।
২০১৫’তে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে রাজনৈতিক মাঠে সবচেয়ে বেশি সারা জাগিয়েছিল আপনার যে ভাষনটি :
‘‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে মুক্তিযোদ্ধারা, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজাকার যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গী মুক্ত করবে এ প্রজন্মরা’’
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১:২০এএম/২৫/২/২০১৭ইং)
আপনার মতামত লিখুন :