• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৮:১২ পূর্বাহ্ন

দিগন্ত মিডি‌য়া‌তে চলে‌ছে সম্পদের ভাগ-বা‌টোয়ার হিসাব নিকাশ


প্রকাশের সময় : মার্চ ১৫, ২০১৮, ১১:২০ AM / ৪৯
দিগন্ত মিডি‌য়া‌তে চলে‌ছে সম্পদের ভাগ-বা‌টোয়ার হিসাব নিকাশ

লিটন মাহমুদ, ঢাকা : বাংলা ও ইংরেজি সংবাদপত্র, টেলিভিশন, রেডিও, পেপারমিল এই ৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ২০০৩-০৪ সালে গঠিত হয়েছিল জামায়াতে ইসলামীর নিয়ন্ত্রণাধীন দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশন লিমিটেড। যার উদ্যোক্তা ছিলেন যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী। ঐ সময় তার নেতৃত্বে দলমত নির্বিশেষে ২০ জন শিল্প উদ্যোক্তা পরিচালক ও কয়েকজন প্রতিনিধি পরিচালক নিয়ে যাত্রা শুরু করে এই প্রতিষ্ঠানটি।

জানা গেছে, পরবর্তী সময় অর্থ সংগ্রহের জন্য উদ্যোক্তা পরিচালকের বাইরেও শেয়ার ছাড়ে দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশন লিমিটেড নামে এই প্রতিষ্ঠানটি। সর্বনিম্ন ৫০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকার শেয়ারহোল্ডার রয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটিতে। সংখ্যাটা নেহায়েত কম নয়, কমপক্ষে সাড়ে ৭ হাজার। যার মধ্যে অনেক প্রবাসী শেয়ারহোল্ডার ও উদ্যোক্তা পরিচালক রয়েছেন দিগন্ত মিডিয়ায়।

আর এই মিডিয়া কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ২০০৪ সালে যাত্রা শুরু করে নয়াদিগন্ত পত্রিকা। আর ২০০৮ সালের আগস্ট মাসে সমপ্রচার শুরু করে দিগন্ত টেলিভিশনের। একই সময়ে কাজ শুরু হয় দি এশিয়ান পোস্ট-এর ডামি বা গৃহপ্রকাশ সংখ্যার কাজ। পেপারমিলের জন্য জায়গা কেনা হয় কালীগঞ্জে। তবে শুরু করা যায়নি দিগন্ত রেডিও।

সবকিছুর মূল কেন্দ্রে ছিল উদ্যোক্তা মীর কাসেম আলী ও তার সাথে বেশ ক’জন পরিচালক। তখন দৈনিক নয়াদিগন্তের প্রকাশক করা হয় কেয়ারি লিমিটেডের প্রতিনিধি হয়ে থাকা পরিচালক শামসুল হুদাকে।

মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেম আলী জেলে যাওয়ার পর এর বেতনভাতাসহ নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এ প্রতিষ্ঠান দুটোকে চলতে হয়। বৈরী পরিবেশে অনেক পরিচালকও এড়িয়ে চলেন তাদের লগি্নকরা প্রতিষ্ঠানকে।

দিগন্ত টেলিভিশনের সমপ্রচার ২০১৩ সালের ৬ মে সাময়িক সম্প্রচার বন্ধ করে দেয়ার কথা বললেও এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে অধিকাংশ কর্মী স্বেচ্ছায় ছুটি, কেউ চাকরি ছেড়ে অন্যত্র যোগ দিয়েছেন।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বন্ধের পূর্ব ও পরের অংক মিলিয়ে কর্মীদের বকেয়া পাওনা প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

এদিকে, কোম্পানির দায়-দেনা মেটাতে ইতোমধ্যে কালীগঞ্জের পেপার মিলের জায়গা বিক্রি করা হয়েছে বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে। ঋণে জর্জরিত দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশন তার বিজয়নগরের আল রাজি কমপ্লেঙ্রে ৩টি ফ্লোরের একটি (নবম তলার) বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় গেল বছরের মাঝামাঝি। সাড়ে ৬ হাজার বর্গফুটের ফ্লোরটি বাজার মূল্যের চেয়ে অনেক কমে মাত্র ৮ কোটি টাকায় বিক্রি করা হয় এক পরিচালকের কাছে, যিনি সোনালি আবাসন নামের একটি হাউজিংয়ের কর্ণধার। পৌনে ২ কোটি টাকা বায়না দেয়ার পর গত ৮ মাসে আর একটি টাকাও তিনি পরিশোধ করেননি। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে কোম্পানীর নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশারফ হোসেন স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে দেখা গেছে, তিনি ফ্লোরটি বুঝিয়ে দিতে দিগন্ত টেলিভিশনের নির্বাহী পরিচালককে অনুরোধ করেছেন। অথচ সোনালি আবাসন বায়নার টাকা দেয়ার সাথে সাথে দিগন্ত টেলিভিশনের সব আসবাবপত্র ঐ ফ্লোর থেকে সরিয়ে নেয়। যদিও বাদবাকি টাকা পরিশোধ না করায় সোনালি আবাসনকে তা রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়নি। কিন্তু গত ৩ মার্চ শনিবার কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান মিয়া মোহাম্মদ আইয়ুব, এমডি মোশারফ হোসেন বোর্ড চেয়ারম্যান শাহ আব্দুল হান্নানের বাসায় যান। সেখানে গিয়ে অদৃশ্য কারণে তারা সম্মত হয়ে ফ্লোরের চাবিটি সোনালি আবাসনকে বুঝিয়ে দেয়। যা রীতিমতো প্রতিষ্ঠানের দেশি-প্রবাসী শেয়ারহোল্ডার ও উদ্যোক্তাদের সাথে প্রতারণা বলে অখ্যায়িত করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের একজন পরিচালক জানান, মীর কাসেম আলীর সময়ে তেমন কোনো পরিচালক এখানে আসতো না, নাকও গলাতো না। এখন যারা দায়িত্বে আছেন, তাদের কেউ কেউ সম্পদ ভাগ-বাটোয়ারায় ব্যস্ত। প্রতিষ্ঠানের দিকে কারোরই নজর নেই। না প্রকাশ না করার শর্তে এই পরিচালক জানান, বোর্ড চেয়ারম্যান, ইসি চেয়ারম্যান ও অডিট চেয়ারম্যান কারো অর্থ বিনিয়োগ নেই, তাই তাদের আন্তরিকতা সময়ের পরীক্ষায় প্রশ্নবিদ্ধ! তাই ঐ দিকে কী হচ্ছে জানতেও চাই না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর একজন পরিচালক জানান, বোর্ডের চেয়ারম্যান কী বলছেন, কী করছেন তার ঠিক নেই। তিনি বৈঠকে একটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে আবার সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলছেন। যা কোম্পানির পরিচালকদের জন্য বিব্রতকর। বয়সজনিত কারণে তার প্রয়োজন এখন বিশ্রাম নেয়া।

অন্য একটি টেলিভিশনে কর্মরত দিগন্ত টিভি’র একজন সাবেক কর্মী জানান, গত বছর ফ্লোর বিক্রির উদ্যোগ নিলে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পক্ষ থেকে একটি স্মারকলিপি দেয়া হয় বোর্ড চেয়ারম্যান ও সদ্য দায়িত্ব নেয়া ইসি চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর। কর্তৃপক্ষ মৌখিক আশ্বাস এবং কিছু সময় চাইলে বকেয়ার বিষয়ে আর কোনো উচ্চবাচ্য করেনি এর কর্মীরা। কিন্তু দীর্ঘ ৮ মাস পর যখন সোয়া ৬ কোটি টাকা বাকি রেখেই পরিচালক মো. ইউনুসের সোনালী আবাসনকে ফ্লোরের চাবি হস্তান্তর করা হলো, তখন বিষয়টি পরিষ্কার হলো।

এদিকে, কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালক না হয়েও নয়াদিগন্তের প্রকাশক দোহাই দিয়ে পত্রিকার মালিকানা পুরোপুরি পেতে উঠেপড়ে লেগেছেন শামসুল হুদা এমন অভিযোগ একজন শেয়ার হোল্ডারের। আর তাকে সহযোগিতা করছেন প্রতিষ্ঠানটির এক শ্রেণীর কর্মচারী। কোম্পানির হাজার হাজার শেয়ারহোল্ডারদের কিছু না জানিয়ে এমন কাজ করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ডের সাবেক সদস্যকে ফোন করলে তিনি জানান, আমরা পরিচালকরা চাই প্রকাশকের নামের পূর্বে দিগন্ত মিডিয়া কর্পোরেশনের পক্ষে কথাটি যেন লেখা হয়। এদিকে, বকেয়া পাওনার বিষয়ে দিগন্ত টেলিভিশনের সাংবাদিক-কলাকুশলীরা শিগগির সাংবাদিক সম্মেলনসহ বৃহত্তর কর্মসূচির কথা ভাবছে বলে জানান এক সিনিয়র সাংবাদিক নেতা।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১১:১৮এএম/১৫/৩/২০১৮ইং)