• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন

তাহিরপুরে সরকারী ডাক্তার হয়ে প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত ডা. ইকবাল হোসেন


প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ৩০, ২০১৯, ১১:৫৯ AM / ৪২
তাহিরপুরে সরকারী ডাক্তার হয়ে প্রাইভেট চেম্বার নিয়ে ব্যস্ত ডা. ইকবাল হোসেন

সুনামগঞ্জ থেকে নাইম তালুকদার : হাওরের জনপদ সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার প্রায় তিন লক্ষাধিক মোট জনসাধারনের চিকিৎসা সেবায় একধাপ এগিয়ে যেতে উপজেলা সদরে ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন নির্মান করেছে সরকার। হাসপাতালের অনেক ডাক্তারের শূণ্যপদ পুরণে সম্প্রতি ৩৯তম (বিশেষ) বিসিএসে উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬জন নতুন চিকিৎসককে পদায়ন করা হয়েছে। কিন্ত এরমধ্যে ৩ চিকিৎসকের দ্রুতবদলি হয়ে যাওয়ায় এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় যে জটিলতা তার অবসান হয়নি। ফলে চিকিৎসক সংকট রয়েই গেল এই হাওরবেষ্টিত তাহিরপুর উপজেলা সদর হাসপাতালটিতে।

এদিকে হাসপাতালের ইউএইচএফপি ডাক্তার ইকবাল হোসেন সরকারী হাসপাতালটিতে অবস্থান করেও রোগীদের নিকট হতে ভিজিট নিয়ে হাসপাতালটিকে প্রাইভেট প্রাকটিসের স্থল বানিয়েছেন। হাসপাতালে রোগী দেখতে কোন ফি নেয়ার কোন নিয়ম কানুন না থাকলেও প্রকাশ্যেই তিনি প্রতি রোগীর নিকট হতে ভিজিট হিসেবে ৫শ টাকা হারে নিচ্ছেন বলে স্থানীয়দের এমন অভিযোগ রয়েছে। টাকা না দিলেই ঐ সরকারী ডাক্তার ইকবালের রোগীদের সাথে খারাপ আচরণ করতে ও দেখা যায় । স্বাস।থ্যসেবা নিতে আসা গ্রামের সহজ সরল মানুষজন ডাক্তারের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি কিংবা প্রতিবাদ করার সাহসও পায়নি। নিয়মিত অফিস না করে সপ্তাহের ৪দিনই সিলেটে অবস্থান করে স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে আরাম আয়েশে দিন কাটালেও বেতনভাতা সময় মতো উত্তোলন করে যেমন নিচ্ছেন তেমনি হাসপাতালে অবস্থানকালে প্রাইভেট চেম্বারে প্রাকটিস করে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা দীর্ঘ দিন ধরে এমন অভিযোগ ভোক্তভোগীদের।

স্থানীয় বিভিন্ন সুত্র থেকে জানায়, গত ২০১৭ সালের ২৪ এপ্রিল তাহিরপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউএইচএফপি হিসেবে যোগদান করেন ঐ দর্ূনীতিবাজ ডাক্তার ইকবাল হোসেন। তার গ্রামের বাড়ী উপজেলার দক্ষিন বড়দল ইউনিয়নের চর্তুভুজ্ গ্রামে। যোগদানের পর থেকেই তিনি হাসপাতালে অবস্থান করে প্রাইভেট প্রাকটিস করছেন এবং হাসপাতালটি নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারে পরিনত করেছেন। হাসপাতালের সংস্কার কাজের মালামাল নিজ বসতবাড়ীতে ব্যবহার করেছেন বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক সাধারন মানুষজন। হাসপাতালের অন্যান্য ডাক্তার ও স্টাফদের সাথে তার আচরন করার অভিযোগের যেন অন্ত নেই। হাসপাতালের পাশের্বর গ্রামে বাড়ী থাকার কারণেই অন্যান্য ডাক্তার ও স্টাফসহ রোগীদের সাথে অসৎ আচরন প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল বাছেত জানান, ডাক্তার ইকবাল হোসেন সপ্তাহের বেশীরভাগ সময়ই সিলেটে অবস্থান করেন। যখনই হাসপাতালে যাই তখনই শুনা যায় তিনি সিলেটে আছেন। অথচ সর্বক্ষণ হাসপাতালে থেকে ডাক্তার ও স্টাফরা নিয়মিত ডিউটি করছে কিনা তা তত্বাবধান করার দায়িত্ব উনার থাকলেও তিনি এর ধারে কাছে ও নেই। তিনি বেশীরভাগ সময় অনুপস্থিত থাকার কারণেই সাধারন রোগীরা স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা কাইয়ুম জানান, ডাক্তার ইকবাল হাসপাতালের সংস্কার কাজের টাইলস ও অন্যান্য মালামাল নিজ বাড়ীতে ব্যবহার করেছেন এবং উনি নিয়মিত হাসপাতালে ডিউটি করেন না।

সূত্র আরও জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউএইচএফপিওসহ সর্বমোট ১৩ চিকিৎসকের পদ রয়েছে। কোন রকমে ইউএইচএফপিও ব্যতীত ৫ চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা কার্যক্রম চলে কোনরকমভাবে। গত ১২ ডিসেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬ চিকিৎসকের আগমন এবং ৩ চিকিৎসকের প্রস্থান হওয়ায় বর্তমানে কমর্রত রয়েছেন ইউএইচএফপিও ব্যতীত মোট ৮ চিকিৎসক। ৫০শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারি উদ্বোধন করলেও বিভিন্ন পদে জনবল সংকটের কারনে চালু হয় নি। ফলে পুরনো ভবনেই স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। হাসপাতালের ৩টি জেনারেটার ১০বছর যাবৎ নষ্ট হয়ে পরে আছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে হাসপাতালের ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা রোগীরা গরমে ছটফট করে। ১০বছরের বেশী সময় ধরে ডেন্টাল,ল্যাব টেকনোলজিষ্ট,রেডিওগ্রাফার পদ গুলো শূন্য রয়েছে ফলে কোন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য যেতে হচ্ছে বাহিরে। গত ৪ বছরের বেশী সময় ধরে এক্সরে মেশিন ঘরে ভিতরে থেকে ও হাসপাতালের জন্য একটি নৌ এ্যাম্বোল্যান্স থাকলেও চালক না থাকায় একদিনের জন্যও ব্যবহার করা হয় নি। ফলে নৌ এম্বোল্যান্স নষ্ট হচ্ছে হাসপাতালের পুকুরেই যেন দেখার কেউ নেই। উপজেলা থেকে ১০কিলোমিটার দূর বাদাঘাট ইউনিয়ন থেকে চিকিৎসা নিতে আসা আলীনুর মিয়া জানান, হাসপাতালে ভাল কোন অভিজ্ঞ সম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাই। মহিলাদের জন্য কোন গাইনী ডাক্তার না থাকায় মহিলারা চিকিৎসা নিতে বিপাকে পড়েন। এছাড়াও দাঁতের ডাক্তার, এক্সরে, ল্যাবটেকনেশিয়ানসহ বিভিন্ন পদে শূন্যতার কারনে বাহিরে গিয়ে চিকিৎসা ও বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে হয়।

এ ব্যাপারে ইউএইচএফপি ডাক্তার ইকবাল হোসেনের সাথে যাগাযোগ করা হলে তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, আমি ২০১৭ সালের এপ্রিল মাস থেকে তাহিরপুরে যোগদানের পর হাসপাতালের সার্বিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। হাসপাতালের প্রধান কর্মকর্তা অর্থাৎ ইউএইচএফপি’র দায়িত্ব পালন করার কারণে জেলা সিভিল সার্জন, সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা সমন্বয় সভায় যোগদান করতে হয়। ফলে মাসের অন্তত ১০-১২ দিন অফিসে ডিউটি করা সম্ভব হয় না। আমি যোগদানের পর থেকেই তাহিরপুর হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। আর সে কারণেই কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।

এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুনা সিন্দু চৌধুরী বাবুল জানান, ইউএইচএফপি ডাক্তার ইকবালের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগ পত্র পত্রিকায় দেখেছি। তবে কেউ লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তপূর্বক যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১০:৫৭পিএম/৩০/১২/২০১৯ইং)