• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ১২:০৭ অপরাহ্ন

ঢাকা মেডিকেলে ‘প্লাজমা’ চুরির অভিযোগ(ভিডিও)


প্রকাশের সময় : জুন ৬, ২০২০, ১:৫৮ AM / ৪৪
ঢাকা মেডিকেলে ‘প্লাজমা’ চুরির অভিযোগ(ভিডিও)

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, ঢাকা : একদিকে দেশে করোনা ভাইরাসে দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বেড়ে চলেছে, তেমনি মৃত্যুর সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। অপরদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট এর ব্লাড ব্যাংকে চলছে প্লাজমা চুরির মতো ঘটনা।

৫ জুন শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে এমনই দৃশ্যের দেখা মিলেছে সেখানে।

অভিযোগে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের মাসদাইর সেরে বাংলা রোড এর বাসিন্দা রাশিদা বেগম(৫৭) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিটাগাং রোডের সাজেদা ফাউন্ডেশনের আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর মাঝামাঝি অবস্থান করছেন। এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্বরত চিকিৎসক জানিয়েছেন করোনা পজেটিভ থেকে সুস্থ হওয়া কারও ‘ও পজেটিভ’ ব্লাড গ্রুপের প্লাজমা দেয়া গেলে সুস্থ হতে পারেন রাশিদা। তবে প্লাজমার পরিমান হতে হবে মোট ৬শ’ এমএল। চিকিৎসকের পরামর্শে তার পরিবারের সদস্যরা প্রথম ধাপে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সহযোগিতায় প্লাজমা ডোনারও পেয়ে যান।

সোনারগাঁ বারিমজলিশ এলাকার ২৫ বছরের যুবক হাসিবুর রহমান রিফাত নিজে করোনা পজেটিভ থেকে সুস্থ হয়ে উঠায় গত ৩ জুন স্বউদ্যোগে রাশিদা বেগমের জন্য প্লাজমা দিতে আসেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট এর ব্লাড ব্যাংকে। এখানে আসার পর তার থেকে ৪শ’ এমএল প্লাজমা সংগ্রহ করা হয়। তবে রাশিদা বেগমের জন্য ২শ’ এমএল প্লাজমা ব্লাড ব্যাংক থেকে দেয়া হয় এবং বাকি ২শ’ এমএল রেখে দেয়া হয় রোগির পরিবারকে না জানিয়ে এবং এই প্লাজমা সংগ্রহের জন্য রোগির পরিবারের থেকে ৩ হাজার টাকা বিল রাখা হয়। পরিবর্তিতে প্লাজমা দিয়েও রোগির অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পূনরায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ৫ জুন শুক্রবার পেয়ে যান আরও একজন ডোনার। তবে এবার প্লাজমা দিতে আসা ডোনার নিজে একজন সিনিয়র সাংবাদিক এবং ডোনার ব্যবস্থাপনায় সাথে এসেছেন আরও একজন সাংবাদিক।

ওইদিকে তাড়াহুরো থাকায় পরিবারের লোকজনকে না জানিয়ে পূর্বে ২শ’ এমএল প্লাজমা ব্লাড ব্যাংক কতৃপক্ষ রেখে দিলেও তারা বিষয়টি খেয়াল করেননি। তবে পূর্বের ডোনার রিফাত নিজেই বিষয়টি আঁচ করতে পেরে শুক্রবার একই সময়ে ব্লাড ব্যাংকে ছুটে আসেন। এরপর উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে বিষয়টি আলোচনা করার পর ব্লাড ব্যাংকের দায়িত্বে থাকা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সাইফুল ইসলাম জিজ্ঞাসাবাদ করলে নানা গড়িমসির এক পর্যায়ে তিনি বাকি ২শ’এমএল প্লাজমা ফেরত দিতে রাজি হলেও দাবি করেন আরও ১৫শ’ টাকা। পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের জেরার মধ্যে বেড়িয়ে আসে আসল সত্য।

সাইফুল জানান- আমি এখানে কোনো ব্যক্তিগত কাজ করিনা। আমি নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি। এখানে বিভাগীয় প্রধান ডা. আশরাফুল হক এর নির্দেশনায়ই সব হয়।

তার মতে- ডা. আশরাফুল হক এর নির্দেশনায় রোগিদের থেকে এভাবে টাকা আদায় করেন এবং রোগির পরিবার ও ডোনারকে না জানিয়ে ৫০% প্লাজমা রেখে দেন।

এ ব্যাপারে ডোনার রিফাত জানান- আমি ৩ জুন ২শ’ এমএল দিতে আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু তারা আমার থেকে ৪শ’ এমএল প্লাজমা রাখা হয়েছে। এরপর ডোনেট করার পর আমি রিপোর্টটির একটি ছবি তুলে রাখি। সেখানে ৪শ’ এমএল রাখা হয়। কিন্তু রোগির পরিবারের থেকে পরদিন(৪ জুন) জানতে পারি আমার থেকে ২শ’ এমএল প্লাজমা রোগিকে দেয়া হয়েছে এবং প্লাজমা দেয়ার পরে রোগির অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি, তাই তারা আবারও ডোনার খুঁজছেন। এরপর ৫ জুন শুক্রবার আমি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউট এর ব্লাড ব্যাংকে আসি বিষয়টি দেখার জন্য। এখানে আসার পর সাংবাদিকদের সহযোগিতায় আমার বাকি ২শ’ এমএল প্লাজমার কথা স্বীকার করে তারা এটি দিতে রাজি হলেও আরও ১৫০০ টাকা দাবি করেন। অথচ তারাই বেআইনীভাবে আমার প্লাজমা আমাকে কিংবা রোগির পরিবারকে না জানিয়ে রেখেছে, এখন আবার ধরা পরে যাওয়াতে পূনরাং এটি ফেরত দেয়ার জন্য টাকা দাবি করছে।

এদিকে মোবাইলে যোগাযোগের পর জেরার ‍মুখে ডা. আশরাফুল হক সাংবাদিকদের জানান- সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে এই কাজটি হলেও বাইরের হাসপাতালগুলোতে আমাদেরকে এই টাকাগুলো নিতে হয়। তবে যদি একই ডোনারের প্লাজমা একই রোগিকে দেয়া হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে দ্বিতীয়বার কোনো বিল দিতে হবেনা।

তবে কেনো রোগির পরিবার কিংবা ডোনারকে না জানিয়ে এই প্লাজমা রেখে দেয়া হলো এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. আশরাফুল হক মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান।

এদিকে রোগির পরিবারের দাবি- এভাবে না জানিয়ে হয়ত অনেকের কাছ থেকেই প্লাজমা রেখে দিয়ে তা অন্যত্র লাখ টাকায় বিক্রি করছে এখানকার কতৃপক্ষ।

যেখানে বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসে লাখ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করছে, একের পর এক মানুষ স্বজনহারা হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের মতো একটি ছোট্ট দেশের স্বাস্থ্যখাতের অবস্থা আগে থেকেই যখন নড়বড়ে, তখন মানুষকে বাঁচাতে এভাবে ছলচাতুরি করে প্লাজমা সংগ্রহ কতটা নিরাপদ? এমন প্রশ্ন এখন জনমনে।

ভিডিও সংবাদটি দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন- 

https://www.youtube.com/watch?v=0ehbHODfO10

 

 

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১:৫৭এএম/৬/৬/২০২০ইং)