• ঢাকা
  • শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

ডিভোর্স…


প্রকাশের সময় : মে ১৮, ২০২০, ২:৪২ PM / ৩৩
ডিভোর্স…

রুদ্র তমাল : আজকাল ডিভোর্সটা যেন পান্তা ভাতের চাইতেও সস্তা! কেউ চাইলেই যখন তখন ডিভোর্স দিয়ে দিচ্ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায়, দেশের বড় শহর অঞ্চলগুলোতে যতগুলো ডিভোর্স হয় তার ৮৫% ডিভোর্স হচ্ছে নারীদের পক্ষ থেকে। অপরদিকে এই ৮৫% এর মধ্যে প্রায় ৯০% কর্মজীবি নারী যারা এককভাবে স্বামীর উপর নির্ভরশীল না হওয়াতে হুট করেই সরাসরি ডিভোর্সের মত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়!

সামাজিক বন্ধনগুলোতে বিয়ে একটি অন্যতম বন্ধন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্বামীরা বাধ্য হয়ে কোন উপায় না পেয়ে স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে থাকে। অপরদিকে সংসারে সন্তান থাকলে সেটাও বিবেচনায় রেখে অনেক পুরুষ সবকিছু নিরবে মেনে নিয়ে কিন্তু মুখ বুজে সংসার চালিয়ে যায়….

অধিকাংশ নারীরা স্বভাবতই আহ্লাদী, জেদী, একরোখা এবং স্বেচ্ছাচারী প্রকৃতির হয়ে থাকে। আর সেসব নারীরা যদি হয় কর্মজীবী বা পৈতৃক সম্পত্তির অধিকারী তবে যেকোনো ঠুনকো কারণেই ডিভোর্স এর সিদ্ধান্তে যেতে বিন্দুমাত্র কুন্ঠাবোধ করেনা যা অত্যন্ত দুঃখজনক!

পৃথিবীতে কোন মানুষ ই স্বয়ংসম্পূর্ণ নন। দোষ ত্রুটি নিয়েই মানুষ। আর সসর্বোপরি সন্দেহ বাতিক নামক ফোবিয়াতে ভোগা নারীরা সারারাক্ষ আক্রোশ মূলক মুডে ভূগতে থাকে। যাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে মানসিক রোগ বলে থাকি। আর চিকিৎসা বিজ্ঞানও অনেক ক্ষেত্রে ঠিক এটাই বলে থাকে।

হিংসা নারীদের আরেকটি বড় রকমের সমস্যা। উপরোক্ত সমস্যাগুলো যাদের চরিত্রে রয়েছে তাদের জীবনে ভাঙনের সুর যেকোন মুহুর্তে বাজতে পারে!

অনেক ক্ষেত্রে পুরুষদের মৌলিক কিছু নেতিবাচক চরিত্র যেমন- নেশা করা, অযাচিত লাইফ স্টাইল, জুয়া খেলা, পর নারীদের প্রতি আসক্তি, স্ত্রীকে অকারণে শারিরীক ও মানসিক টর্চার ইত্যাদি খারাপ অভ্যাসগুলোর দরুন সংসারে ডিভোর্স নামক অনাকাঙ্ক্ষিত সিঁড়িতে পা রাখতে হয়। এক্ষেত্রে একটা নারী বস্তুনিষ্ঠ চিন্তাভাবনার চূড়ান্ত পর্যায়ে নিজের সুখ শান্তির কথা বিবেচনা করে সেপারেশন করতে পারে। সেটা সামাজিক ও ইসলাম সহ প্রায় সকল ধর্ম কর্তৃক অনুমোদিত। এক্ষেত্রে যেসব নারীরা স্বাবলম্বী নন তারা নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে শেষ পরিস্থিতি পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়ে যান। তাদের লক্ষ্য থাকে যে, ভালোবাসা কিংবা অন্যকোনভাবে বিপথগামী স্বামীকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পারে কিনা। একটা পর্যায়ে ব্যর্থ হলে তবে সেপারেশন এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ যোক্তিক ও আবশ্যিক!

কিন্তু যেসব নারীরা স্বাবলম্বী তারা সাত পাঁচ না ভেবেই চূড়ান্ত ডির্ভোর্সের পর্যায়ে চলে যায়। এতে করে সামাজিক বন্ধনগুলোর ভাঙ্গণের পরিসংখ্যান সেকেন্ডে সেকেন্ডে বেড়েই চলছে!
বিশেষতঃ স্বাবলম্বী নারীরা সেপারেশনে গেলে তার অনুগামী স্বজাতীয় নারীরা বাহবা দিতে থাকে এবং নতুন করে জীবন গড়ার সাহস যোগাতে থাকে। এ ধরণের মানসিকতাকে আমি ভীষণভাবে ঘেন্না করি! তারা নিজেরা যেমন অন্যদেরকেও সেপদে পথ দেখায়! অথচ একটা সংসার জীবনে জন্ম নেয়া অবুঝ বাচ্চাগুলোর ভবিষ্যতের কথা তারা কখনো ভেবে দেখেনা!

আমি বলছিনা ডিভোর্স দেয়া যাবেনা। অবশ্যই যোক্তিক কারণ থাকলে এবং যেহেতু ধর্মীয় বিধান রয়েছে, তাই প্রাসঙ্গিক কারণে ডিভোর্স দেয়া যেতেই পারে। তাই বলে নিজেরা স্বাবলম্বী বলে বা সক্ষমতার দাপটে হুট করেই ডিভোর্স সামাজিক অবক্ষয়ের তীর্থ কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে!

যে মানুষটার সাথে সত্যিই আর চলছেনা বা সংক্ষিপ্ত দুনিয়ার জীবন অতিষ্ঠ; সেখানে সে মানুষটার সাথে সম্পর্কটা চুকিয়ে সম্ভব হলে মনের মতো ভাল কাউকে জীবন সঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করা যোক্তিক। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে সামাজিক হীন কার্যকলাপগুলো জমাট বাঁধতে পারেনা।

বেশকিছুদিন আগে আমি এক স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম- ” সমোঝোতার মাধ্যমে ব্যবসায়িক চুক্তি করা যায় কিন্তু কোনো সম্পর্ক, সংসার বা দাম্পত্য নয়”
অপর একটি স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম- “প্রয়োজনে পরিবর্তন আনো, হোক সেটা পেশা কিংবা দাম্পত্যে”

কথা দুটোর মর্মার্থ অনেক গভীরের। তাই এ পথে আগালেও মানুষ আর যাই হোক, ঠকবেনা জীবনে।

প্রসঙ্গতঃ ছোট পর্দার অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব প্রথমে অভিনেত্রী প্রভাকে ভালোবেসে বিয়ে করে। কিছুদিন যেতে না যেতেই প্রভা’র কথিত প্রেমিকের সাথে শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও ফুটেজ ভাইরাল হলে সেই সম্পর্কের ইতি টেনে দেয় অপূর্ব। এরপর ২০১১ সালে পুনারায় নাজিয়া হাসান অদিতিকে বিয়ে করে। দীর্ঘ ৯ বছরের সংসারে এক ছেলের জন্ম নেয়।

উল্লেখ নাজিয়া ব্যক্তিগতভাবে স্বাবলম্বী মানে একজন উদ্যোক্তা। জানা যায়, বেশকিছু দিন থেকে অপূর্বকে সন্দেহ করে আসছিল নাজিয়া। মিডিয়ায় অপূর্বের কিছু নারী কো-আর্টিস্টদের সাথে অপূর্বের অনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে মর্মে সন্দেহ প্রবণ হয়ে উভয়ের মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়!

মূলতঃ অপূর্ব নাজিয়াকে বিভিন্নভাবে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে আসছিল। অবশেষে নাজিয়া ডিভোর্সের সিদ্ধান্তে অটল থেকে সেপারেশনে চলে যায়!

সেপারেশনে যেতে না যেতেই নাজিয়া তার ফেসবুক একাউন্টের রিলেশন স্ট্যাটাস পরিবর্তন করে লিখেন “Divorced” এবং টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাস দেন যাতে লিখেছেন “Stop calling me bhabi everyone”…

খুব সহজেই এসব করতে পেরেছেন নাজিয়া! কিন্তু অপূর্ব কি করছে আমার এখনো নজরে পড়েনাই…

অপরদিকে সন্ধ্যের পর আরেকটি স্ট্যাটাসে অপূর্ব সম্পর্কে ইতিবাচক কিছু কথা সম্বলিত বেশ কিছু কথা লিখেন নাজিয়া। যেটাতে তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সাংবাদিকদের মনগড়া লেখালেখি না করা ও উক্ত বিষয় নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য অনুরোধও করেন।

উক্ত শেষ স্ট্যাটাসের নীচে কমেন্টগুলো পড়ে আমি হতবাক হয়ে পড়ি! প্রায় যতগুলো কমেন্ট এসেছে তার মধ্যে ৮০% নারী এবং তারা প্রায় ৯৫% ই নাজিয়াকে ডিভোর্সের স্বপক্ষে সমর্থন দিয়েছেন! দুই একজন আফসোসও করেছেন ঐ পোস্টে….

নাজিয়ার উক্ত স্ট্যাটাসে কমেন্টকারী নারীরা সদ্য ডিভোর্সের পর যেভাবে উৎসাহ দিলেন, তাতে আমি ভীষণ মর্মাহত!!! ?
ভাবছি, ওসব নারীদের চরিত্র কোথায়?

লেখক : রুদ্র তমাল(ছদ্মনাম), নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুরুষ।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/২:৪২পিএম/১৮/৫/২০২০ইং)