শেখ মো: ফায়েকুজ্জামান : প্রতিষ্ঠার ৭২ বছর পর পিছনে ফিরে তাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাফল্য আর গৌরবের পাল্লাই ভারী দেখাবে তাতে সন্দেহ নেই, কিন্তু সেই গৌরব আর অর্জনকে পেছনে ফেলে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ বিতর্কের জন্ম দিয়ে সরকার ও দল হিসেবে আওয়ামীলীগকে বেশ বিব্রত করেছে জাতির পিতার হাতে গড়ে উঠা এই সংগঠনটি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্মের পর থেকে আজ অবধি গৌরবময় ঐতিহ্য ধারণ করেই সোনালি আগামীর লক্ষ্যে এই সংগঠনের পথচলা। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলা এবং বাঙালির ছয় দশকের ও বেশি সংগ্রামের ইতিহাসের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জুড়ে আছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
বাংলাদেশের অভ্যুদয় এর ইতিহাস আর ঐতিহ্যের গর্বিত অংশীদার এই ছাত্র সংগঠনটি। বাঙালি জাতির ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায় ও অর্জনে রয়েছে ছাত্রলীগের প্রত্যক্ষ ভূমিকা। বাঙালি জাতি হিসেবে জন্ম গ্রহনের আঁতুড় ঘর থেকে আজ অবধি স্বাধীনতা, সংগ্রাম আর শিক্ষার নিশ্চয়তায় ছাত্র সমাজের অধিকারের অতন্ত্র প্রহরী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। ইতোমধ্যে ছাত্রলীগের পথচলায় বায়ান্ন এসেছে, ৬২ এসেছে, ৬৬, ৬৯, ৭০-এর পথ ধরে এসেছে একাত্তর। এই সংগঠনটির প্রায় সতের হাজার নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ যুক্ত হয়েছে আমাদের মহান স্বাধীনতার ইতিহাসে।
ছাত্রলীগ সম্পর্কে গর্ব করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে ছিলেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের যথার্থতার প্রমাণ মেলে সংগঠনটির স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের দিকে চোখ রাখলে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিটি ন্যায্য আন্দোলন-সংগ্রামের সম্মুখ সমরের যোদ্ধা ছিল ছাত্রলীগ। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে পথ পরিক্রমা পেরিয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং ৯৬ এর তত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনসহ দেশের সব প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সামনের সারিতে থেকে এই সংগঠনের নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এ সব আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদ হয়েছেন সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী। আবার ছাত্রলীগের রাজনীতি করে অনেকেই সম্পৃক্ত হয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে এবং সরকার পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন ছাত্রলীগের অনেক সূর্য সন্তান।
১৯৪৭ সালে বৃটিশ উপনিবেশের শাসনের বেড়াজাল থেকে ছিন্ন হয়ে দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে দেশ বিভাজনের পর বাঙালিরা নতুন ভাবে শোষনের যাতাকলে পিষ্ট হতে থাকে। বৃটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করেও সেই সুফলের স্বাদ পায়নি বাঙালিরা আর এই স্বাধীনতা অর্জনকে শেখ মুজিবুর রহমান বলে ছিলেন এক শকুনির হাত থেকে অন্য শকুনির হাত বদল মাত্র। শেখ মুজিবই প্রথম অনুধাবন করলেন শোষনের কালো দাঁত ভেঙ্গে চুরমার করার একমাত্র হাতিয়ার হল ছাত্র সমাজ। তাই তৎকালীন পাকিস্থান সরকার কতৃক চাপিয়ে দেওয়া উর্দূ ভাষার বিরুদ্ধে ইস্পাত কঠিন প্রতিরোধের দেওয়াল তৈরির জন্য ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি তৎকালীন প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা ওয়ালা ছাত্র নেতা পরবর্তীতে বাঙালি জাতির পিতা, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠা করেন ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ
বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে ওই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে ছাত্রলীগ আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠার এক বছর পর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন এই ছাত্র সংগঠনটির হাত ধরেই তৎকালীন পাকিস্থানের প্রথম বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী মুসলিম লীগের। যা পরে আওয়ামী লীগ নাম ধারণ করে এ দেশের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়। তৎকালীন পাকিস্থান সরকারের শাসন শোষন আর বঞ্চনার প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা ছিল বাঙালি জাতির ইতিহাসে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। জন্মের পর থেকে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে জাতিকে নেতৃত্ব দেওয়া সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জাতীয় রাজনীতিতেও সব সময় সরব ছিলেন।
বর্তমান জাতীয় রাজনীতির অনেক শীর্ষ নেতার রাজনীতিতে হাতে খড়িও ছাত্রলীগ থেকেই। ১৯৪৮ সালেই মাতৃভাষার পক্ষে ছাত্রলীগ আপোষহীন অবস্থান তৈরি করে। ১১ মার্চ ছাত্রলীগ জিন্নাহর ঘোষণার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট পালন করে। ওই ধর্মঘটের পিকেটিং থেকেই গ্রেফতার হন রাজনীতির মাঠের উজ্জ্বল নক্ষত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র, বাঙালির রাজনীতির মহাপুরুষ ছাত্রনেতা শেখ মুজিব ও সহযোগীরা। ছাত্রলীগই প্রথম বাংলা ভাষার জন্য ১০ দফা দাবি নামা পেশ করে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ ও আন্দোলন জোরালো করার ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সকল দলের অংশগ্রহনে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের সেই ঐতিহাসিক বিজয়ের নেপথ্যের কারিগরও ছিলো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ১৯৫৬ সালের বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়, ১৯৫৭ এর শিক্ষক ধর্মঘট এবং ১৯৬২এর শিক্ষা আন্দোলনের পালে ঢেউ তোলার কাজ করে ছাত্রলীগ। ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ খ্যাত ছয় দফা হিসেবে পরিচিত ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলনে রাজপথের প্রথম সারিতে অবস্থান ছিল ছাত্রলীগের। এ সময় ছাত্রদের ১১ দফার মাধ্যমে ছাত্র সমাজের রক্তে তারুণ্যের সঞ্চার করে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নেতৃত্বেই ১৯৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ছাত্রগণ আন্দোলন থেকে ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে রুপ নেয়। গণজাগরনের ১৯৭০এর নির্বাচনে মুক্তির সনদ ছয় দফাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এক দফার দাবিতে রুপ নেয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ১৯৭১ সালে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত আর দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলার আকাশে লাল সবুজের পতাকায় বাংলাদেশ নামক এক নতুন রাষ্ট্রের সূর্যোদয় হয়। মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন পরিসংখ্যানের হিসেব মতে বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে গড়ে তোলা বিশ্বের বৃহৎ ও সংগ্রামী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আত্মত্যাগী নেতা-কর্মীদের সংখ্যা ছিল ১৭০০০ (সতের হাজার)। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জয়লাভের পর সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশের পূনগঠনের সংগ্রামেও ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই বাঙালির জীবনে আবার অন্ধকার নেমে আসে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির পিতা ও জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার পর। সামরিক শাসক(স্বৈরশাসক) মেজর জিয়াউর রহমান ছাত্রলীগের উপর অনেক দমন-পীড়ন চালিয়ে শেষ করতে চাইলেও আদর্শের এই সংগঠন বুক চিতিয়ে তা মোকাবেলা করেছে, সামরিক শাসক(স্বৈরশাসক) হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বিপক্ষে রাজপথে জোরালো ভূমিকা রেখে ১৯৯০ এর গন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের নেতৃত্বে ছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
১৯৯৬ এ বিএনপির অন্যায়-অত্যাচার আর দমন-পীড়নের বিপক্ষে এবং তত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে শেখ হাসিনার ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভ্যান গার্ডের দায়িত্ব পালন করেছে। দীর্ঘ ২১ বছরের নিপীড়ন এর পর ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী উপমহাদেশের সর্ব বৃহৎ ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার দেশ পরিচালনায় ফিরিয়ে আনতে সব চাইতে বেশি অবদান এই ছাত্রলীগের। ১৯৯৮ সালের বন্যা মোকাবেলায় ছাত্রলীগের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। এছাড়াও ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের বেতন বৃদ্ধির প্রতিবাদ-আন্দোলনে ছাত্রলীগ ছিল আপোসহীন। নিরক্ষরতা মুক্ত ও পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ বির্নিমাণ এবং বৃক্ষরোপনের মধ্যেমে বিশ্বের উষ্ণায়ন কমাতে প্রতিটি জেলায় জেলায় কাজ করেছে ছাত্রলীগ। ২০০১ এর নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিএনপি-জামাত জোটের সহিংসতা এবং দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক নির্যাতনের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ প্রতিরোধ গড়ে তুলে অনেক নেতা-কর্মীদের হারিয়েছে। বিএনপি-জামাত জোটের ২০০৬ সালের নীল নক্সার নির্বাচন প্রতিহত করা এবং ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই মইন উদ্দিন-ফকরুদ্দিনের তথাকথিত তত্বাবধায়ক সরকার বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সামরিক কায়দায় আটকের পর সামরিক বাহিনীর রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে রাজপথে প্রথম প্রতিবাদ রচনা করেছিল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের বর্তমান হালচাল : বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এ দেশের ছাত্র-গণআন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাসের এক গর্বিত অংশীদার এ বিষয়ে কোন বিতর্ক নেই বিতর্ক থাকার প্রশ্নই আসেনা। ছাত্রলীগের এই ইতিহাস কেউ অস্বীকারও করবেনা। সম্ভবত এখন আর বিতর্ক নেই যে সেটা ইতিহাসই। ছাত্রলীগের বর্তমান নিয়ে গৌরব বা গর্ব করার উপায় আছে কি? ঐতিহ্যের কারনেই একশ্রেণির নেতা-কর্মীর সাম্প্রতিক কিছু কর্মকান্ডে কঠোর সমালোচনার মুখে ঠেলে দিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে দীর্ঘ যাত্রাপথের এই প্রান্তে এসে বর্তমান ছাত্রলীগ কি পথভ্রষ্ট হয়ে গেল। অনেকেই বলেছেন বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগের ইতিহাস অনেকটাই ¤øান হয়েছে সাম্প্রতিক কর্মকান্ডে। জাতির আবেগ ভালোবাসা, শ্রদ্ধা আর গৌরবের প্রকাশ ঘটত যে ছাত্রলীগ নিয়ে, সংগঠনটির সেই মর্যাদা এখনও অটুট আছে কি না এমন গুুেতর প্রশ্ন করেছেন অনেকেই। এমনকি আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের অনেক শীর্ষ নেতাও ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে কখনও কখনও উম্মা প্রকাশ করেছেন। কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন এবং ভাবমূর্তি রক্ষায় দিয়েছেন বিভিন্ন দিক নির্দেশনাও।
ঐতিহ্যার ধারক ও এ দেশের ছাত্র আন্দোলনের পুরোধা বাংলাদেশ ছাত্রলীগে এখন পথ হারিয়েছে বিভিন্ন কারনে। ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করতে মরিয়া হয়ে উঠে অনেক চক্র যারা বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগকে নিজেদের প্রয়োজনে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে আবার বিপদ আসলে ছাত্রলীগকে ঠেলে দিয়েছে সামনে। বর্তমান ছাত্রলীগে মূলত ৩ প্রকার ছাত্রদের দেখা যায় সবাই একই সংগঠনের হলেও আচরণ-ব্যবহার-আদর্শ আর নেতৃত্ব প্রকাশ ভঙ্গিমায় এই ভিন্নতা স্পষ্টত প্রকাশ পায়।
প্রথমত, ছাত্রলীগকে মনে-প্রানে ধারন করে এমন এক শ্রেণির ছাত্র আছে যারা ছাত্র রাজনীতি করে মানুষের কল্যাণে। এরা মূলত বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ ও লালন করে। কমিটি গঠন ও পদ-পদবী প্রাপ্তিতে এরা সব সময়ই পিছনের সারিতে থাকে। দল ক্ষমতায় থাকলে এরা অবহেলিত থাকে, লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে এরা একেবারেই আনকোরা। হাইব্রিড আর নব্যদের দাপটে এরা এতটাই কোণঠাসা যে মিছিল-মিটিং এর সুযোগ পর্যন্ত তেমন পায়না আর সরকারী সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা তো চিন্তাই করা যায়না। দল হিসেবে আওয়ামীলীগ যখন বিরোধী দলে থাকে বা জাতীয় ও রাজনৈতিক ইস্যুতে দল বিপদে পড়ে তখন এদেরকে ব্যবহার করা হয়। ছাত্রলীগ এদের কাছে আবেগ, অনুভূতি আর ভালবাসার সংগঠন।
দ্বিতীয়ত, অন্যদল বা অমুক-তমুক বড় ভাইদের হাত ধরে দাপটের সাথে দলে থাকে বাগিয়ে নেয় পদ-পদবী আর অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা। এরাই মূলত হাইব্রিড বা নব্য বলে পরিচিত কিন্তু দলে শক্ত খুটির জোরে ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে ফায়দা নেয়। বর্তমানে ছাত্রলীগে এই সব ভাইদের লোকই বেশি। আর এরা দল ও সমাজে এতই প্রভাব বিস্তার করে আছে যে এরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ছাত্রলীগ নামক পবিত্র সংগঠনকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির কাজটা এরা খুব ভাল ভাবেই করতে পারে। দল বিপদে পড়লে এরা গর্তে লুকিয়ে পড়ে আবার অনেক সময় ভোল পাল্টাতেও দ্বিধাবোধ করেনা। মুশকিল হল এরাই ইদানিংকার সময়ে দলের চালিকা শক্তিতে থাকে বিভিন্ন ভাবে ও বিভিন্ন উপায়ে।
তৃতীয়ত স্বার্থান্ধ একটা শ্রেণি যারা নিজেদের যোগ্যতা আর প্রাপ্তির মিল খুঁজে না পেয়ে তাদের থেকে যোগ্য আর ত্যাগীদেরকে বিভিন্ন নামে ট্যাগ লাগানোর রাজনীতি করে। এদের অনেক কে রাজপথে খুঁজে পাওয়া না গেলেও অন্যের সমালোচনা আর সোজা রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরিতে এরা খুব অভ্যস্ত। দলকে বিতর্কিত ও বিব্রত করতে এরা যে কোন কিছুই করতে পারে। আওয়ামীলীগের রাজনীতিকে বিভক্ত করতে এরাই যথেষ্ট।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যে আবেগ-ভালবাসা আর অনুভূতির জায়গা দখল করে আছে এ দেশের মানুষের মাঝে সেই ভালবাসাই হতে পারে ছাত্রলীগের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধাদের বড় হাতিয়ার। ছাত্রলীগ এখন অনেক জায়গাতেই ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত ১১/১২ বছর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকা সত্তেও ছাত্রলীগ তার আদর্শিক জায়গা থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। আজ অনেকেই ছাত্রলীগকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে অনেক ছাত্র। ছাত্রলীগের সাথে অন্য যে কোন দলের লড়াই রাজপথে হবে কেন? ছাত্রলীগের অন্যের লড়াই হবে আদর্শের। ছাত্রলীগ বানের জলে ভেসে আসা কোন দল নয়, আন্দোলন-সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষার শক্ত ভূমির উপর শক্তভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। তবে আজকাল জুজুর ভয়ে কাতর হওয়া একশ্রেণির নেতা-কর্মীর মুখে আবোল তাবোল কথা শুনে মনে হয় যে হ্যাঁ ছাত্রলীগে হুড়মুড় করে বেনোজল ঢুকে পড়েছে। তাই আসছে প্রজন্ম ও তরুন সমাজকে আহবান জানাই ১৯৪৮ থেকে ২০১৯ অবধি ছাত্রলীগের ত্যাগ,সংগ্রাম ও ঐতিহ্যের গৌরবজনক দিকগুলো ধারন করে আগামী দিনের রাষ্ট্র পরিচালনার সহায়ক শক্তি হিসেবে দেশ ও জাতিকে সেবা দিয়ে যাবে।
পরিশেষে সকল ছাত্রদের নতুন বছরের শুভেচ্ছা ও চিরকাল অব্যাহত থাকুক ছাত্রলীগের পথচলা এই প্রত্যাশা। হারানো ইমেজকে পুনরুদ্ধার করার একমাত্র পথ হল বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শের ছাত্রলীগকে ফিরিয়ে আনা। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তার সেই হারানো ইমেজ ফিরে পাক সেই প্রত্যাশায়।
লেখক : শেখ মোঃ ফায়েকুজ্জামান
সহকারী অধ্যাপক, এআইএস বিভাগ,
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
আপনার মতামত লিখুন :