• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০২:২৩ পূর্বাহ্ন

চীনে কেনো জনপ্রিয় শেষকৃত্যে নারীর নগ্ন নৃত্য?


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ২২, ২০১৮, ১২:১৬ PM / ৪৩
চীনে কেনো জনপ্রিয় শেষকৃত্যে নারীর নগ্ন নৃত্য?

 

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ঢাকা : চীনের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোয় মানুষ মারা গেলে স্বজনেরা শেষকৃত্যের আয়োজন করে থাকেন। কিন্তু সেই আয়োজনে এমন সব আনুষ্ঠানিকতা থাকে যা নিয়ে প্রচুর বিতর্কও রয়েছে। সাধারণত পরলোকগত প্রিয় মানুষটির বিদেহী আত্মার মুক্তির স্বার্থে নগ্ন নৃত্যের আয়োজন করে থাকেন স্বজনেরা। তাদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে আত্মার ভালো গতি হবে। কিন্তু এমন নগ্ন চর্চায় দেশটির খোদ সরকারই এর বিরুদ্ধে। কিন্তু মানুষের অন্ধ বিশ্বাসের কারণে আজও তা লোপ করা সম্ভব হয়নি।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল বুধবার এক প্রতিবেদনে জানায়, চীনের মূলত ৪টি প্রদেশে এমন নগ্ন সংগীত ও নৃত্যের আয়োজন করে থাকেন মৃতের স্বজনেরা। সেগুলো হচ্ছে হেনান, আনহুই, জিয়াংশু এবং হেবেই।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় চার প্রদেশের লজ্জাজনক অন্ধ কুসংস্কারের কথা তুলে ধরে। এমন নগ্ন সংস্কৃতির চর্চা বন্ধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলেও জানানো হয়। কিন্তু পরিমাণ কমে গেছে দাবি করা হলেও এই চর্চা এখনও চলছে চীনের প্রত্যন্ত এলাকায়।

শতাধিক বছর ধরে চীনের মানুষ ঐতিহ্যগত ভাবে শেষ কৃত্যের সময় নানা অনুষ্ঠান করে থাকে। তবে সেই আচারে নগ্নতার স্থান ছিল না। কিন্তু চীনের সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস বলছে, ১৯৯০ সালের দিকে শেষকৃত্যে নারীর আবেদনময়ী শরীরের ব্যবহারের চল দেখতে পাওয়া যায়। ক্রমেই যা জনপ্রিয়তা হতে থাকে।

দেখা গেছে, শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজনদের ডেকেও পাওয়া যায় না। কিন্তু মোহময়ী নারীর নগ্ন নৃত্যের ব্যবস্থা করলে বেশ সাড়া পাওয়া যায়। ফলে এমন সংস্কৃতির পেছনে এটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ।

ভাড়ায় আসা নারীরা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুষ্ঠানে নাচ গানের মাঝে একপর্যায়ে দেহের পোশাক খুলতে থাকে। একপর্যায়ে তারা অর্ধ নগ্ন কিংবা পুরোপুরি নগ্ন হয়ে যায়। এতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া স্বজনেরা বিনোদন পায়। আর তাতে নাকি বিদেহী আত্মার শান্তি নিশ্চিত হয়!

যারা ভাড়ায় এমন নৃত্য করে থাকেন, তাদের উপার্জনও অবশ্য কম হয় না। প্রতিবেদনে বলা হয়, একজন শিল্পী অনুষ্ঠান প্রতি গড়ে দুই হাজার ইয়েন অর্থাৎ প্রায় ২৭ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। মাসে অনুষ্ঠানও করে থাকেন ২০ থেকে ৩০টির মতো।

শিনহুয়া বার্তা সংস্থার ২০০৫ সালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এই ধরনের অনুষ্ঠান বন্ধ করতে গিয়ে চীনের প্রশাসন ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিয়েছিল। অবশ্য সম্প্রতি এর লাগাম টানতে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। প্রচুর আটক এবং শাস্তির ঘটনাও ঘটেছে। যদিও এই চর্চায় ছেদ পড়েছে বলে মনে হচ্ছে না। বরং ফুলে ফেঁপেই উঠছে শেষকৃত্যে নগ্ন নৃত্যের সংস্কৃতি!

শুধু চীনেই নয়, সমালোচনা থাকলেও তাইওয়ানেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই নগ্ন নৃত্য। এই বিষয়ে মার্ক মস্কোউইচ নামের মার্কিন এক নৃতত্ববিদ ২০১১ সালে ‘মৃতের সঙ্গে নাচ’ (Dancing for the Dead) নামে এক প্রামাণ্যচিত্রও নির্মাণ করেন। অবশ্য ১৯৮০ সালের দিকেই তাইওয়ানের মানুষের মধ্যে এমন নৃত্যের প্রতি দুর্বলতা চোখে পড়েছিল স্থানীয় গণমাধ্যমের।

চীনের এককাঠি সরেস তাইওয়ানের জনগণ মৃত্যের শেষ অনুষ্ঠানে শুধু নগ্ন নৃত্যের আয়োজনই করে না, সড়কে বিশাল শোভাযাত্রার আয়োজনও করে থাকে। এমন আয়োজনের পেছনে নাকি মৃতের নারী স্বজনদেরই আগ্রহ থাকে সবচেয়ে বেশি!

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/কেএস/১২:১০পিএম/২২/২/২০১৮ইং)