• ঢাকা
  • বুধবার, ২৯ মে ২০২৪, ০৭:৩৫ অপরাহ্ন

চাল আমদানির শুল্ক তুলে নেওয়ার উদ্যোগ : এনবিআর


প্রকাশের সময় : মে ৫, ২০১৭, ৯:১১ AM / ৯৭
চাল আমদানির শুল্ক তুলে নেওয়ার উদ্যোগ : এনবিআর

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

 চাল আমদানির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই আমদানি শুল্ক তুলে নেওয়ার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে অনুরোধ করা হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর)। তবে পুরো শুল্ক নাকি আংশিক প্রত্যাহার করা হবে সেটি চূড়ান্ত হবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাপান থেকে দেশে ফিরলে। বর্তমানে চাল আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক রয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চালের বাজারে সৃষ্ট অস্থিরতার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এনবিআরকে দেওয়া এক চিঠিতে ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি’ নিয়ন্ত্রণে আনতে চাল আমদানিতে আরোপিত শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

সূত্র মতে, এর আগে খাদ্য অধিদপ্তর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু পরে সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনা করে পুরো শুল্কই তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করে খাদ্য অধিদপ্তর।

কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজির কথা তুলে ধরে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চাল আমদানি হলে ব্যবসায়ীরা এই অসৎ তৎপরতা চালাতে পারবে না। তাই চাল আমদানির অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি সরকারের বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী  বলেন, ‘সরকার চাল আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। শুধু হাওরের বোরো নষ্ট হলে হয়তো আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করতে হতো না। হাওরের পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলের কিছু ফসলও নষ্ট হয়েছে অতিবৃষ্টিতে। এখনো সব অঞ্চলের ফসল কাটা শুরু হয়নি। কৃষকের স্বার্থসহ সব কিছু পর্যালোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ’

চালের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করার দাবি তোলা হয়েছে বাংলাদেশ চালকল মালিক সমিতির পক্ষ থেকেও। গতকাল খাদ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এক বৈঠকে এ দাবি জানানো হয়।

চালকল মালিকদের সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তরের ওই বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, দেশে বর্তমানে চালের কোনো সংকট নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী হাওরে ফসলহানির সুযোগ নিয়ে কৃত্রিমভাবে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। চালকল মালিকদের পক্ষ থেকে মন্ত্রণালয়ের কাছে মজুদ সম্পর্কে যে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে, এতে দেখা গেছে, তাদের কাছে তেমন মজুদ নেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এসব কাজ করছে।

অসাধু ব্যবসায়ীদের এই তৎপরতা রোধে খাদ্য মন্ত্রণালয় কী করছে এমন প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, এটা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। তারাই বিষয়টি তদারকি করছে।

দেশে খাদ্যসংকট না থাকা সত্ত্বেও কেন চাল আমদানির প্রশ্ন উঠছে জানতে চাইলে কামরুল ইসলাম বলেন, চাল আমদানি হলে ব্যবসায়ীরা এই অসৎ তৎপরতা চালাতে পারবে না।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এ সংকটকে (হাওরে ধান নষ্ট হওয়া) পুঁজি করে আমাদের অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারটাকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। তাই ১০-১৫ লাখ টনের মতো চাল যদি আবার দেশে আসে তাহলে তারা আর সমস্যা করতে পারবে না। তখন যারা এই সংকট তৈরি করতে চাচ্ছে তারা পিছটান দেবে। বাজারটাকে আর তারা গরম করতে পারবে না। ’ চাল আমদানির সুযোগ পাওয়ার জন্যই ব্যবসায়ীরা সংকট তৈরি করছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘হতে পারে। কারণ কিছু ব্যবসায়ী সব সময়েই বসে থাকে এ রকম সংকটকালে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করার জন্য। ’

সংবাদ সম্মেলনে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বদরুল হাসান এবং চালকল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

মিলাররাও দুষছেন ব্যবসায়ীদের : চাল আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের দাবি ছিল চালকল মালিক সমিতির। সেই মিল মালিকরাই আবার আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করতে বলছেন। গতকাল খাদ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক কে এম লায়েক আলী বলেন, ‘আগে আমরা বলেছিলাম চাল আমদানিতে ট্যাক্স ধার্য করার জন্য। আজ জনসাধারণের স্বার্থে মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় আনতে যদি সে ট্যাক্স প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে আমদানি করে এনে পুষিয়ে নেওয়া যাবে। ’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো মিলারের কাছে স্টক নেই, মিল থেকে রিটেইলার পর্যন্ত গিয়ে চার-পাঁচ টাকা বেশি হয়। এখন যদি কেউ মজুদ করে থাকে, তা অসাধু ব্যবসায়ী করতে পারে। ’

বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থা : জানা যায়, এনবিআরকে দেওয়া খাদ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, গত কয়েক বছরে ধানের বাম্পার ফলনের কারণে বাংলাদেশ চালের ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়। এতে চালের মূল্য কমতে থাকে। এ পরিস্থিতিতে কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে দেশে চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করা হয়। এর অংশ হিসেবে সরকার চাল আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক আরোপ করে। এতে চালের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে গিয়ে স্থিতিশীল হয়। কিন্তু চলতি বছর হাওর এলাকায় পাহাড়ি ঢল এবং অকাল ভারি বর্ষণে কিশোরগঞ্জ নেত্রকোনাসহ হাওর অঞ্চলে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অতিবৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, ঝড় এবং নিচু এলাকার ফসল ডুবিসহ নানা কারণে টার্গেট অনুযায়ী বোরো ফসল ঘরে তোলার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে উত্তরবঙ্গ ছাড়া দেশের সর্বত্র বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। এ সময় চালের দাম কমার কথা থাকলেও চলতি বছর কিছুটা ভিন্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বোরো ধান ক্ষতির সুযোগে চালের দাম বেড়ে বাজারে অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঝড় ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় ফসলের গুণগত মান ও পরিমাণ নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ফসলের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত খবর ও আলোচনায় এ পরিস্থিতি প্রতিকূলতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

চিঠিতে বাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাল আমদানিতে আরোপিত শুল্ক সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

শুল্ক প্রত্যাহারে সুপারিশ কেন করা হয়েছে জানতে চাইলে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা  বলেন, হাওরের ক্ষতিকে পুঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা চালের বাজার অস্থিতিশীল করছে। তাদের কারসাজির কারণেই চালের দাম বাড়ছে। এ ছাড়া মানুষের মজুদপ্রবণতাও বেড়েছে। যার পাঁচ কেজির প্রয়োজন সে ২০ কেজি মজুদ করছে। এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতেই চাল আমদানি শুল্কমুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে চালের আমদানি শুল্ক হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। এর সঙ্গে ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি যোগ হওয়ার পর আমদানি শুল্ক দাঁড়ায় ২৮ শতাংশে। এতে গত দেড় বছরে চাল আমদানি অনেকটাই বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীরা শুল্ক কমানোর জন্য দাবি জানালেও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হয়নি।

এদিকে গতকাল ঢাকার পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, চালের দাম বাড়তির দিকে। কিছু চালের সংকটও তৈরি হয়েছে। কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা কামাল হোসেন জানান, স্বর্ণা (গুটি) বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৩ টাকা, বিআর-২৮ ৪৮ টাকা, মিনিকেট ৫০-৫৪ টাকা, নাজিরশাইল ৪৬-৫৬ টাকা, পাইজাম ৪৫-৪৬ টাকায়। খুচরা বাজারে আরো এক-দুই টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ওই বিক্রেতা বলেন, গুটি স্বর্ণা, বিআর-২৮ এবং পাইজাম চালের খুব সংকট তৈরি হয়েছে। এগুলো এখন পাওয়া যাচ্ছে খুবই সামান্য পরিমাণে।

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০৯.০৭এএম/০৫//২০১৭ইং)