• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন

ঘর, নিজের একটা ঘর………


প্রকাশের সময় : মার্চ ৯, ২০১৯, ৯:২৩ AM / ৩২
ঘর, নিজের একটা ঘর………

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : অনেকেই বলে- আমি নাকি সমাজের সাকসেসফুল নারীদের একজন। কিন্তু না, কোনোভাবেই তা মনে করিনা আমি। যেদিন নিজেই নিজের জন্য একটি ঘর তৈরি করতে পারব, সেদিনই নিজেকে পুরোপুরি সাকসেসফুল মনে হবে। যে ঘরে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারব আমি নারী। নিজের বাবার কত আছে, স্বামীর বাবার কত আছে তা আমাকে কখনোই টানেনি, টানবেও না কখনো। শুধু নিজের জন্য একটা নিরাপদ ঘর চাই। যে ঘরটা কেবলই আমার বলে দাবি করতে পারব। আমি আজো ভুলতে পারিনি- সাংবাদিকতা করতে যেয়ে রাত করে বাড়ি ফিরতে হয় বলে একদিন বাবা জেদ করে বাড়ির গেটটি আর খুলেন নি। অনেক রাত অবধি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থেকে শেষে অজানার উদ্দেশ্যে ছুটতে বাধ্য করেছিল পরিস্থিতি আমায়। কত কি নোংরা/অঘটন ঘটতে চেয়েছিল সেদিন এই আমার সাথে! সেসব কিছু ভাবলে আজো গা শিউড়ে উঠে। শেষে ছোট খালার কুঁড়ে ঘরে গিয়ে উঠেছিলাম, অন্তত সমাজ যেনো ঘরহীনা যুবতী নারী আখ্যা দিয়ে বাঁকা চোখে না তাকায় এই ভেবে। শুধু ভবিষ্যৎ সুখী সুন্দর জীবনের লোভে সেদিন নিজেকে নষ্ট হওয়া থেকে কত কষ্টে যে শুদ্ধ রেখেছিলাম তা কেবল আমিই জানি।

জীবনের আরেকটা সময় নিজ শহরের সমস্ত চাকচিক্য ছেড়ে যখন স্বামীর বাবার বাড়িতে গেলাম আপন একটা ঘর হবে ভেবে, সেদিনও নিজের সমস্ত কিছু দিয়ে সে বাড়ির সবক’টা ঘর সাজিয়ে দেয়ার পরেও শুধু স্বস্তির নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য নিজের একটা ঘর নিজের বলে দাবি করতে পারিনি। যে ঘরটাতে ঢুকলেই ঘোমটা টা খুলে যেমন ইচ্ছে তেমন থাকা যায়, যে ঘরটাকে নিজের পছন্দের ছবিগুলো দিয়ে, পছন্দের আসবাবগুলো দিয়ে সাজানো যায়। যে ঘরটাতে আমি কিভাবে হাটলাম, কিভাবে বসলাম তা নিয়ে কারো কোনো কমপ্লিন থাকবে না। কিন্তু পাইনি। ঝগড়ার ছলে একদিন সাহেব জেদের বশে ও ঘরটা থেকেও টেনে হেচরে বের করে দিয়েছিল আমায়, আর বলেছিল- ‘বের হ আমার ঘর থেকে’। এরপর একটা সময় বাবার সাথে সম্পর্কটা যেমন ঠিক হয়ে গেলো, তেমনি পরের ঘটনায়ও সাহেব আর আমি এবং তার পরিবার সবাই আমরা ভাল সম্পর্কের মধ্যদিয়েই যাচ্ছি। কিন্তু জীবনের ২টি পর্যায়ে থাকাবস্থায় এই ২টি অভিজ্ঞতা আমাকে সারা জীবনের জন্য শিক্ষা দিয়েছে যে- নারীর জন্য বাবা কিংবা শশুর কারো ঘরই তার নিজের ঘর হতে পারেনা। তাই প্রতিটা নারীরই উচিত জীবনে উপার্জন করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি নিজের জন্য একটা ঘর বানানো। যে ঘরটার মালিক কেবলই ওই নারী হবেন। যে ঘরটা থেকে চাইলেই যে কেউ তাকে বের করে দিতে পারবে না। জানিনা কবে হবে আমার নিজের এমন একটা ঘর। অসৎ উপায়ে কোনোদিন কিছু পাবার চেষ্টা করিনি, করতে পারবওনা কোনোদিন। আর তাই আমার ঘরটা হয়ত একটু দেরিতেই হবে, কিন্তু ঘর একটা আমার নিজের হবেই। আমরা যারা স্ব স্ব পেশায় কাজ করে আর্থিকভাবে স্বয়ং সম্পূর্ণ নারী, তারাও আজীবন নিজের কস্টার্জিত অর্থে এককালে বাবার ঘর সাজাই, আরেককালে স্বামীর ঘর সাজাই। আসবাবপত্র থেকে শুরু করে ঘরগুলোর চারপাশটাতেই থাকে কেবল আমাদের স্পর্শ, আমাদের ঘামের মজুরির অর্থ। অথচ পান থেকে চুন খসলেই এই ঘরগুলো থেকেই আমাদের বের করে দেয়া হয় যখন তখন। গলা উঁচিয়ে ঘরের মালিকেরা বলে দেন- ‘আমার ঘর থেকে বের হ’। তাই নারীর জন্য নিজের একটা ঘর সত্যিই বড় প্রয়োজন। এখনো অবশ্য নিজের ঘরেই থাকছি, শত ব্যস্ততার মাঝেও স্বস্তির নিঃশ্বাস নিচ্ছি প্রতিটা দিন। তবে এটি ভাড়া করা ঘর আমার।

যেদিন এই শরীর তার কর্মক্ষমতা হারাবে, মাসে মাসে এই ভাড়া করা ঘরের বিল পরিশোধ করতে পারব না, সেদিন হয়ত ঘরের মালিকও আমায় টেনে হেচরে ঘরটা থেকে বের করে দিবে। আর তাইতো এই শরীর তার কর্মক্ষমতা হারাবার আগেই নিজের জন্য একটা ঘর বানাতে চাই।

লেখক : সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৯:২৩এএম/৯/৩/২০১৯ইং)