• ঢাকা
  • সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৭:২৪ পূর্বাহ্ন

গরমে শিশুর যত্ন


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৯, ২০১৯, ৫:১১ PM / ৪১
গরমে শিশুর যত্ন

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : গরমে শিশুরা বড়দের তুলনায় অনেক বেশি ঘামে। এ সময় তাদের মৌসুমজনিত নানারকম সমস্যা দেখা যায়। তাই এসময় শিশুর বাড়তি ও বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। এ সময় তাদের খাওয়া-দাওয়া, গোসল থেকে শুরু করে পোশাক নির্বাচন ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি।

গরমে শিশুদের কিছু সাধারণ অসুখ বিসুখ:

পানিশূন্যতা: গরমে শরীরে অনেক ঘাম হওয়ার ফলে দেহ থেকে প্রয়োজনীয় পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে শিশুদের শরীরে প্রচণ্ড পানিশূন্যতা তৈরি হতে পারে।

জ্বর: যেহেতু গরমের সময় শিশুরা বেশি ঘামে তাই অনেক সময় শরীরের ঘাম বসে গিয়ে তাদের ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। অতিরিক্ত ফ্যানের বাতাস বা এয়ারকুলার চালু রাখলে এসময় তাদের ঠাণ্ডা লেগে জ্বরও হতে পারে।

বমি ও ডায়রিয়া: অনেক সময় বাচ্চারা রাস্তার ধারের অস্বাস্থ্যকর খাবার বাসি ও পচাঁ খাবার অথবা দূষিত পানি দ্বারা তৈরি শরবত খেয়ে থাকে ফলে তাদের বমি ও ডায়রিয়া হতে পারে।

ত্বকে এলার্জি: গরমে শরীর অতিরিক্ত ঘেমে গেলে ত্বকে থাকে লোপকুপগুলো বন্ধ হয়ে সেখানে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘামাচি ও এলার্জি দেখা দিতে পারে।

ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু: গরমের সময় মশার উৎপাতও ভীষণভাবে বেড়ে যায়। মশার কামড়ের ফলে বিভিন্ন মশাবাহিত রোগ যেমন ম্যালেরিয়া ও ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব বেড়ে যেতে পারে এসময়।

হিটস্ট্রোক: অতিরিক্ত গরমে শরীর তাপমাত্রার ব্যালেন্স করতে না পেরে বড়দের মতো শিশুদেরও হিটস্ট্রোক হতে পারে। হিটস্ট্রোক হলে গা অতিরিক্ত গরম হয়ে যায় ও নিঃশ্বাস ঘন হয়ে যায়। সময় মতো ব্যবস্থা না নিলে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটতে পারে।

গরমে বাচচাদের যত্ন নেওয়ার কিছু টিপস:

গরম পরার সাথে সাথে বাচ্চাদের নিয়ে মা বাবার চিন্তার শেষ থাকেনা। কি করলে তাদের সন্তান ভালো থাকবে এ নিয়ে তাদের নানা দুশ্চিন্তা। কয়েকটি নিয়ম কানুন ও স্বাস্থ্যকর পদ্ধতি মানলে এই গরমে সহজেই আপনি আপনার সোনামণির বাচ্চার যত্ন নিতে পারবেন।

নিয়মিত গোসল করানো: গরমের সময় বাচ্চাদের খুব এলার্জির প্রকোপ দেখা দিতে পারে। তাই গোসল করানোর সময় বাচ্চার বগল, গলা,পায়ের হাটুর ভাঁজ ও শরীরের অন্যান্য ভাঁজযুক্ত জায়গা যত্ন সহকারে পরিষ্কার করে দিন। এছাড়া পানিতে কয়েক ফোঁটা ডেটল বা নিম তেল মিশিয়ে বাচ্চাকে গোসল করাতে পারেন। ডেটল বা নিম তেল মিশিয়ে বাচ্চাকে গোসল করালে তাঁর শরীরে থাকা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হবে। ফলে সে জীবাণুর আক্রমণ থেকেও রক্ষা পাবে। এছাড়া হাত পরিষ্কার রাখার জন্য নিয়মিত তার হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এছাড়া গরমের সময় দিনে পাতলা ও সুতি কাপড় ভিজিয়ে বেশ কয়েকবার বাচ্চার গা মুছে দিতে পারেন।

সুতির জামা পরানো: গরমের সময় বাচ্চাকে সুতি জামা পরানো ভালো। এতে শরীরে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে বলে গরমের মধ্যেও সে আরাম বোধ করবে। অতিরিক্ত গরম পড়লে আপনার ছোট বাচ্চাটিকে শুধুমাত্র সুতির প্যান্ট পরিয়ে রাখুন। এ সময় বাচ্চাকে যথাসম্ভব ঘরের বাইরে না নিয়ে যাওয়াই ভালো। বিশেষ করে তীব্র গরমের সময় সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত আপনার শিশুটিকে ঘরেই ঠাণ্ডা আবহাওয়ার মধ্যে রাখার চেষ্টা করুন। একান্তই যদি বাচ্চাকে বাইরে নিয়ে যেতে হলে তাকে একটা বড় ক্যাপ বা ছাতার নিচে রেখে তারপর বাহিরে নিয়ে যান। এছাড়া মুখে সানস্ক্রীন লাগালেও অনেক উপকার পাওয়া যায়।

প্রচুর বিশুদ্ধ পানি ও তরল জাতীয় খাবার খাওয়ানো: বিভিন্ন বয়স ভেদে বাচ্চাদের খাবার দিতে হবে এসময়। বাচ্চার বয়স ৬ মাস পর্যন্ত তাকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ান। বাচ্চাকে এই সময় বুকের দুধ ছাড়া পানি খাওয়ানোর-ও দরকার নেই। গরমে বাচ্চাকে একটু পরপর বুকের দুধ খাওয়ান যাতে সে পানিশূন্যতায় না ভোগে। ৬ মাসের পর তাকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াতে হবে। এসময় পানিশূন্যতা দূর করতে আপনার ছোট সোনামনিকে স্যালাইন পানি, ডাবের পানি, লাচ্ছি, শরবত, ফলের রস দিন। যে পাত্রে আপনার বাবুটি খাওয়াচ্ছেন তা যেন অব্যশই পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত হয়। তাদের কখনোই বাসি ও পচাঁ খাবার দিবেন না। বাইরের খাবার সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলুন। প্রয়োজনে তাকে ঘরেই তৈরি করে দিন বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপযোগী খাবার। তাকে অতিরিক্ত গরম বা ঠাণ্ডা খাবার দিবেন না। এসময় প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার ও ফুটানো পানি পান করতে দিন।

গরমে কসমেটিকের ব্যবহার: গরমে বাচ্চার শরীরে কোনো প্রকার তেল মালিশ করবেন না। বাচ্চার গোসলের সময় মৃদু সাবান ব্যবহার করুন। গোসলের পর তার শরীরে হালকা ট্যালকম পাউডার লাগানো যেতে পারে। শরীরে বেশি পাউডার লাগাবেন না। এতে ঘামের সাথে পাউডার মিশে একাকার হয়ে আপনার বাচ্চাকে অস্বস্তি দিতে পারে।

গরমে বাচ্চার চুল ও নখ কাটা: গরমের সময় আপনার শিশুর চুল কেটে ছোট করে দিন অথবা পারলে মাথা ন্যাড়া করে দিন। এর ফলে সে গরমের সময় অনেক আরামবোধ করবে। বাচ্চার নখ নিয়মিত কেটে ছোট করে দিতে হবে। এতে সে অনেক অসুখ বিসুখ থেকে রক্ষা পাবে।

এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহারের নিয়ম: বাচ্চাকে এয়ার কন্ডিশনযুক্ত রুমে রাখলে একটু জামাকাপড় পরিয়ে রাখুন। এছাড়া এয়ার কন্ডিশনযুক্ত রুমে থাকাকালীন বাচ্চার চুল যাতে ভিজা না থাকে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। রুমের তাপমাত্রা এমন সহনীয় পর্যায়ে রাখুন যাতে বাচ্চার শরীরে মানিয়ে যায়। বাচ্চাকে এয়ারকন্ডিশনার যুক্ত রুম থেকে বের করে সাথে সাথে গরম আবহাওয়ায় নিয়ে যাবেন না। তাই এয়ারকন্ডিশনারটা কিছুক্ষণ বন্ধ করে বাচ্চাকে একটু গরম পরিবেশে অভ্যস্ত করে তবেই বাইরে নিয়ে আসুন। বাচ্চাকে সরাসরি ফ্যানের বাতাসেও রাখবেন না। কোনো জরুরি স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/৫:১০পিএম/৯/৪/২০১৯ইং)