• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ০৭:৫১ অপরাহ্ন

খাদ্য ভান্ডারের পাশা-পাশি চলনবিল এখন ফল ভান্ডার


প্রকাশের সময় : মে ২৪, ২০১৭, ৮:৫৯ PM / ৩৭
খাদ্য ভান্ডারের পাশা-পাশি চলনবিল এখন ফল ভান্ডার

 

শের মোহাম্মদ, গুরুদাসপুর : উত্তরাঞ্চলের খাদ্য ভান্ডার বলে খ্যাত সেই চলনবিল এখন ফল ভান্ডার হিসেবে দেশে স্থান করে নিয়েছে। সুস্বাধু মোজাফফ্র জাতের লিচু মানেই চলনবিলের গুরুদাসপুরের লিচু। দিনাজপুর-ঈশ্বর্দীর বম্বাই, চায়না-৩ লিচুর বাহার শেষ। জৈষ্ঠ্যের মধু মাসের শুরুতেই গুরুদাসপুরের লাল টকটকে রসালো লিচুর এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম কিছুটা কম হলেও জমে উঠেছে স্থায়ী ও অস্থায়ী লিচুর আড়ৎ গুলো। বিশেষ করে মোজাফ্ফর জাতের লিচু ফলনে বাজিমাত করেছে গুরুদাসপুরের লিচু চাষিরা। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, মোজাফ্ফর জাতের লিচু খেতে সুস্বাদু, ফলনে ভাল বাজারে চাহিদাও রয়েছে ব্যাপক। গুরুদাসপুরের বেঁলে দো- আঁশ মাটিতে লিচু আবাদের সম্ভবনাময় দেখে কৃষক মৌসুমী লিচু ফলের আবাদ ক্রমেই প্রসারিত করে চলছেন উপজেলার ফসলী মাঠেও। দেখা-দেখী পাশার্ববর্তী বড়াইগ্রাম, সিংড়া, তাড়াশ. চাটমোহর এর বিস্তার লাভ করতে শুরু করেছে। বলা চলে সাড়া চলনবিল জুড়েই কৃষকরা এখন লিচু বাগানের দিকে ঝুকে পড়েছে। কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের খাদ্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিলের নাটোরের গুরুদাসপুর, বড়াইগ্রাম, সিংড়া, পাবনার চাটমোহর ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় চলতি বছর প্রায় ৯’শ থেকে ১ হাজার হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ করা হয়েছে। শুধুমাত্র গুরুদাসপুরেই এর সিংহভাগ অর্থাৎ প্রায় ৭শ’ হেক্টোর জমিতে মোজাফ্ফর জাতের লিচুর আবাদ হয়েছে। যা দেখার মত। বর্তমানে এ অঞ্চলের উৎপাদিত রঙ্গীন টকটকে লাল রসালো এ ফল এখন মহাজনদের হাত বদলে চলে যাচ্ছে ঢাকা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, যশোর, খুলনা, এমনকি চট্রগাম, সিলেটের ফল বাজারে। ভর দুপুর বেলায় নাটোর জেলার বিশেষ করে গুরুদাসপুর সহ চলনবিলের ২৫-৩০টি স্থায়ী ও অস্থায়ী লিচুর আড়তে দূর-দূরান্তর লিচু ক্রেতা মহাজন, পাইকার ও ফরিয়াদের কেনাকাটায় মুখরিত হয়ে থাকছে মধ্যরাত পর্যন্ত। এছাড়া জমি থেকে পাইকারী ক্ষুদ্র মৌসুমী ফল ব্যবসায়ীরা কৃষকের লিচু সংগ্রহ করছেন নগদ টাকায়। গুরুদাসপুরের বেড়ঙ্গারামপুর, মামুদপুর, মোল্লা বাজার, নাজিরপুর, নারি বাড়ী, মশিন্দা, তাড়াশের ধামাইচ হাটসহ কয়েকটি স্থানে চলছে পুরোদমে খুচরা ও পাইকারী বেচা কেনা। স্থানীয় আড়ত সমিতির সভাপতি সাখওয়াত হোসেন মোল্ল¬া জানান, এলাকা থেকে প্রতিদিন ৩০-৩৫টি ট্রাক লিচু দেশের বিভিন্ন বড় বড় এলাকায়। তিনি আরো জানান, প্রতিটি ট্রাকের ২০০-২৫০টি লিচুর ঝুড়িতে প্রায় ৭ থেকে সাড়ে ৭লাখ লিচু থাকে। প্রতিটি ঝুড়িতে ২৫০০-৩০০০ হাজার লিচু থাকে। লিচু গুলোতে কোনরুপ ক্ষতি কারক কোন পদার্থ ব্যবহার করা হয়না বলেও তিনি জানান। গুরুদাসপুরের বেড়ঙ্গারামপুর লিচুর আড়তের সভাপতি সাখায়াত হোসেন আরো জানান, বৈশাখের শেষ সপ্তাহে লিচু বিক্রয় শুরু হয়। বর্তমানে লিচুর ভরা মৌসুমে এ অঞ্চলের উৎপাদিত লিচু বেচাকেনা চলবে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত।
চলনবিলে গুরুদাসপুর উপজেলার নারি বাড়ী লিচু চাষী রবিউল করিম (৪০) জানান, বর্তমান পাইকারী বাজারে ১৩০০-১৬০০ টাকায় প্রতি হাজার লিচু বিক্রি হচ্ছে। এই লিচু পরবর্তীতে ব্যবসায়ীরা ২০০০-২২০০ টাকায় খোলা বাজারে বিক্রি করছেন। তবে আড়তদাররা আড়তদারী বেশী নিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। শত করা ৮-১০ টাকা আড়ৎদারী দিতে হয় বলে জানাযায়। রাত দুপুর পর্যন্ত লিচু বেচাকেনা হয় এসব আড়ৎ গুলোতে।
মামুদপুর মোল্লাবাজারের কৃষক আঃ রাজ্জাক বলেন, মুলতঃ এলাকায় আড়তগুলোতে খোলা ডাকের মাধ্যমে লিচু বিক্রি হয়। যাতে কৃষকের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকেনা। নগদ ও ডাকের মাধ্যম্যে লিচু বিক্রির মোকামে কৃষকদের প্রাধান্য থাকে বেশী। তিনি অবশ্য জানিয়েছেন, গত বছরের চেয়ে এ বছর লিচুর দাম কমেছে হাজার প্রতি হাজারে ২০০-৩০০ টাকা। লিচু চাষী আজিজল জানান, গুরুদাসপুর অঞ্চলে মুলতঃ মোজাফ্ফর জাতের সুস্বাদু লিচু জম্মে। এছাড়া বোম্বাই, চায়না-৩, জাতের লিচুও সামান্য কিছু উৎপাদিত হয়।
গুরুদাসপুর কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল করিম জানান, রমযান মাসের আগেই বিক্রি শেষ করার চেষ্টা করছে কৃষক। যার সুযোগ নিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। ফলে পাইকারী বাজারে লিচুর দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেকটা কম। শুধু গুরুদাসপুর উপজেলাতে ৩০-৩৫ কোটির টাকা লিচু বেচা কেনা হবে বলে তিনি আশা করছেন। চলনবিলাঞ্চলে ধানের আবাদের জন্য বিখ্যাত হলেও গত একযুগ ধরে লিচু বাগান ব্যাপক প্রসার লাভ করেছে। চলনবিল উত্তরাঞ্চলের খাদ্য ভান্ডার বলে খ্যাত। তার সাথে এখন যোগ হয়েছে ফল ভান্ডার।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৮:৫৮পিএম/২৪/৫/২০১৭ইং)