• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৫:৪৮ অপরাহ্ন

কূটনৈতিক ব্যর্থতায় রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবন : রিজভী


প্রকাশের সময় : অগাস্ট ২৬, ২০২৩, ১২:৩২ AM / ১৯২
কূটনৈতিক ব্যর্থতায় রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবন : রিজভী

ঢাকারনিউজ : বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দীর্ঘ ৬ বছর পার হলো রোহিঙ্গা সমাধানে সরকার কিছু করতে পারেনি। সরকারের ধারাবাহিক কূটনৈতিক ব্যর্থতা এবং সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গারা আমাদের দেশে শরণার্থী হিসেবে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মায়ানমারের সামরিক বাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের উপর সংগঠিত ইতিহাসের অন্যতম গণহত্যার ৬ষ্ঠ বছর উপলক্ষে’ এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

রিজভী বলেন, বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মায়ানমারের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অথচ এখনো এর কোনো সমাধান সরকার করতে পারেনি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার উভয় বিএনপি সরকারের সময়েই মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে গ্রহণ করা হয়। শুধু তাই নয়, অচলাবস্থা কাটিয়ে নিশ্চিত করা হয় নিজ দেশে তাদের সময়োপযোগী প্রত্যাবাসন। বিএনপির প্রতিটি সরকারের সময় বাংলাদেশে শুধু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়ই দেওয়া হয়নি, বহির্বিশ্বের অনুদানের উপর নির্ভর না করে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে প্রদান করা হয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা। গড়ে তোলা হয় পরিবার ও পরিবেশ বান্ধব জীবনব্যবস্থা। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাস্তবসম্মত ও কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নিশ্চিত করে শরণার্থীদের কার্যকরভাবে রাখাইনে প্রত্যাবাসন।

রিজভী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জাতিসংঘ, বিশ্ব ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও গণতন্ত্রের পক্ষের প্রতিটি বৈশ্বিক শক্তি যে জোরালো ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে, এ দেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি তার জন্য কৃতজ্ঞ।

তিনি অভিযোগ করেন, কয়েক বছরে রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন ও রাষ্ট্র মিলে এই আর্থিক সহায়তার পরিমাণ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার, বা ৫০ হাজার কোটি টাকা। দাতা দেশ ও সংস্থার দেওয়া বিপুল এই অর্থের একটি বড় অংশ আওয়ামী লীগ সরকার সরাসরি খরচ করছে নানান প্রকল্প ও খাতের নামে। লাগামহীন দুর্নীতিতে নিমজ্জিত রাষ্ট্রব্যবস্থায় এসব বৈদেশিক সহায়তার কতটুকু সঠিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে, অস্বচ্ছ ও জবাববিহীন প্রক্রিয়ায় খরচ হওয়া সেই অর্থ আদৌ রোহিঙ্গারা পাচ্ছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

রিজভী বলেন, দেশে-বিদেশে গণতন্ত্রের পক্ষের সকল শক্তির ক্রমাগত আহবান সত্ত্বেও, ফ্যাসিস্ট সরকার রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার হরণ করে চলেছে। ভ‚রাজনৈতিক বাস্তবতায়, নিজ স্বার্থে শেখ হাসিনা একদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে নাগরিক প্রত্যাবাসনে বার্মাকে চাপ দিতে অপারগ ও অনিচ্ছুক অন্যদিকে ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখতে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে তার অনুগত আইন—শৃঙ্খলা বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনে।

মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসাব অনুযায়ী, কেবল ২০২২ সালে অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী নিহত হয়েছে এবং এই সংখ্যাটি বেড়ে ২০২৩ সালের জুলাইয়ের মধ্যেই ৪৮টি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। গত ছয় বছরে ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে বলে গণমাধ্যমে উঠে এসেছে। ক্যাম্পের ভেতর সরকারি দলের রাজনৈতিক মদদে একদিকে যেমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে, তেমনি স্বেচ্ছাচারী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন করেছে। এসব নিপীড়নের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও জানিয়েছে, অসংখ্য রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় হয়রানি, গ্রেফতার ও নির্যাতন করে। চাঁদাবাজি ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায় বা আত্মসাৎ করাই এই নজিরবিহীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের মূল উদ্দেশ্য।

বিএনপির এই নেতা বলেন, সামগ্রিকভাবে এটি আজ স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষ যেমন আওয়ামী অপশক্তির ধারাবাহিক নিপীড়নের শিকার, তেমনি নির্যাতনের শিকার হতভাগ্য রোহিঙ্গারা। বাংলাদেশের নাগরিকদের মতোই তারাও শিকার সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম ও জুলুমের। রোহিঙ্গা গণহত্যা স্মরণ দিবসে আমরা দাবি জানাচ্ছি, শরণার্থীদের উপর হওয়া জনবিদ্বেষী সরকারের সকল মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিক অংশীদার, উন্নয়ন সহযোগী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পরামর্শ আমলে নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুষ্ঠু জীবনযাপন নিশ্চিতকরণ ও তাদের নিজ ভ‚মিতে পাঠানোর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিসমূহকে আহবান জানাচ্ছি জোরদার ও কার্যকরী ভূমিকা অব্যাহত রেখে মায়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করবার জন্য।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম প্রমুখ।