• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০৩:৩৪ অপরাহ্ন

কুড়িগ্রামে নির্যাতনের স্বীকার ৪ গৃহবধূ এখন হাসপাতালে


প্রকাশের সময় : জানুয়ারী ৪, ২০১৯, ১০:২০ PM / ৪৪
কুড়িগ্রামে নির্যাতনের স্বীকার ৪ গৃহবধূ এখন হাসপাতালে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় স্বামী-শ্বশুর বাড়িরের লোকজনের হাতে অমানুষিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে উপজেলার ৪জন গৃহবধু এখন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। এই গৃহবধুরা বিচারহীনতার ভুগছে। নির্যাতিতা আর তাদের স্বজনদের আহাজারিতে হাসপাতাল চত্বর ভারী হয়ে উঠেছে। অভাবী পরিবারের মেয়ে হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধুরা। উপজেলার নির্যাতিত গৃহবধুরা হলেন, তহমিনা বেগম (২০), হামিদা বেগম (২৬), শিল্পী বেগম (২০) এবং সুমনা বেগম (১৯)।

সরেজমিনে দেখাযায়, ফুলবাড়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নির্যাতনের স্বীকার গৃহবধুরা হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। আহত গৃহবধু এবং তাদের স্বজনদের চোখে মুখে আতংক আর হতাশার কালো ছায়া। সবার কথা শোনার আগ্রহ প্রকাশ করতেই কান্না জড়িত কন্ঠে তারা নির্মম নির্যাতনের ঘটনা তুলে ধরেন।

নির্যাতিত উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের ঠাঁকুরপাঠ গ্রামের দিনমজুর তোফাজ্জল হোসেনের মেয়ে গৃহবধু তহমিনা বেগম জানান, তার খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশুনা শেষে করে ভাল চাকুরী করা। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় ২০১৭সালেই। পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিক পার্শ্ববর্তি বালাতাড়ি গ্রামের কৃষক হযরত আলীর ছেলে গার্মেন্টস কর্মী জাহিদ হাসানের সাথে। বিয়ের সময় যৌতুকের ৮০হাজার টাকা দেবার কথা থাকলেও নগদ ৩০হাজার টাকা পরিশোধ করে মেয়ে পক্ষ। অভাবী সংসার আর গরীব দিন মজুর বাবার কারণে তহমিনার ইচ্ছা পুরণ হয়নি। পরিবারের চাপে পরেই বাধ্য হয় বিয়ের পীড়িতে বসতে। যৌতুকের বাকি ৫০হাজার টাকা না দেবার কারণে কিছুদিন পর শুরু হয় কারণে অকারণে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন। স্বামী আর শ্বশুর বাড়ীর লোকের নির্যাতন এবং চাপ সহ্য করেও তহমিনা এইচএসসি পাশ করে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়। বর্তমানে সে অর্নাস ১ম বর্ষের ছাত্রী। স্বামীর চাপে তহমিনা কলেজে ক্লাস করতে পারছেনা। যৌতুকের টাকার চাপ বাড়লে বাধ্য হয়েই স্বামীর সাথে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টেস এ চাকুরী করে। বছর খানেক ধরে চাকুরি করলেও স্বামীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেয়ে গোপনে চাকুরী ছেড়ে বাবার বাড়ীতে পালিয়ে আসে। ক্ষত আর শরীরে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে হাসপাতালে ভর্তি হয় তহমিনা।

একই কারণে স্বামী ও তার পরিবারের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন পাশ্ববর্তি নাগেশ্বরী উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষা নাখারগঞ্জ গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমানের মেয়ে হামিদা বেগম(২৫)। পাঁচ বছর পূর্বে উপজেলার বালাতারী গ্রামের মৃত হায়দার আলীর ছেলে শ্রমিক হাবু মিয়ার সাথে বিয়ে হয় হামিদা বেগমের। ছেলের অভাবের সংসার হওয়ায় বিয়ের পরেই হামিদার উপর টাকা আনার জন্য শুরু হয় নির্যাতন। হামিদা বেগমও স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়ে গত সোমবার ফুলবাড়ী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়। ঠিক একই ভাবে চন্দ্রখানা বালাতারি গ্রামের দিনমজুর ছকমল হোসেনের মেয়ে সুমনা বেগম(১৮) গত ছয় মাস পূর্বে পানিমাছকুঠি গ্রামের খৈইমুদ্দিনের ছেলে শ্রমিক ও নেশাগ্রস্থ বাইদুলের সাথে বিয়ে হয়। সেও স্বামীর নির্যাতনের স্বীকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। উপজেলার নাগদাহ গ্রামের কৃষি শ্রমিক সেকেন্দার আলীর মেয়ে শিল্পী বেগম(২০)এর সাথে বছর তিনেক আগে উত্তর রাবাইতারী গ্রামের মাইদুল ইসলামের সাথে বিয়ে হয়। শিল্পী বেগমও নির্যাতনের স্বীকার হয়ে এখন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এক সপ্তাহে ৪জন গৃহবধু নির্যাতনের স্বীকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় উপজেলায় চাঞ্চল্য সৃস্টি হয়েছে।

এ ব্যাপারে তহমিনার পিতা তোফাজ্জল হোসেন ও হামিদা বেগমের বাবা হাবিবুর রহমান নির্যাতনের বিচার চেয়ে জানান, তারা মেয়েকে অমানষিক নির্যাতন করেছে। আমার মেয়ে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাড়ীতে এসেছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্যাতনের ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। ব্যথা যন্ত্রনায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মেয়ে নির্যাতনের স্বীকার হওয়ায় সমাজের কাছে বিচার চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

এ বিষয়ে নির্যাতনের স্বীকার তহমিনা বেগমের স্বামী জাহিদ হাসান ফোনে জানায়, স্ত্রীর দেওয়া নির্যাতনের অভিযোগটি সম্পূর্ন মিথ্যা বরং আমাকে না বলে ঢাকা থেকে গোপনে তার বাবার বাড়ীতে চলে গেছে। সে কেন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আমি জানিনা।

ফুলবাড়ী সদর হাসপাতালের দায়িত্ব প্রাপ্ত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ গোলাম কিবরিয়া বলেন, আহত চার গৃহবধুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন।

ফুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ জানান, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে জানলাম। হাসপাতালে গিয়ে আহত চার গৃহবধূর কাছে ঘটনাটি শুনে তাদেরকে সহায়তা প্রদান করা হবে।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জয়ন্তী রানী বলেন, কেউ এখনও কোন অভিযোগ করেনি। ভুক্তভোগীরা আমাকে জানালে আমি অবশ্যই আইনী সহযোগিতা করবো।

ফুলবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ খন্দকার ফুয়াদ রুহানী জানান, হামিদা একটি মামলা করেছে। বাকিরাও হয়তো মামলা করবে। আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১০:২৪পিএম/৪/১/২০১৯ইং)