• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:৩৮ অপরাহ্ন

কুড়িগ্রামে অবৈধ দখলদারদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না


প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২৫, ২০১৯, ১০:৫৭ AM / ২৩
কুড়িগ্রামে অবৈধ দখলদারদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন ধরে সরকারি পরিত্যক্ত জায়গায় বসত গেড়েছিল পরিবারগুলি। কেউ কেউ ছোট-খাট ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। সন্তানেরা জানতো এটাই তাদের বাপ-দাদার ভিটা। বুধবার বুলডোজার স্বপ্ন কেড়ে নিল এসব পরিবারের। খোলা আকাশের নীচে বসে বিলাপ করছে এসব পরিবারের সদস্যরা। এদিকে প্রশাসন থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর ব্যবস্থা। অবৈধ দখলদারদের কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলে তদবিরবাজদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে।
সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী এলাকায় অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে উচ্ছেদের শিকার ছামেনা বেগম বলছিল, ‘বিশ বছর ধরি এটে কোনা আছং। আইজ সউগ ভাঙি নিয়া গেইল। মুই ছওয়া-পোয়াক নিয়া কোটে থাকিম।’ এরকম বুক ফাঁটা কান্নায় ভারী হয়ে আসছিল পরিবেশ। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ভীর করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে। এক কোনে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে দিনমজুর নুরুল ইসলাম, ছোবহান মিয়া আর ছামেদা। এখন যাবে কোথায় তারা। অসুস্থ্য স্বামীকে নিয়ে ছামেদা কি করবে ভেবে কূল পাচ্ছে না।
কাঁঠালবাড়ী বাজারের আধা কিলোমিটার পশ্চিম প্রান্তে আর-কে রোডের পাশে একটি বাড়ি থেকে ভেসে আসছিল কান্নার আওয়াজ। এখানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের অংশ হিসেবে ২২টি পরিবারকেও উচ্ছেদ করা হয়েছে। ভূমিহীন এসব পরিবার ঘর-বাড়ি ভেঙে বাড়ির মালামাল নিয়ে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে। ভাঙা বাড়ির মালামালের উপর বসে বিলাপ করছেন দীপ্তি রাণী। স্বামী মারা গেছে কয়েকবছর হলো। বৃদ্ধ শ^শুর-শ^াশুরী আর নবম শ্রেণিতে পড়া ছেলে দীপ্তকে নিয়ে কোন মতে ছাপড়া তুলে বাস করছিলেন রাস্তার ধারে। মাথা গোঁজার জায়গা না থাকায় দীপ্তি বেগম দিন-রাত শুধু কাঁদছেন। তার প্রতিবেশী সুকুমার সরকার জানান, ছোট একটি টি-স্টল দিয়ে ৩ জন মেধাবী সন্তানকে লেখাপড়া শেখাচ্ছিলেন তিনি। দোকান-বাড়ি দুটোয় সরকারি জায়গায় পড়ায় অসহায় হয়ে পড়েছেন।
স্টেশনারী দোকানের মালিক আব্দুল কুদ্দুছ জানান, দেড় লাখ টাকা জামানত দিয়ে এই দোকান ঘরটি ভাড়া নিয়েছিলেন। এখন ঘর না থাকায় ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলো। টি স্টলের মালিক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘হামরা ছোট-খাট ব্যবসা করি প্যাট চালাই। এলা দোকান না থাকলে খামো কী?’ এই অবস্থা আরডিআরএস বাজারের হামিদুলসহ অনেক ব্যবসায়ী। জায়গা না থাকায় আপাতত ব্যবস্থার পাট চুকাতে হচ্ছে তাদের।
অপরদিকে এই বাজারের হাসেম আলী, নুরুজ্জামান ও রায়হান জানান, সরকার এটা ভাল কাজ করছে। এক শ্রেণির টাউট-বাটপার সরকারের জায়গা দখল করে স্থাপনা তৈরী করে ভাড়া তুলে খাচ্ছিল। এতদিন আমরা জানতাম এটা তাদের জায়গা। এখন দেখছি। এটাও সরকারের সম্পত্তি। লাখ লাখ টাকা মূল্যের এসব সম্পত্তি কেউ ভোগ করবে আর কেউ ভাড়া দিয়ে থাকবে এটা হয় না।
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথ বিভাগ রংপুর-বড়বাড়ী-কুড়িগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা সমূহ নিজ নিজ দায়িত্বে সড়িয়ে নিতে গত কয়েকদিন ধরে মাইকিং করে আসছিল। এতে সাড়া দেয় বেশিরভাগ মানুষ। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অনেক এলাকায় এখনো স্থাপনা সড়ানো হয়নি। অপরদিকে প্রভাবশালীরা বিভিন্নভাবে চাপ দিয়ে আসছিল যাতে তাদের স্থাপনা ভাঙা না হয়। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও সওজ অফিসে অনেককেই দেন-দরবার করতে দেখা যায়। সাধারণ মানুষ তাকিয়ে আছে অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অবৈধ স্থাপনা ভাঙচুর করে কিনা। এজন্য উচ্ছেদ অভিযান দেখতে আসে শতশত মানুষ।
এদিকে উচ্ছেদের শুরুতে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী সড়ক এলাকায় প্রায় অর্ধশত ভূমিহীন পরিবারকে উচ্ছেদের পাশাপাশি ৭ শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসয়ায়ীর স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বুধবার কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কের আমিন বাজার, চওড়া বাজার, খেদাবাগ, কাঁঠালবাড়ী বাজার, আরডিআরএস বাজার, আগমনি বাজার ও ত্রিমোহনী বাজারে অভিযান চালানো হয়।
অভিযান নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ ঢাকা এবং রংপুর-রাজশাহী সড়ক যোনের (অ:দা:) প্রাপ্ত, উপ-সচিব, এস্টেট ও আইন কর্মকর্তা, মাহবুবুর রহমান ফারুকী জানান, কুড়িগ্রাম সড়ক বিভাগধীন জাতীয় মহাসড়ক (এস-৫০৬) কুড়িগ্রাম অংশে সওজ অধিদপ্তরের ভূমি হতে অবৈধ দখলদার ও স্থাপনা উচ্ছেদ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আমির হোসেন জানান, সরকারি সিদ্ধান্তে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত মালামাল সড়িয়ে নিতে বলা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে বুধবার সকাল থেকে ঢাকা থেকে আসা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
চাপের কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক মোছা: সুলতানা পারভীন জানান, আমরা মানুষের চলাচলের জন্য জাতীয় মহাসড়কের দু’দিকে অবৈধ দখলদারদের কোন প্রকার ছাড় দিবো না। অপরদিকে ভূমিহীনদের উচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রকৃত ভূমিহীনদের খাস জায়গায় স্থানান্তরে প্রশাসন সহযোগিতা করবে।
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১০:৫৯এএম/২৫/৪/২০১৯ইং)