• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ মে ২০২৪, ০৫:২৯ পূর্বাহ্ন

কি কি কারণে রোজা ভেঙে যায়?


প্রকাশের সময় : মে ৩১, ২০১৭, ১:০৮ PM / ৩৬
কি কি কারণে রোজা ভেঙে যায়?

 

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : রমজানের রোজা হচ্ছে ইবাদতের মাঝে ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। ঈমান, সালাত ও জাকাতের পরই রোজার স্থান।সুতরাং রমজান মাসের চাঁদ উদিত হলেই প্রত্যেক সুস্থ, প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ এবং হায়েজ নেফাজমুক্ত (মাসিক ও সন্তান হওয়ার পরে রক্তস্রাব) প্রাপ্ত বয়স্কা নারীর ওপর রোজা রাখা ফরজ।
এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন ‍তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’ (সূরা বাকারা-১৮৩)
অন্য আয়াতে আল্লাহ পাক বলেন, ‘সুতরাং তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তিই এ মাস পাবে সে যেন রোজা রাখে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)।
সুতরাং রমজান মাসে সাওম পালন করা ফরজে আইন।
কার ওপর রমজানের রোজা ফরজ
মুসলিম, জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়স্ক, স্থানীয় বসবাসকারী (মুসাফির নয়) ও সামর্থ্যবান (শরীয়ত অনুমোদিত কোনো সমস্যা বা বাধা নেই, যা পরে আলোচিত হবে) ব্যক্তির ওপর রোজা ফরজ।
যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায়, তবে শুধু কাজা করতে হয় :
১. কান বা নাকে ঔষধ দেয়া।
২. ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করা।
৩. কুলি করার সময় কণ্ঠনালীর ভেতর পানি ঢুকে যাওয়া
৪. বিড়ি, সিগারেট খাওয়া
৫. ভুলে খাওয়ার পর রোজা ভেঙে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃত খেয়ে নেয়া
৬. সময় আছে ভেবে সুবহে সাদিকের পর সাহরী খেয়ে নেয়া
৭. সূর্য্য ডুবে গেছে ভেবে দিন বাকি থাকতেই ইফতার করে নেয়া
যেসব কারণে রোজা ভেঙে যায় এবং কাজা-কাফফারা দুটোই ওয়াজিব হয় :
১. জেনে বুঝে স্ত্রী সহবাস করা
২. জেনে বুঝে কিছু খাওয়া বা পান করা
রোজার কাজা :
কোনো বৈধ কারণে রোজা না রাখলে পরে সুস্থ হলে বা সামর্থ হলে একটি রোজা রেখে নিবে। এটাকেই কাজা বলে। একসঙ্গেও সব রাখা যেতে পারে, ভিন্ন ভাবেও রাখা যেতে পারে।
কাফফারা কীভাবে দেয় :
১. একটি গোলাম আযাদ করে দেয়া।
২. একাধারে ষাটটি রোজা রাখা। মাঝে বিরতি আসলে আবার শুরু থেকে রাখা।
৩. রোজার সামর্থ্য না থাকলে ষাট জন মিসকীনকে দুই বেলা পেট ভরে খাওয়াবে। খাবারের পরিমাণ সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ। (আর সাদাকাতুল ফিতরের পরিমাণ ১.৭৫ কেজি গম)
বর্তমানে গোলাম/দাস/বাদী না থাকায় শেষ দুটির কোনো একটি করতে হবে।
কাফফারা পরস্পর প্রবিষ্ট হয়। এক রমজানের একাধিক রোজা ভাঙলে বা কয়েক রমজানের রোজা ভাঙা থাকলে একটি কাফফারাই যথেষ্ট হবে। তবে সামর্থ্য থাকাবস্থায় মিসকীন খাইয়ে দেয়া যথেষ্ট হবে না।
যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না, তবে মাকরূহ হয়ে যায় :
১. বিনা কারণে কোনো কিছু চিবানো, লবণ টেস্ট করা, টুথপেষ্ট ব্যবহার করা।
২. সারা দিন ফরজ গোসল না করে নাপাক থাকা।
৩. শিঙা লাগানো, কাউকে রক্ত দেয়া।
৪. গীবত করা, কারও অনুপস্থিতিতে তার নিন্দা করা।
৫. রোজা রেখে গালি দেয়া, ঝগড়া-মারামারি করা। মানুষ বা প্রাণী সব ক্ষেত্রেই একই বিধান।
যেসব কারণে রোজা ভাঙ্গে না, মাকরূহও হয় না :
১. মিসওয়াক করা। তবে মিওয়াকের আদ্রতা বা কোনো অংশ গলায় ঢুকে গেলে রোজা ভেঙে যাবে।
২. চোখে ঔষধ দেয়া ও সুরমা দেয়া
৩. সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়া
৪. গরমে বা পিপাসায় গোসল করা
৫. ইঞ্জেকশন দেয়া
৬. ভুলে কিছু খাওয়া বা পান করা
আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, কেউ যদি ভুলে কিছু খায় বা পান করে, তাহলে সে যেন রোজা পূর্ণ করে নেয়। কেননা আল্লাহই তাকে খাওয়ায় এবং পান করে। (বুখারী ও মুসলিম)।
৭. অনিচ্ছায় গলার ভেতর কোনো ধোঁয়া বা মশা-মাছি ঢুকে যাওয়া
৮. কানে পানি অনিচ্ছাকৃত ঢুকে যাওয়া
৯. অনিচ্ছায় বমি করা
১০. ঘুমানো অবস্থায় গোসল ফরজ হওয়া।
১১. দাঁত থেকে রক্ত পড়লো, কিন্তু কন্ঠনালীর ভেতর ঢুকলো না।
১২. ঘুমের মাঝে বা সজাগ অবস্থায় গোসল ফরজ হলো, কিন্তু ফজরের আগে গোসল করা গেল না, এমতাবস্থায় রোজার নিয়্যত করে নিল।
১৩. চুলে বা দাড়িতে তেল দেয়া
যেসব কারণে রোজা না রাখার অনুমতি আছে :
যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে।
১. অসুস্থতার কারণে রোজা রাখার শক্তি নেই, বা রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে তাহলে। (পরে কাজা করে নিবে)
২. গর্ভবর্তী মহিলা রোজা রাখলে যদি নিজের বা সন্তানের ব্যাপারে আশংকা করে।
৩. যে মহিলা নিজ বা অন্যের বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান, তিনি রোজা রাখলে যদি বাচ্চার কষ্ট হবে মনে করেন, তাহলে রোজা না রেখে পরে কাজা করতে পারবেন।
৪. শরয়ী মুসাফির (কমপক্ষে ৪৮ মাইল ভ্রমণ করেছেন যিনি) তার জন্য রোজা না রাখার অনুমতি আছে। তবে কষ্ট না হলে রোজা রাখা উত্তম। অবশ্য নিজের বা সাথীদের কষ্ট হলে রোজা না রাখাই উত্তম।
৫. যদি রোজা রেখে সফর শুরু করে, তাহলে সে রোজা পূর্ণ করা জরুরী। আর যদি খেয়ে দেয়া সফল থেকে বাড়ির দিকে রওয়ানা হয়, তাহলে বাকি দিন খাওয়া-পানাহার বাদ দেয়া উত্তম। আর যদি না খেয়ে শুরু করে এরপর বাড়ি পৌঁছানোর পরও রোজার নিয়্যত করার সময় থাকে, তাহলে রোজার নিয়্যত করে নিবেন।
৬. কেউ কাউকে রোজা রাখলে হত্যার হুমকি দিল, বা কোনোভাবে রোজা না রাখার উপর বাধ্য করলো, তাহলে রোজা না রেখে পরে কাজা করে নিতে পারেন।
৭. ক্ষুধা বা পিপাসা যদি এত বেশি হয় যে, কোনো দ্বীনদার ডাক্তার প্রাণের আশংকা করেন, তাহলে রোজা ভাঙা যাবে, তবে পরে কাজা করে নিতে হবে।
৮. মহিলাদের ঋতুকালীন সময়ে বা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরবর্তী অসুস্থকালীন সময়ে রোজা রাখা যাবে না। তবে পরে কাজা করে নিতে হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে উত্তম প্রতিদান দিন। আমীন

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/১:০৮পিএম/৩১/৫/২০১৭ইং)