• ঢাকা
  • রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৬:০৩ পূর্বাহ্ন

এবারও কি হতাশ হয়ে খালি হাতে রাজপথ ছাড়তে হবে?


প্রকাশের সময় : মার্চ ২০, ২০১৯, ১০:০৯ AM / ৩৪
এবারও কি হতাশ হয়ে খালি হাতে রাজপথ ছাড়তে হবে?

মিজানুর রহমান : গতকাল বসুন্ধরার সামনে বিউপির শিক্ষার্থীর রোড এক্সিডেন্টে নিরাপদ সড়কের দাবীতে দ্বিতীয়বারের মত শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছে। এর আগেও গত বছর শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টঃ কলেজের শিক্ষার্থীর রোড এক্সিডেন্টে রাজপথে নেমেছিল সারা দেশে শিক্ষার্থীরা। যা এখনো আমাদের মন থেকে মুছে যায় নি। আবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি।

হয়তো এবারের আন্দোলনও গতবারের মতই হবে। প্রথমে দায়িত্বশীল নেতাকর্মী আসবেন, শিক্ষার্থীদের আশার বাণী দেখাবেন। শিক্ষার্থীদের রক্ত গরম, তাই সেই মুখস্ত বুলি শিক্ষার্থীরা আমলে না নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তারপর প্রশাসনিক হামলা-মামলায় আবারো ধামাচাপা পরে যাবে আন্দোলন। তারপর হয়তো আবারো কোন এক এক্সিডেন্টের পর আবার শিক্ষার্থীরা রাজপথে নামবে। এভাবে একের পর এক চলবে আর ধামাচাপা পরবে। কিন্তু মাঝখান থেকে দেশ হারাবে কিছু রত্ন, কিছু মা-বাবা হারাবে তাদের সন্তান, কিছু ভাইবোন হারাবে তাদের রক্তের বাধনকে। কিন্তু স্থায়ী কোন সমাধান হবে না।

কিন্তু এই সমস্যার কি কোন সমাধান নেই? এটাই কি আমাদের অনিবার্য ভাগ্য?

বিভিন্ন সংবাদের সূত্রে জানতে পারলাম, গতকালই ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়ার জনাব আতিকুর রহমান আন্দোলনস্থলে স্ব-শরীরে এসেছিলেন এবং সেখানেই তিনি ঘোষণা দেন যে, আজ থেকে সু-প্রভাত পরিবহনের রোড পারমিট বাতিল করা হবে এবং দোষী ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু এতেই কি সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে? গত বছরের আন্দোলনেও আমরা দেখেছি যে, জাবালে নূরের রোড পারমিট বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু তার কিছুদিন পরেই ঢাকার রাস্তায় জাবালে নূরের বাস চলতে দেখা গেছে। যদি এই আন্দোলনে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি নাও ঘটে থাকে, তাও দেখা যাবে অন্য কোন পরিবহন কোম্পানীর নামে এই বাস গুলো্ ঠিকই চলাচল করবে। সেই ড্রাইভার, সেই বাস, সেই কন্ট্রাক্টর-হেলপার সবই ঠিক থাকবে, শুধু বাসে সুপ্রভাতের স্থলে অন্য কোন পরিবহনের নাম লেখা থাকবে। তাহলে এই শাস্তির লাভ কি হলো? লাউয়ের নামে কদু বিক্রি করার মত অবস্থা।

অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একটু সচেতন ভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করলে ও আইনের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলেই অনেকাংশে এই ধরনের অনাকাংখিত ঘটনা কমানো সম্ভব। শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টঃ স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষর্থীর মৃত্যুর আন্দোলনে কোন লাভ হয়নি তা বলা ঠিক হবে না। ঐ আন্দোলনে রাস্তায় যখন গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়, তখন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীর ট্রার্গেট হয়েছিল ঢাকায় চলাচলকারী দ্বিচক্র যান ও ব্যক্তিগত গাড়ী। আন্দোলন চলাকালে রাজপথের প্রত্যেকটি বাইককে আটকিয়ে তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ীর কাগজপত্র যাচাই বাছাই করা হয়েছিল। যাদের কাগজপত্র ঠিক ছিল তারা বিনা বাধায় রাস্তায় চলাচল করতে পেরেছিল আর যারা কাগজপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছিল তাদেরকে দায়িত্বে থাকা সার্জেন্টকে দিয়ে কেস জরিমানা করিয়েছিল। সেই আন্দোলনের রেশ এখনো রাস্তায় রয়েছে। বাইকাররা এখন হেলমেট ছাড়া রাস্তায় বের হতে ভয় পায়। সঠিক কাগজপত্র ছাড়া ব্যক্তিগত পরিবহণ রাস্তায় নামানো হয় না। এটা সম্ভব হয়েছে ঐ আন্দোলনের পরে রাজপথের পুলিশ-সার্জেন্টরা এখন আগের চেয়ে বেশী দায়িত্বশীল হয়েছে বিধায়।

যদি রাজপথের পুলিশ-সার্জেন্টরা একটু সচেতন হওয়ায় এতোটা পরিবর্তন আসতে পারে, তাহলে যদি সবাই দায়িত্বের সাথে তাদের কাজগুলোর প্রতি মনোযোগী হয়, তাহলে কতটা পরিবর্তন আসা সম্ভব একবার ভাবুন।

গণপরিবহণে শিক্ষার্থীদের অর্ধেক ভাড়া নেয়ার বিধান থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে পরিবহন মালিক কর্তৃপক্ষ তার কোন তোয়াক্কাই করে না। বাসের গায়ে খুব সুন্দর করে লেখা থাকে হাফ-পাশ নেই। অর্থ্যাৎ শিক্ষার্থীদের যে হাফ ভাড়া নেয়ার কথা, তা তারা গলা উচিয়ে প্রত্যাখ্যান করছে। সিটিং সার্ভিস নামে সারা শহরে চলছে চিটিং। এগুলো যেন, দেখে না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছে এই সকল বিষয় তদারকির দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও বিনা লাইসেন্সে রাস্তা গাড়ি চালানো, ফিটনেস বিহীন বাসের চলাচল, আগে যাওয়া ও যাত্রী তোলার অসাধু প্রতিযোগীতা, নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে অধিক ভাড়া আদায়ের নামে মানুষকে জিম্মি করা যেন এখন আমাদের চোখ সওয়া হয়ে গেছে। এইসব দেখার যেন এখন কেউ নেই। আর আমরা সাধারণ জনগনও এখন এই অস্বাভাবিক বিষয়গুলোকেই স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিয়েছি। অথচ এই সমস্যা সমধানের জন্য সরকার নির্দিষ্ট একটি মন্ত্রণালয় বা ডিপার্টমেন্টের পিছনে কোটি কোটি টাকা খরচ করে যাচ্ছে।

কোন দূর্ঘনটাই আমাদের কাম্য নয়, তাই মানণীয় সরকারের কাছে আবেদন, গুটি কয়েক ব্যক্তির ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে গোটা জাতির নিরাপত্তা আপনার কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকটি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন বলেই আপনি এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আমাদের আকুল আবেদন, প্লিজ আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দিন। আমরা যেন, বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মা-বাবা বা স্ত্রী-সন্তানকে এই বিশ্বাস দিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারি যে, আমি আবার ঘরে ফিরে আসবো।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১০:১২এএম/২০/৩/২০১৯ইং)