• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৭:০৩ পূর্বাহ্ন

এত দিন উদার খাতা দেখায় চরম ক্ষতি হয়ে গেছে


প্রকাশের সময় : মে ৫, ২০১৭, ৯:২০ AM / ৬৭
এত দিন উদার খাতা দেখায় চরম ক্ষতি হয়ে গেছে

ঢাকারনিউজ২৪.কম:

পাবলিক পরীক্ষার ফল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ উঠছিল যে উদারভাবে খাতা মূল্যায়ন করেই ফল এত ভালো দেখানো হচ্ছে আর প্রকৃত শিক্ষার সর্বনাশ করা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ অভিযোগ বরাবরই নাকচ করে দিয়েছে। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ আগের খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির ত্রুটি স্বীকার করে নিয়েছেন। শিক্ষাবিদরা বলছেন, এত দিনের উদার খাতা মূল্যায়নে আমরা ধ্বংসের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছিলাম। পাসের হার বাড়লেও মান কোনোভাবেই বাড়ছিল না। এবারের এসএসসির ফল সত্যের কিছুটা কাছাকাছি। তবে পুরোপুরি সুফল আসতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। তবে এত দিন পরে হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই উপলব্ধি সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য।

খাতা মূল্যায়নের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ‘এত দিন পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে কোনো পদ্ধতি ছিল না। শত শত বছর এভাবেই চলে আসছে। কিন্তু আমরা এখন একটা মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করেছি। ফলে আমাদের ফলাফল দেখে মনে হবে, অনেক বেশি ফেল করেছে। মনে হতে পারে, আমাদের ছেলেমেয়েরা খারাপ হয়ে গেছে। কিন্তু এই ফলাফলের জন্য আমরা প্রস্তুত ছিলাম। আমরা জানতাম এবার যেভাবে আমরা পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়ন পদ্ধতি চালু করেছি সেটার কারণেই এমনটা হয়েছে। ’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এত দিন আমাদের খাতা দেখা ত্রুটিপূর্ণ ছিল। আমরা চিন্তা করলাম এটিকে একটি পদ্ধতির মধ্যে আনা দরকার। শিক্ষকদের খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রেও অনেক তারতম্য হচ্ছে। দেখা গেছে, একই খাতা একজন দেখে এক রকম নম্বর দিচ্ছেন আবার আরেকজন শিক্ষক  সেটা দেখে আরেক রকম নম্বর দিচ্ছেন। আমরা গত তিন বছর এটা নিয়ে গবেষণা করেছি। এবার থেকে পরীক্ষকদের খাতার সঙ্গে মডেল উত্তর দেওয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী তাঁদের খাতা মূল্যায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এত দিন প্রধান পরীক্ষকরা খাতা না দেখেই মতামত দিতেন। এবার প্রধান পরীক্ষককেও ১২ শতাংশ খাতা দেখতে হয়েছে। ’

শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক ড. এ কে এম শাহনাওয়াজ  বলেন, ‘শিক্ষামন্ত্রী উত্তরপত্র মূল্যায়নের ত্রুটি স্বীকার করে নিয়ে প্রকারান্তরে আগের অভিযোগগুলো মেনে নিলেন। এটা অবশ্যই ভালো লক্ষণ। তবে শিক্ষাব্যবস্থার নিয়ন্ত্রকরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য শিক্ষার্থীদের চরম ক্ষতি করে ফেলেছে। ইতিমধ্যে শিক্ষাব্যবস্থায় অসুস্থ পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি সামাজিক সমস্যাও তৈরি হয়েছে। এটা অবশ্যই অন্যায় কাজ হয়েছে। আর এ জন্য শুধু দোষ স্বীকার করলেই হবে না, ক্ষমাও চাওয়া উচিত। ’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক এবং জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান  বলেন, ‘এবার এসএসসিতে যে রেজাল্ট হয়েছে তা সত্যের কাছাকাছি। তবে পুরোপুরি আসতে আরো সময় লাগবে। যে ছেলেমেয়ে যতটুকু পাবে তাকে ততটুকুই দিতে হবে। এ যাবৎ উদার খাতা মূল্যায়ন হয়েছে। নইলে পাসের হার এত বাড়বে কিভাবে? ৪০ পেলে ৬০ আবার ৬০ পেলে ৮০ দেওয়ার কথাও আমরা শুনেছি। আমরা চাই সব ছেলেমেয়ে ভালো করুক। তবে যোগ্যতা অর্জন করেই সেই ভালো করতে হবে। তবে এত দিন পরে হলেও বিষয়টি উপলব্ধি করায় শিক্ষামন্ত্রীকে সাধুবাদ। আমাদের আরো সচেতন হতে হবে। খাতা মূল্যায়নের সময় আরেকটু বাড়াতে হবে। ’

শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বেশ কিছু বছর ধরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় যেন মেধার বিস্ফোরণ ঘটছে। এটা মানসম্মত হয়েছে কি না তা বড় প্রশ্ন। তবে এবার এসএসসির ফল ব্যতিক্রম। আমরা চাই, শিক্ষার্থীদের সতিক্যার মূল্যায়ন হোক। উদার মূল্যায়ন ছাত্রছাত্রীরাও চায় না। আসলে মেধা দিয়ে যা অর্জন করা যায় সেটাই পরবর্তী সময়ে কাজে লাগে। আর উদার মূল্যায়ন ধ্বংস ডেকে আনে। এটা থেকে অবশ্যই আমাদের পুরোপুরি বের হয়ে আসতে হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরও ব্যাপারটি উপলব্ধি করতে হবে। ’

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী  বলেন, ‘আগে যেখানে গড় পাসের হার ছিল ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ, সেখান থেকে কয়েক বছরে তা ৯০ শতাংশে উঠে গিয়েছিল। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমরা পরীক্ষা পদ্ধতির সংস্কার, শিক্ষাক্রম সংস্কার ও পাঠ্যপুস্তক সংস্কার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা করে আসছি। এবার উত্তরপত্র মূল্যায়নে যে পরিবর্তন এসেছে, এটা পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারেরই একটা অংশ। আর এর ফলেই ফলাফলে তারতম্য হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় যে বিষয়টি বুঝতে পেরেছে, এটা অবশ্যই ভালো সূচনা। এখন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আমরা যথাযথ মানের জায়গায় যেতে পারব কি না, সেটা আরো বড় বিষয়। আমাদের দক্ষ শিক্ষক দরকার, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দরকার। নইলে শিক্ষকরাও যথাযথ খাতা মূল্যায়ন করতে পারবেন না—এ বিষয়গুলোও জোরালোভাবে ভাবতে হবে। ’

 

  (ঢাকারনিউজ২৪.কম/এনএম ০৯.১৮এএম/০৫//২০১৭ইং)