• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৭ অপরাহ্ন

এটিএম কার্ড জালিয়াতিঃ প্রতি মাসে অর্ধকোটি টাকা চুরি


প্রকাশের সময় : মার্চ ১৫, ২০১৭, ৮:৪২ PM / ৩৪
এটিএম কার্ড জালিয়াতিঃ প্রতি মাসে অর্ধকোটি টাকা চুরি

এক হাজার সাদা কার্ড ও কার্ড পাঞ্চ করার ৬ টি মেশিন উদ্ধার

  • স্টাফ রিপোর্টার

বিদেশ থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে একটি চক্র ঢাকায় বিভিন্ন এটিএম বুথ থেকে লাখ লাখ টাকা তুলে নিচ্ছে। এই চক্রটি হ্যাকড করা পিন কোড দিয়ে বিভিন্ন শপিং মলে কেনাকাটায় পজ মেশিনের মাধ্যমেও লাখ লাখ টাকা চুরি করেছে। গত ৫ বছরে এই চক্রটি আনুমানিক ৬ কোটি টাকা এটিএম বুথ থেকে উত্তোলন করেছে। আন্তর্জাতিক এটিএম কার্ড জালিয়াত চক্রের প্রধান শাহ আজিজ সোহেল(৩৬) সহ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলেন, জালাল হোসেন সুমন, নূরে আলম, রানা, জহিরুল ইসলাম, লুৎফর রহমান সুজন, পারভেজ, ওয়াহেদ, আব্দুল আলী, জাহাঙ্গীর হোসেন ও কামরুজ্জামান সুমন। গত মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-১০ এর অধিনায়ক এডিশনাল ডিআইজি জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর।

এ সময় তাদের কাছ থেকে এটিএম কার্ড তৈরির কাঁচামাল, বিশেষ ধরনের প্রিন্টার, বিভিন্ন ব্যাংকের ২০০টি এটিএম কার্ড, এক হাজার টি সাদা এটিএম কার্ড ও ৬টি কার্ডের পাঞ্চমেশিন উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ১০ মার্চ জান্নতুল ফেরদৌস নামে একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ জালিয়াতি চক্রটিকে গ্রেফতার করতে মাঠে নামে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শাহ আজিজ সোহেল দীর্ঘদিন দুবাইতে কর্মরত ছিলেন। দুবাই থাকাকালে এরিন লিমো নামে যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিকের সাথে সোহেলের পরিচয় হয়। ওই ব্যক্তির কাছ থেকে ইন্টান্যাশনাল এটিএম ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়। ৭/৮ বছর আগে দেশে ফিরে সোহেল এটিএম বুথ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা শুরু করে। এরপর সে রানা নামে এক ব্যক্তিকে দলে ভেড়ায়। রানা আইটি বিশেষজ্ঞ। তাকে সে এ কাজে ব্যবহার করে। এরপরই তারা ১১ সদস্যের একটি দল গঠন করে ৫ বছর ধরে এই জালিয়াতি করে আসে।

গত বছর ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় কয়েকটি ব্যাংকের এটিএম বুথে ‘স্কিমিং ডিভাইস’ বসিয়ে গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির পর টাকা লোপাটের ঘটনা জানাজানি হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। এরপর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্তে নামে। বিভিন্ন ব্যাংকের ৩৬টি কার্ড ক্লোন ও ১২শ’ কার্ডের তথ্য চুরি করে ২০ লাখ ৬০ হাজার টাকা তুলে নেয় আন্তর্জাতিক জালিয়াতি চক্র। ওই ঘটনায় পুলিশ পোল্যান্ডের নাগরিক টমাস পিটার ও সিটি ব্যাংকের তিন কর্মকর্তা রেজাউল করিম শাহীন, রেফাত আবেদিন রনি ও মোকসেদ আলি মাকসুদকে গ্রেফতার করে।

বুধবার কাওরান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এই চক্রটি আন্তর্জাতিক জালিয়াত চক্রের যোগযাজশে দেশে এটিএম কার্ড জালিয়াত করে মাসে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তারা ৫ থেকে ৬ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী আন্তর্জাতিক কার্ড জালিয়াতি চক্রের সদস্যদের সঙ্গে পারস্পরিক যোগসাজশে বিদেশি নাগরিকদের ইন্টারন্যাশনাল এটিএম কার্ড হ্যাক করা হয়।

তারা এ সব হ্যাকিং করা কার্ডের নম্বর বাংলাদেশে অবস্থানকারী চক্রের সদস্যদের কাছে পাঠায়। পরে তারা তাদের নিজেদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ওই কার্ড নম্বরে প্রবেশ করে সেটি ব্যবহারের উপযোগী করে। এরপর বড় বড় শপিং মল, দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এই কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা ও লেনদেন করে। এই প্রক্রিয়ায় তারা প্রতি মাসে ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।

র‌্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের অসাধু লোকরা জড়িত রয়েছে। তারা শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ কমিশনে ওই চক্রের লোকদেরকে পজ মেশিনে এসব কার্ড ব্যবহার করতে দেন। পরে টাকা উত্তোলনের পর দুই পক্ষের মধ্যে ভাগাভাগি হয়।

এসএস/ক্যানি