• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন

এক মাদ্রিদ ডার্বিতেই ৬ বিতর্কিত সিদ্ধান্ত!


প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারী ১০, ২০১৯, ১২:৩২ PM / ৪৩
এক মাদ্রিদ ডার্বিতেই ৬ বিতর্কিত সিদ্ধান্ত!

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : রেফারিরাও ভুল করেন। তবে মাঠে রেফারিদের সেই ভুল এড়াতে আবিষ্কার হয়েছে প্রযুক্তি। ব্যবহার করা হচ্ছে ভিএআর (ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি বা রিভিউ সিস্টেম)। কিন্তু তাতেও ভুল এড়ানো যাচ্ছে না। গতকাল শনিবার রাতে মাদ্রিদ ডার্বিতে যেমন এই ভিএআরের সহায়তার পরও হাস্যকর সব ভুলের জন্ম দিলেন কাতালুনিয়ান রেফারি জাভিয়ের এস্ত্রাদা হার্নান্দেজ। একটি, দুটি নয়, এক ম্যাচেই ৬টি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত দিয়েছেন তিনি! যে ভুল সিদ্দান্তগলো উত্তেজনাকর মাদ্রিদ ডার্বিকে আরও বেশি আগুন-তপ্ত করে তোলে।

তবে মজার ব্যাপার হলো, বিতকির্ত সিদ্ধান্তগুলো রেফারি দিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদ ও অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদ-দুই দলের পক্ষে-বিপক্ষেই। ফলে কোনো ক্লাবই এককভাবে তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারছে না। তবে চাইলে অ্যাতলেতিকো শিবির রেফারিকে দোষারোপটা একটু বেশি করতে পারে। কারণ, বড় ৩টি বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ২টিই গেছে অ্যাতলেতিকোর বিপক্ষে। তার একটি সিদ্ধান্তও অ্যাতলেতিকোর পক্ষে গেলে ম্যাচের ফলটা অন্য রকমও হতে পারতো।

তবে ভুল সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয় করেছেন বলেই কিনা, অ্যাতলেতিকো শিবির ঢালাওভাবে রেফারি হার্নান্দেজকে তুলোধুনো করছে না। বরং হারটা মেনে নিয়ে জয়ী রিয়ালকে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটই পরিয়েছে। অ্যাতলেতিকোর আর্জেন্টাইন কোচ দিয়েগো সিমিওনি যেমন বলেছেন, ‘এই হারের জন্য আমি রেফারি বা ভিএআরের ভুল ব্যবহারের অজুহাত দেব না। রিয়াল যোগ্যতর দল হিসেবেই জিতেছে।’

যাই হোক, এই প্রতিবেদনটা রেফারির অমার্জনীয় ভুল সিদ্ধোন্ত নিয়ে। আসুন চটজলধি জেনে নিই ভিএআর ও রেফারির সেই ৬টি ভুল কেমন ছিল।

১. ম্যাচের প্রথম ভুলটি ৫ মিনিটের সময়। এই ভুলটি নিয়ে অবশ্য ধোয়াশা আছে। বল নিয়ে সামেন এগোনোর সময় রিয়ালের তরুণ তুর্কি রেগুইলনকে কড়া ট্যাকল করেন অ্যাতলেতিকোর সান্তিয়াগো অ্যারিয়াস। কেউ বলছেন, এটা লালকার্ড। কেউ বা আবার বলছেন, হলুদকার্ড। কিন্তু রেফারি কোনো কার্ডই দেননি অ্যারিয়াসকে।

২. রেফারি দ্বিতীয় বিতর্কিত সিদ্ধান্তটা দেন ম্যাচের ২৪ মিনিটে। এই সিদ্দান্তটিও যায় অ্যাতলেতিকোর পক্ষে। বলতে পারেন রেফারির এই ভুল সিদ্ধান্তের সুবাদেই ম্যাচে সমতা ফেরায় অ্যাতলেতিকো। সফরকারী রিয়াল তখন ১-০ গোলে এগিয়ে। রিয়ালের রক্ষণ সীমানায় বল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ব্রাজিলিয়ান তরুণ ভিনিসিয়াস জুনিয়র।

কিন্তু তাকে ফাউল করে বল কেড়ে নেন অ্যাতলেতিকোর অ্যাঙ্গেল কোরেয়া। রিপ্লেতে পরিষ্কার, ওটা নিশ্চিত ফাউল ছিল। কিন্তু রেফারি ফাউল দেননি। সেই সুযোগে কোরেয়া বল পাস করেন ফাঁকায় দাঁড়ানো আতোইন গ্রিজমানকে। ফরাসি ফরোয়ার্ড অ্যাতলেতিকোকে সমতায় ফেরাতে ভুল করেননি।

৩. তৃতীয় ভুলটা ম্যাচের ৪২ মিনিটে। এবারের সিদ্ধান্তটি যায় রিয়ালের পক্ষে। এবং যথারীতি এই ভুল সিদ্ধান্তের ফসল ঘরে তুলে রিয়াল এগিয়েও যায় ২-১ গোলে। এবারও ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে ব্রাজিলিয়ান বিস্ময়বালক ভিনিসিয়াস। তিনি বল নিয়ে বক্সে ঢোকার সময় তাকে ফেলে দেন অ্যাতলেতিকোর উরুগুইয়ান ডিফেন্ডার জিমেনেজ। ভিএআরের সহায়তায় পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। পেনাল্টি থেকে গোল করে রিয়ালকে আবার এগিয়ে দেন অধিনায়ক সার্জিও রামোস। কিন্তু রিপ্লেতে স্পষ্ট, জিমেনেজ ভিনিসিয়াসকে ফাউলটা করেছিলেন বক্সের বাইরে। এটা পেনাল্টি ছিল না।

৪. চতুর্থ ভুলটা ৫৪ মিনিটে। এই সিদ্ধান্তটাও যায় স্বাগতিক অ্যাতলেতিকোর বিপক্ষে। হোসে জিনেমেজের পাস থেকে দারুণ এক শটে বল রিয়ালের জালে জড়িয়ে দেন কদিন আগেই অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদে যোগ দেওয়া আলভারো মোরাতা। সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে গোল করে নিজ দলকে সমতায় ফেরানোর আনন্দ-উদযাপনও শুরু করে দেন মোরাতা। কিন্তু তার সেই উদযাপন মাটি করে দেয় সহকারী রেফারির পতাকা। অফসাইডের কারণে বাতিল হয় গোল।

কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায়, মোরাতা রিয়ালের ডিফেন্ডারদের লাইনেই ছিলেন। তার ধাবিত শরীর বড় জোড় রিয়ালের রক্ষণ লাইন থেকে ইঞ্চিখানেক এগিয়ে ছিল। রেফারিরা এটা অফসাইড না ধরলেও পারতেন! কিন্তু সহকারী রেফারির সিগনাল পেয়ে গোল বাতিলের বাঁশিই বাজিয়েছেন রেফারি হার্নান্দেজ।

৫. পঞ্চম ভুলটি ম্যাচের ৬৬ মিনিটে এবং এই ভুলটিও স্বাগতিক অ্যাতলেতিকোর বিপক্ষে গেছে। যদিও আগের দুটির মতো এই ভুলটা অমার্জনীয় ছিল না। এই মোরাতাই বল নিয়ে রিয়ালের বক্সে ঢুকে পড়েন। দলকে বিপদ মুক্ত করতে তাকে বাঁধা দেন কাসেমিরো। সঙ্গে সঙ্গেই পেনাল্টির আবেদন করেন মোরাতা। অ্যাতলেতিকোর অন্য খেলোয়াড়েরাও মোরাতার সেই আবেদনে সুর মেলান। কিন্তু রেফারি কান পাতেননি। এটা পেনাল্টি ছিল কি না, তা নিয়ে দুই রকম মত পাওয়া গেছে। কেউ বলছেন পেনাল্টি, কেউ বলেছেন না।

৬. ম্যাচে রেফারির ৬ নম্বর ভুলটি ৮০ মিনিটে। অবশ্য রেফারির এই সিদ্ধান্তকে বেশির ভাগই বিতর্কিত মানতে নারাজ। রিয়ালের লুকাজ ভাজকুয়েজ বল নিয়ে অ্যাতলেতিকোর বিপদ সীমানার দিকে ছুটে যাচ্ছিলেন। বিপদ ঘটার আগেই তাকে কড়া ট্যাকলে আটকান থমাস পার্তে। রেফারির পকেট থেকে বেরিয়ে আসে হলুদকার্ড। থমাস পার্তে ম্যাচে আগেও একটা হলুদকার্ড পাওয়ায় দ্বিতীয় এই হলুদকার্ডটা হয়ে যায় লালকার্ড। কেউ বলছেন, ঠিক সিদ্ধান্তই দিয়েছেন রেফারি। আবার কেউ বলছেন, এই অপরাধে রেফারি দ্বিতীয় হলুদকার্ড না দিলেও পারতেন!

ভুল করায় রেফারি হার্নান্দেজ সমন্বয় করেছেন বলেই রক্ষা! সিদ্ধান্তগুলোর সবই কোনো এক দলের পক্ষে গেলে, অন্য দল এতোক্ষণে হয়তো তার পিঠের চামড়া তুলে ফেলত!
(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১২:৩০পিএম/১০/২/২০১৯ইং)