• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন

একজন বিউটিশিয়ান রুবি’র এগিয়ে যাবার গল্প… (ভিডিও)


প্রকাশের সময় : মার্চ ৭, ২০১৯, ৭:৪২ PM / ১১৭
একজন বিউটিশিয়ান রুবি’র এগিয়ে যাবার গল্প… (ভিডিও)

সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি :          ‘কন্যা-জায়া-জননী, গড়েছে বিশ্ব ধরণী, জন্মেছি যে নারীর গর্ভে, প্রণাম গর্ভধারিণী’

পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থায় নারীর এগিয়ে চলার পথে যেখানে পুরুষরাই কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, সেখানে কিছু পুরুষ আবার পরম মমতায় পাশে থেকে তাদেরকে এগিয়েও নিয়ে যায়। সমস্ত বাঁধা বিপত্তি এড়িয়ে নারীর জন্য সমাজে নিজের শক্ত অবস্থান তৈরির পেছনে তাদের অবদান চিরকাল অমলীন হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, বিয়ের পর নারীর জীবন যেখানে থমকে যায়, সেখানে নতুন পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা ও সহযোগিতায় কারো কারো জীবনের নতুন কিছু শুরুও হয়। ফলে ঘর থেকে বেরিয়ে স্ব স্ব পেশায় থেকে কাজ করে সমাজ ও রাস্ট্রের উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে আজকের নারীরা। শিক্ষকতা, চাকরি, ব্যবসা, সাংবাদিকতা, চিকিৎসা সেবা, সমাজ সেবা, রাজনীতি, আইন পেশার বাইরে বিউটিশিয়ান হিসেবে সৌন্দর্য্য পেশাতেও নারীরা সমানভাবে এগিয়ে চলেছে। আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগেও যে দেশে নারীর বিউটি পার্লার ব্যবসার সাথে জড়িত হওয়াকে মানুষ বাঁকা চোখে দেখত, আজ সেই দেশের শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের আনাচে কানাচে বিউটি পার্লার এখন চোখে পড়ে। অন্যান্য পেশার মতো এই পেশায় কাজ করেও মাসে প্রায় ১ থেকে ২ লক্ষ্য টাকা অনায়াসেই উপার্জন করতে পারেন নারীরা। কেউ কেউ আবার বড় পরিসরে ব্যবসা দিয়েও মাসে আয় করেন আরো অধিক অর্থ।

              ‘আমি সৃষ্টি করেছি যা কিছু কল্যাণ, পুরুষের পাশে দাঁড়িয়ে, সৃষ্টি করেছি যা কিছু মহান, মমতার হাত বাড়িয়ে’।

প্রিয় পাঠক, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে আমাদের বিশেষ সাক্ষাৎকার বিভাগে আজ যোগ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের রুবি’স ম্যাকওভার এর কর্ণধার খায়রুন নাহার রুবি। স্বামী, শশুর-শাশুড়ি তথা পরিবারের সদস্যদের উৎসাহ ও সহযোগিতায় যিনি মাত্র ১ লক্ষ্য টাকা পুঁজি নিয়ে একসময় বিউটি পার্লারের ব্যবসা শুরু করেন, আজ নারায়ণগঞ্জ শহরে গড়ে উঠেছে তার ২টি বিউটি পার্লার। যেখান থেকে প্রতি মাসে ফ্লোর ভাড়া ও স্টাফদের বেতন সহ অন্যান্য সমস্ত খরচ মিটিয়েও প্রায় ১ লাখ টাকা আয় করছেন তিনি। অত্যন্ত মনমুগ্ধকর ও রুচিশীল পরিবেশে রুবি’র পরিচালিত এ পার্লারগুলোতে কাজ করছেন ৮জন নারী সহকর্মী। একদিকে নিজে যেমন আর্থিকভাবে সুবিধা পাচ্ছেন, তেমনি অন্যান্য নারীদের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছেন তিনি। আমরা এখন শুনব তার এগিয়ে চলার গল্প।

শিক্ষা জীবন :
নারায়ণগঞ্জ সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৯১ তে এসএসসি পাস করে পরে সরকারি মহিলা কলেজে ৯৩ ব্যাচে এইচএসসি এবং শেষে ঢাকার হোম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে হোম ম্যানেজমেন্টে অনার্স সম্পন্ন করি।

শুরুর গল্প :
আসলে ছোট বেলা থেকেই মেয়েদের সাজানোর শখ ছিল আমার।
১৯৯৮ তে বিয়ের পর শখের বসে এক সময় শশুর বাড়িতেই কাজ শুরু করি। এভাবে এক সময় বাড়িতে অনেক মেয়েদের আনাগুনা বেড়ে যেতে লাগল। শুরুর দিকে আমার শশুর(মরহুম ইশহাক মাদবর) কিছুটা নেগেটিভ থাকলেও শাশুড়ি আমাকে আরো উৎসাহ দিতেন এ কাজে। শাশুরির সহযোগিতায়ই ২০০৪ সালে শশুর আমাকে ১ লাখ টাকা দেন পার্লার ব্যবসা দেয়ার জন্য। সেই থেকেই শুরু আমার পথচলা। প্রথমে এলাকায়(জারকুঁড়ি) ছোট্ট করে একটি পার্লার চালু করলাম। এরপর ধীরে ধীরে স্টাফ সংখ্যা বাড়াতে লাগলাম। একটা সময় সিদ্ধিরগঞ্জের ২নং ঢাকেশ্বরী বাসস্ট্যান্ড মফিজ উদ্দিন ভূঁইয়া টাওয়ারে আরো একটি পার্লার চালু করি। এখন এই ২টি পার্লারে ৮জন বিউটিশিয়ান কাজ করছেন।

সাজ সজ্জা :
আমার এখানে নারীদের সৌন্দর্য্যে ব্রু প্লাক, বিভিন্ন ধরনের ফেসিয়াল, মেনিকিউর-পেডকিউর থেকে শুরু করে পার্টি সাজ, বৌ সাজ সহ অনেক ধরনের আইটেমের উপর সার্ভিস দেয়া হয়। বৌ সাজ এখানে ১ হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজার পর্যন্ত করিয়ে থাকি।

মাসিক আয় :
২টি পার্লারের সাড়া মাসের সকল খরচ মিটিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মতো লাভ থাকে। তবে বিয়ের সিজনের(শীত কালে) ২ মাস প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো মাসে আয় করা যায়।

অন্যান্য :
সম্প্রতি আমি চ্যানেল আইতে প্রচারের জন্য নির্মিত জনপ্রিয় তারকা কেকা ফেরদৌসির ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। সেখানে আমি একটি ব্রাইডাল সাজ সাজিয়েছি ও পাশাপাশি একটি রেসিপি রান্না করেছি। যেটি শীঘ্রই চ্যানেল আইতে প্রচারিত হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর কাজেও অংশ নিচ্ছি আমরা। সব মিলিয়ে বেশ ভাল সময় কাটছে আমার।

পরিবার :
আমার স্বামী মো আলী নিজে একজন ব্যবসায়ী। ব্যবসার পাশাপাশি সে আমার পেশাগত উন্নয়নের জন্য পারিবারিকভাবে সব ধরনের সহযোগিতা করে চলেছেন শুরু থেকে। ৩টি সন্তান নিয়ে ঘর-সংসার সামলিয়ে আসলে এতদুর আসতে পারতাম না যদি সে সহযোগিতা না করত। বিশেষ করে আমার ছোট ছেলেটি জন্মাবার পর তার সহযোগিতা না পেলে থমকে যেতে হতো। বিয়ের শুরু থেকে আজো পর্যন্ত আমার স্বামীই আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। যে শুধু স্বামীই নয়, একজন বন্ধু হয়ে আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সফলতার দিকে।

                                    ‘চাই না কখনো চুন্নি পান্না, চাই না কখনো ধন, চেয়েছি কেবল ভালবাসা, আর শ্রদ্ধার সিংহাসন’।

প্রিয় পাঠক, আমাদের সমাজে প্রতিটা নারীরই এগিয়ে চলার পেছনে থাকে কোনো না কোনো গল্প। সে গল্প হোক্ সুখের কিংবা দুঃখের। তুলে ধরার চেষ্টা করে চলেছি সেইসব গল্প। জয় হোক নারীকূলের, জয় হোক মানবতার।

ভিডিও সংবাদটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন-

https://www.youtube.com/watch?v=HIDcKlIHJGE&feature=youtu.be

 

ছবি ও ভিডিও : খাদিজা আক্তার ভাবনা

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৭:২০পিএম/৭/৩/২০১৯ইং)