• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:১৫ অপরাহ্ন

ঈদের পর চার ইস্যুতে আন্দোলনে নামবে বিএনপি


প্রকাশের সময় : মে ৩১, ২০১৮, ৫:২১ PM / ২৩৩
ঈদের পর চার ইস্যুতে আন্দোলনে নামবে বিএনপি

ইখতিয়ার উদ্দীন আজাদ: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দ্রুত কারামুক্তি, স্থানীয় সরকার নির্বাচনী প্রচারণায় মন্ত্রী-এমপিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল, সংসদ নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রোজার ঈদের পর আন্দোলনে নামছে বিএনপি। এখন এই আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজপথের এই বিরোধী দলটি। দলের শীর্ষ নেতাদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন সরকার যদি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন চাইতো তাহলে তাড়াহুড়ো করে খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিতো না। আর দিলেও জামিন প্রশ্নে কঠোর বিরোধিতা ও লুকোচুরি খেলা খেলতো না। অবশ্য আওয়ামী লীগের নেতারা সবসময়ই বলে আসছেন যে, খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত, সরকার নয়। বিএনপি নেতাদের আরও অভিযোগ, সিটি নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিরা প্রচরণায় মাঠে নেমে যাতে একচেটিয়া প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে ‘ইলেকশান ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের’ সুযোগ পায়, সেজন্য সম্প্রতি ‘মেরুদ-হীন’ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা সংশোধন করিয়েছে। তাই জাতীয় নির্বাচনের আগে যদি লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করা না হয়, সে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না। আর জাতীয় নির্বাচনের সময় যদি দেশে নিরপেক্ষ সরকার না থাকে সে নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হবেই। তাই মূলত এই চারটি ইস্যুকে কেন্দ্র করে দলের কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে রোজার ঈদের পরপরই কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন। নিন্ম আদালতের রায়ে সাড়ে তিন মাসেরও অধিক সময় যাবত কারাগারে আটকা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। জামিন প্রশ্নে টালবাহানা করছে সরকার বলে অভিযোগ করছে দলটির শীর্ষ নেতারা। অপরদিকে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও দলের নেতারা এখনো অনেকটা অন্ধকারে। যদিও চেয়ারপারসনকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না- এমন কথা দলের পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে। আর কোনোভাবেই এবার বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার সুযোগ নেই- বিষয়টি দলের নেতাকর্মীরা ভালোভাবে জানলেও তারা এটি এখনও জানেন না যে, খালেদা জিয়া কবে জেল থেকে মুক্তি পাবেন। আর পেলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি কারামুক্ত হবেন কিনা। এ বিষয়গুলো নিয়ে বেশ চিন্তিত বিএনপির কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। দলের শীর্ষ নেতারা মনে করছেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে গেলে হয়তো কয়েকটি আসনে বিজয়ী হতে পারবেন দলের প্রার্থীরা, কিন্তু তাতে সরকার গঠন হয়ে পড়বে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত। আর দ্বিতীয়ত, খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করলে সবার কাছে সাংগঠনিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে বিএনপি। তখন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে তা থেকে উত্তরণের রাস্তা খুঁজে বের করা কঠিন হয়ে পড়বে দলটির জন্য। তাই বিপদ আসার আগেই সমস্যা চিহ্নিত করে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে নেতারা জানিয়েছেন। এজন্য বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে বিএনপি ও তাদের শরিক দলের নেতারা মিলিত হয়ে খালেদা জিয়ার কারামুক্তি আন্দোলন বেগবান করতে নানা পরিকল্পনা করছেন। একই সঙ্গে বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাও খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ত্বরান্বিত করতে বাড়িয়েছেন তৎপরতা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনে কাঙ্খিত ফল না আসায় দলের ভেতরে এক ধরনের ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। তাছাড়া দলের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করার জন্য বিএনপি সাংগঠনিকভাবে তেমন কোনো শক্তিই এ পর্যন্ত দেখাতে পারেনি। দলের তৃণমূল থেকে বার বার কঠোর কর্মসূচি চাওয়া হলেও দল সে পথে হাঁটেনি। তাই বিএনপির বড় একটি অংশ মনে করে, কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারার জন্যই খালেদা জিয়ার জেলজীবন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। এ ব্যাপারে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক আলোচনায় আক্ষেপ করে বলেছেন, চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে না পারার জন্য ব্যর্থতা স্বীকার করে নিচ্ছি। সরকার আমাদের চেয়ারপারসনকে জোর করে জেলে রাখার চেষ্টা করছে। সেই অবস্থা থেকে ফেরাতে আমরা তেমন কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারিনি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা আমাদের চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে পারব না। এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আমরা চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি সংসদ নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ সৃষ্টিতে লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করণে আমরা ইসি এবং সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ গণতন্ত্রের মুক্তির আন্দোলনই হচ্ছে আমাদের প্রধান কাজ। এজন্য নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকারের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করছি। দাবি বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করে ঈদের পরে কঠোর কর্মসূচী নিয়ে আমরা রাজপথে সরব হবো। অপরদিকে সিটি নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ দিয়ে সম্প্রতি আচরণবিধি সংশোধনের প্রস্তাব ইসিতে পাস হওয়ায় লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিয়ে চিন্তিত বিএনপি। দলের নেতারা মনে করছেন, এমপিরা এলাকার সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা সবকিছুর শীর্ষে থাকেন। যদি এটি বাস্তবায়ন হয় তাহলে প্রতিপক্ষ প্রচারণার সুযোগ পাবে না। আর ভোটের সময় নির্বাচনী প্রচারণায় এমপিরা মাঠে থাকলে পরিস্থিতি ইসির নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। আর তাতে প্রশাসন প্রভাবিত হয়ে সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করবে। এ বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এটা আইন ও সংবিধানের পরিপন্থী। সরকার নির্বাচনকে নিজেদের মতো করার জন্য অর্থাৎ তাদের যে অভিপ্রায়, তারই বহিঃপ্রকাশ স্থানীয় সরকার আচরণ বিধিমালা সংশোধনী। তারা (সরকার) নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড চায় না বলেই সিটি নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, এসব বিষয় নিয়ে বিভিন্ন বিএনপির বিভিন্ন জেলা নেতাদের মতামত ও সুপারিশ চাওয়া হয়। এর পরই তৃণমূল নেতরা কঠোর আন্দোলনের বিষয়ে হাইকমান্ডকে সুপারিশ করে। এরপরই সিদ্ধান্ত হয়, রোজার ঈদের পরই দাবি আদায়ে মাঠে নামবেন বিএনপি।

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/এসডিপি/৫:১৮পিএম/৩১/৫/২০১৮ইং)