• ঢাকা
  • রবিবার, ১৬ Jun ২০২৪, ০৩:২৪ পূর্বাহ্ন

ইবিও হতে পারে পাখিদের অভয়ারণ্য


প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৩১, ২০১৮, ৮:৩৫ PM / ৬৩
ইবিও হতে পারে পাখিদের অভয়ারণ্য

সাব্বির আহমেদ, ইবি প্রতিনিধি : শীত না পড়লেও চলে এসেছে অতিথি পাখির দল। উত্তরের শীত প্রধান দেশ সাইবেরিয়া, মঙ্গোলিয়া ও নেপাল থেকে হাজার হাজার অতিথি পাখি আমাদের মতো নাতিশীতোষ্ণ দেশে আসে।উত্তরের প্রচণ্ড শীত ও তুষারপাত থেকে রক্ষা পেতে পাখিদের এই ভ্রমণ।
হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশসহ সংলগ্ন নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে চলে আসে এইসব পাখিরা। দেশের হাতেগোনা যে কয়েকটি এলাকায় এরা ক্ষণস্থায়ী আবাস গড়ে তারমধ্যে কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও হতে পারে তাদের অন্যতম অভয়ারণ্য। ১৭৫ একরের সবুজ এই ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে পাখিদের অভয়ারণ্য গড়ে তোলার এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা।

পাখিদের বসবাস উপযোগী পরিবেশ এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় অনেক আগে থেকেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজে ঘেরা ক্যাম্পাসে পাখিদের আনাগোনা ছিল লক্ষ্যণীয়।পাখি শিকারীসহ বৈরী আবহাওয়াতে পাখিদের সংখ্যা যেভাবে হ্রাস পাওয়া শুরু করেছে তাতে পাখিদের অদূর ভবিষ্যত যে খুব বেশি সুখকর নয় তা হলফ করে বলা যায়।সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যদি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে উঠে তবে তা হবে পাখিদের জন্য অনেক বড় পাওয়া।

এইসব পরিযায়ী পাখিরা মূলত অক্টোবরের শেষ ও নভেম্বরের প্রথম দিকেই এ দেশে আসে।মার্চের শেষদিকে আবার ফিরে যায় আপন নীড়ে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবীতে
প্রায় ১০ হাজার প্রজাতির পাখি রয়েছে তাদের মধ্যে শতকরা ১২শতাংশ আগামী শতাব্দীর
মধ্যেই বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।শুধু ইউরোপ আর এশিয়ায়আছে প্রায় ৬০০
প্রজাতির পরিযায়ি পাখি রয়েছে।এসব পাখির মধ্যে প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি আমাদের
দেশে প্রতি বছর বেড়াতে আসে।বাংলাদেশের ৬৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে, তার মধ্যে৩০০ প্রজাতির পাখিই পরিযায়ী।
এসব পাখির মধ্যে রয়েছে সরালি, পচার্ড, ফ্লাইফেচার, গার্গেনী, ছোট জিরিয়া, মানিক জোড়, ডেঙ্গা, চামচঠুঁটি, চিত্তা, খঞ্জনা, নাকতা, কোম্বডাক ও পাতারী হাঁস অন্যতম।

প্রকৃতির ধারাবাহিকতায় পরিবেশ দূষন এবং বৈরী পরিবেশসহ পাখি শিকারীদের নিয়মিত আক্রমনের কারণে মাঝে বেশ কিছুটা সময় বাগান, জঙ্গল বা উপযুক্ত জলাভূমিতে পাখির আনাগোনা কমে গিয়েছিল।পাখিগুলো এখানে থাকায় তাঁদের কিছু উপকারও হয়েছে। কারণ, বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদ ছাড়াও এগুলো সাপের বাচ্চা ও জোঁক খেয়ে ফেলে।

শীতের আকাশ জুড়ে থাকে অতিথি পাখিদের আগমনী ডানা ঝাপটানোর শব্দ। সে শব্দ খোলা আকাশের নিচে নিস্তব্ধ রাতে অনুভব করা যায়।কিন্তু দুঃখের বিষয় বর্তমান প্রজন্ম সেই সৌভাগ্য হতে বঞ্চিত, আর ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে তা যেন এক রূপকথার কাহিনী হবে।আমাদের দেশে রয়েছে হাতে গোনা কিছু অভয়াশ্রম।তাদের অনেকগুলোর অবস্থা  এখন আধুনিকতার বেড়াজালে সংকটাপন্ন।জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বর্ধিত জনসংখ্যার নানামুখী কর্মকান্ডে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক পরিবেশ অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে।

এ বিষয়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড.হারুন-উর-রশিদ আসকারী বলেন,”ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি ক্যাম্পাস যদি বিভিন্ন প্রকার পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে তবে তা আমাদের শিক্ষার্থী,শিক্ষক এবং কর্মচারীদের জন্য অনেক বড় পাওয়া হবে। সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি ও নৈসর্গিক পরিবেশের পবিত্রতা রক্ষা করা এবং জীব বৈচিত্র্য  সংরক্ষণের জন্য আমরা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পাখির অভয়ারণ্যে বানানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।আমাদের যে লেকটি রয়েছে সেটি সংস্কারের কাজ চলছে।লেকে বিদেশী পাখির আনাগোনা আগে থেকেই ছিল, সেই পাখিদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যেই কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।ক্যাম্পাসের গাছগুলোতে পাখিদের বসবাসের জন্য মৃৎ পাত্রের ব্যবস্থা করা হবে। প্রচারণা এবং ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবে গড়ে তুলতে প্রশাসন অনেকগুলো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।মনোরম নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা অতিসত্ত্বর পাখিদের অভয়ারণ্য বানাতে চাই”।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের  দাবি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও বিশ্ববিদ্যালয়  প্রশাসনের সহযোগিতা পেলো ইবি ও পাখির অভয়ারণ্য হয়ে উঠতে পারে, সে উদ্যোগ নেওয়া হোক। ডা.হারুন-উর-রশিদ আসকারীর হাত ধরে এ অঞ্চল দিয়েই শুরু হোক পাখিদের আশ্রয়স্থল গড়ে তোলার মতো মহৎ কাজ।অতিথি পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত হবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়  সে আশাতে বুক বেঁধে আছে ইবির হাজারো শিক্ষার্থী।

পরিবেশ এবং নিজেদের স্বার্থেই পাখিদের রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য।

সাব্বির আহমেদ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/৮:৩৩পিএম/৩১/১০/২০১৮ইং)