• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ০৩:৫০ অপরাহ্ন

ইউসুফ-আজাদ-শত্রুঘ্নদের বহিরাগত বলে কটাক্ষ বিরোধীদের


প্রকাশের সময় : মার্চ ১২, ২০২৪, ১২:১৩ AM / ১০০
ইউসুফ-আজাদ-শত্রুঘ্নদের বহিরাগত বলে কটাক্ষ বিরোধীদের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চিরাচরিত দলীয় রীতির বাইরে গিয়ে রোববার (১০ মার্চ) পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা আসনের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে তৃণমূল কংগ্রেস। সাধারণত দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জীর কালীঘাটের বাড়ি থেকে এই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হলেও, সেদিন তা ঘোষণা করা হয় ব্রিগেডের জনগর্জন সভা থেকে। এক্ষেত্রে ঘোষকের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরও বদল ঘটে। মমতার বদলে নাম ঘোষণা করেন তার ভাতিজা ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জী।

প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পরে ৪২ জন প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে র‍্যাম্পে হাঁটেন মমতা। অনেকটা ফ্যাশন শো’র মতোই ছিল সেটা। এর উদ্দেশ্য ছিল দলের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে পরিচিতি ঘটানো। এবারের প্রার্থী তালিকায় দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা যেমন রয়েছেন তেমনি ঠাঁই পেয়েছে অনেক তরুণ মুখ। জায়গা পেয়েছে একাধিক তারকা প্রার্থী। তাদের মধ্যে ছয় জন চলচ্চিত্র জগতের, তিনজন ক্রীড়া জগতের।

তারকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠান, কীর্তি আজাদ ও অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিনহা। তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় এই তিন জনের নাম শোনার পরেই মমতা ব্যানার্জীর এই সিদ্ধান্তকে ‘বহিরাগত তত্ত্ব’ আখ্যা দিয়ে খোট দেওয়া শুরু করেছেন বিরোধী নেতারা। অনেকের দাবি, যাদের সঙ্গে মাটির কোনো সম্পর্ক নেই, তাদেরকে প্রার্থী করে শেষমেশ কোনো লাভই হবে না।

একটা সময় বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জেপি নাড্ডা, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে দলের ছোট বড় নেতাদের ‘বহিরাগত’ বলে আখ্যায়িত করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এমনকি, ব্রিগেডের জনসভা থেকেও বিজেপিকে ‘বহিরাগত’ ও ‘বাংলা-বিরোধী দল’ বলে তোপ দেগেছিলেন অভিষেক ব্যানার্জী। আর সেই সভা থেকেই যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে, সেটাতেই রাজ্যের বাইরের বেশ কয়েকজন ব্যক্তির নাম রয়েছে। আর তা নিয়েই সরগরম পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতি। রোববারের পর সোমবারও দিনভর এই ইস্যুতে চললো জল্পনা, আলোচনা।

সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে গুজরাট থেকে ভারতীয় ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে উড়িয়ে এনে বাংলায় প্রার্থী করানো নিয়ে। রাজ্যের বহরমপুর কেন্দ্রে কংগ্রেসের পাঁচবারের সংসদ সদস্য অধীর রঞ্জন চৌধুরীর বিপরীতে পাঠানকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। প্রার্থী তালিকায় জায়গা পেয়েই এক্স হ্যান্ডেলে তৃণমূল পরিবারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইউসুফ।

বিষয়টি নিয়ে রোববার রাতে এক্স (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডেলে পোস্ট দিয়ে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য লেখেন, ইউসুফ পাঠান গুজরাটের না বাংলার? মমতা ব্যানার্জী যাদের বহিরাগত বলেন, তৃণমূলের তালিকা সেই নামেই ভরা।

এ নিয়ে সোমবার বিজেপির সংসদ সদস্য দিলীপ ঘোষ কটাক্ষ করে বলেছেন, ইউসুফ পাঠানকে যদি প্রার্থী করারই ছিল, তাহলে গুজরাটেই করে দিতে পারতো। ওখানে একটা আসন হতো তৃণমূলের। ওখান থেকে এখানে উড়িয়ে আনার কোনো মানেই হয় না। তৃণমূল অধীর রঞ্জন চৌধুরীর রাস্তায় পাথর ফেলে দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন দিলীপ।

ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকীর প্রশ্ন, ইউসুফকে দিয়ে আমাদের সমাজের কী লাভ হবে? উনি যদি বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ হতেন, রাজনীতি করতেন তাহলে বুঝতাম যে চমক রয়েছে। উনি ছক্কা বা চার নিয়ে ভালো বুঝবেন।

‘উনি দায়িত্ব নিয়ে ২০০৭ সালে ভারতকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন করেছেন। কিন্তু তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় আছে? মিমি চক্রবর্তী বা নুসরাত জাহানকে সংসদ সদস্য বানিয়ে তৃণমূল যে ভুল করেছে, ইউসুফও একদিন একই বুমেরাং হয়ে দেখা দেবে।’

যে কেন্দ্রে ইউসুফকে প্রার্থী করা হয়েছে সেই কেন্দ্রের বর্তমান কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেছেন, নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহ গুজরাট থেকে এসেছেন। শোনা যাচ্ছে, দিদির প্রার্থীও গুজরাট থেকে আসছেন। জানি না ব্যাপারটা কী হচ্ছে।

‘ইন্ডিয়া জোটের আলোচনায় তিনি তো বলতেই পারতেন যে গুজরাটে ইউসুফ পাঠানকে আমার দলের প্রার্থী করা হোক! সেটাই তো মানানসই হতো। ইউসুফ পাঠানকে সম্মাননা জানানোর ইচ্ছা থাকলে তাকে রাজ্যসভার সদস্যও করতে পারতেন, কিন্তু দিদিভাই তাও করেননি।’

তবে বিরোধীদের এসব ঠাট্টা উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের জ্যেষ্ট সংসদ সদস্য ও দমদম লোকসভা আসনের প্রার্থী সৌগত রায় বলেছেন, এরকম কোথাও বলা ছিল না যে বাইরের কাউকে প্রার্থী করা যাবে না বা হবে না। এমনটা নতুন কিছু নয়। ১৯৬৯ সালে কৃষ্ণ মেননকে কেরালা থেকে এনে পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর থেকে প্রার্থী করিয়েছিল বামেরা।