• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৪:০৪ অপরাহ্ন

আমি সালমানের জন্য চাপে ছিলাম : জ্যাকুলিন


প্রকাশের সময় : জুন ৮, ২০১৮, ১:৩৩ PM / ৩৬
আমি সালমানের জন্য চাপে ছিলাম : জ্যাকুলিন

ঢাকারনিউজ২৪.কম, ডেস্ক : ঈদ উপলক্ষে বলিউডে মুক্তি পাচ্ছে সালমান খানের নতুন ছবি রেস থ্রি। রেমো ডি সুজা পরিচালিত এই ছবিতে সালমানের বিপরীতে অভিনয় করেছেন জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ। গত রোববার তাঁর সঙ্গে সাংবাদিকদের যে আড্ডা হলো, তাতে উপস্থিত ছিলেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্য। তিনি কথা বলেছেন ছবি ও ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে।

এবারের ঈদে মুক্তি পেতে চলেছে রেস থ্রি। ‘রেস’ ফ্র্যাঞ্চাইজির এই ছবিতে আছেন সালমান খান, অনিল কাপুর, ববি দেওল, জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ, ডেজি শাহ ও সাকিব সালিম। তবে জ্যাকুলিন এর আগে রেস টু ছবিতে অভিনয় করেছেন। রেস টুর ওমিসাকে এই ছবিতে দেখা যাবে জেসিকার চরিত্রে। তবে সেদিন মেহবুব স্টুডিওর ২ নম্বর ফ্লোরে জেসিকা নয়, এসেছিলেন সেই পরিচিত জ্যাকুলিন। হাসিখুশি, প্রাণবন্ত এক নারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দারুণ সক্রিয় তিনি। শুরুতেই তাঁর মোবাইল ক্যামেরায় বন্দী করলেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদককে। ছোটো লাল ফ্রক আর তার সঙ্গে মানানসই নীল ডেনিম জ্যাকেটে জ্যাকুলিন যেন জ্যৈষ্ঠের উষ্ণ দুপুরে আরও উষ্ণতা এনে দেয়। শখের বসে উর্দু শিখছেন জানা গেল, কিন্তু রেস থ্রির জন্য কী কী শিখতে হলো—বললেন, ‘রেস টুতেঅভিনয়ের কারণে এটা আমার পরিচিত জগৎ। এই ছবির ধরন, এর ধাঁচ সবকিছু আমার জানা। এটা পুরোপুরি বাণিজ্যিক একটা ছবি। ফ্যামিলি, ড্রামা, রহস্য সব আছে এই ছবিতে। আমি আমার চরিত্রের জন্য অনেক ওয়ার্কশপ করেছি। রেমো স্যার (ছবির পরিচালক রেমো ডি সুজা) এবং সালমানের সঙ্গে আমার চরিত্র নিয়ে প্রচুর আলোচনা করতাম। কারণ, আমার চরিত্র সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকলে আমি কিছুতেই তা পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারব না। তাই আমি খুব সতর্ক ছিলাম আমার চরিত্র নিয়ে। একটু অ্যাকশনও শিখেছি এই ছবির জন্য।’ রেস টুতে ভালোই অ্যাকশন করতে দেখা গিয়েছিল জ্যাকুলিনকে। ‘রেস’-এর নতুন সিক্যুয়ালেও তাঁকে দেখা যাবে অ্যাকশন করতে। তবে রেস থ্রির অ্যাকশনের ধারা অন্য রকম। বললেন, ‘“রেস” ফ্র্যাঞ্চাইজির তৃতীয় এই ছবিতে আমি অন্য রকম অ্যাকশন করেছি। এই ছবির অ্যাকশন দৃশ্যগুলো অনেক বেশি বাস্তব। আমি তলোয়ারবাজি করেছি। আমাকে এর জন্য রীতিমতো ট্রেনিং নিতে হয়েছে। রেস টুতে অ্যাকশন ছিল অনেক বেশি কোরিওগ্রাফড, গ্ল্যামারাইজড।’

সংবাদ সম্মেলনে এভাবেই হাজির হয়েছিলেন জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজসংবাদ সম্মেলনে এভাবেই হাজির হয়েছিলেন জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ
ওমিসা না জেসিকা, কোন চরিত্রটি বেশি চ্যালেঞ্জিং জ্যাকুলিনের কাছে? উত্তর দিলেন বেশ গুছিয়ে। ‘দুটি চরিত্রই আমার কাছে ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল। ওমিসা আমার কাছে চ্যালেঞ্জিং ছিল, কারণ রেস টুতে আমি নতুন ছিলাম। তাই খুব নার্ভাস ছিলাম। আমার ওপর একটা চাপ ছিল। আর রেস থ্রিতে আমি সালমানের জন্য চাপে ছিলাম। আমাকে ওর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করতে হবে। সালমানের উচ্চতা অবধি পৌঁছাতে হবে। এর জন্য কোথাও একটা বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছিল।’

‘রেস’ ফ্রাঞ্চাইজির আগের ছবিগুলো পরিচালনা করেছিলেন খ্যাতনামা পরিচালক আব্বাস-মাস্তান। রেস থ্রি পরিচালনা করেছেন কোরিওগ্রাফার এবং পরিচালক রেমো ডি সুজা। একই ফ্রাঞ্চাইজিতে দুই অন্য ধারার পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছেন জ্যাকুলিন। কী রকম ছিল এই অভিজ্ঞতা? জ্যাকুলিন জানান, ‘আব্বাস-মাস্তান অসংখ্য ছবির সফল পরিচালক। সাসপেন্স, থ্রিলার তাঁদের ঘরানা। রেমো স্যার এই ঘরানায় একদম নতুন। উনি নাচভিত্তিক ছবির জন্য জনপ্রিয় বেশি। তবে রেমো স্যার তাঁর নিজস্ব স্টাইলে ছবিটা করেছেন। “রেস”-এর ঘরানা বুঝে সেই মতো কাজ করেছেন তিনি। আর রেমো স্যার ভীষণ পরিশ্রমী মানুষ। তাঁর সঙ্গে কাজ করা সব সময় আনন্দদায়ক।’

রেস থ্রি-র শুটিং হয়েছে আবুধাবি, ব্যাংকক, কাশ্মীর, লাদাখ, লেসহ বিভিন্ন জায়গায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছেন কাশ্মীরের পাহাড়ি পথে সালমানের বাইকে সওয়ারি জ্যাকুলিন। কী রকম ছিল সেই অভিজ্ঞতা? বললেন, ‘সত্যি বলতে, আমার প্রিয় জায়গা হলো কাশ্মীর ও লাদাখ। আর কাশ্মীর খুবই সুন্দর জায়গা। আমি সেবারই প্রথম কাশ্মীরে গিয়েছিলাম। কাশ্মীর থেকে বাইকে করে আমরা লাদাখ গিয়েছিলাম। সকাল আটটায় আমরা কাশ্মীর থেকে রওনা দিই। এরপর দুপুরে কোনো একটা বর্ডারে লাঞ্চ সারি। সেখান থেকে লাদাখ পৌঁছাতে ছয় ঘণ্টা সময় লাগে। দারুণ ছিল সেই যাত্রা।’

এই আড্ডায় জ্যাকুলিন তাঁর ফিল্ম ক্যারিয়ারের কথাও তুলে ধরেন। ২০০৯-তে সুজয় ঘোষের আলাদিন ছবির মাধ্যমে তাঁর যাত্রা শুরু হয়। এরপর জ্যাকুলিনকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। হাউসফুল, মার্ডার টু, রেস টু, কিক, রয়, ঢিশুম, জুড়ওয়া টুর মতো সফল ছবি তাঁর সাফল্যের ঝুলিতে। জ্যাকুলিন তাঁর ফিল্মি সফর সম্পর্কে বলেন, ‘আমার এই সফর ধীরে ধীরে হলেও আজ সেটা অনেকটা শক্তপোক্ত। আমি সময় নিয়ে কাজ করেছি। আমি জানি, আমাকে অনেক কিছু করতে হবে। অনেক কিছু করা এখনো বাকি। আমার কাছে যখন কোনো ফিল্ম ছিল না, আমি তখন হতাশ হইনি। সব সময় চেয়েছি কাজ করতে। জানেন, আমি এটা বুঝি, মানুষের কাছে কাজ থাকা সব থেকে বড় আশীর্বাদ। সকালে ঘুম থেকে উঠে কাজে যাওয়ার মতো আনন্দ আর কিছুতে নেই। তবে আমার অনেক ধৈর্য, যা এই জগতে থাকা জরুরি। আমি অনেক ভালো পরিচালকের সঙ্গে কাজ করতে চাই। অনেক ভালো ভালো চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। আমি জানি, এসব কিছু একদিন হবে। তবে সময় লাগবে।’

জ্যাকুলিন অকপটে জানান যে তিনি সঞ্জয়লীলা বানসালীর পরিচালনায় কাজ করতে চান। কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে তিনি বানসালী পরিচালিত দেবদাস ছবিটি প্রথম দেখেন। আর তাঁর দেখা এটাই ছিল প্রথম হিন্দি ছবি। দেবদাসদেখে জ্যাকুলিন এতটাই অনুপ্রাণিত হন যে তিনি এই ছবির ডিভিডি কিনে ফেলেন। এরপর অশোকা ও ব্ল্যাক ছবি দুটি দেখেন। সেই স্মৃতি মনে করে বলেন, ‘জানেন, দেবদাস দেখে আমি মোহিত হয়ে যাই। সেট, কস্টিউম সবকিছু আমার কাছে ছিল বিস্ময়। এরপর শাহরুখ-কারিনাকে অশোকাতে দুর্দান্ত লাগে। বানসালীর ব্ল্যাক ছবিটি দেখে অবাক হয়ে যাই। আর এই ছবিগুলো যখন দেখি, তখন আমার ভারতে আসার বা বলিউডে নায়িকা হওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। বানসালী একের পর এক দুর্দান্ত ছবি দিয়েছেন। আমার ভীষণ প্রিয় পরিচালক। উনি আমার কাছে স্বপ্নের মতো।’

পরিচালক সঞ্জয়লীলা বানসালীকে নিজের এই গোপন ইচ্ছার কথা একাধিক বার জানিয়েছেন জ্যাকুলিন। এমনকি সোনম কাপুরের বিয়েতেও বানসালীকে তাঁর মনের বাসনার কথা জানিয়েছেন। সোনমের বিয়েতে সারা বলিউড খুশিতে মেতে উঠেছিল। জ্যাকুলিনও তার ব্যতিক্রম ছিলেন না। জ্যাকুলিন বললেন, ‘দুদিন ধরে সেলিব্রেশন চলেছিল। দারুণ মজা করেছিলাম সবাই। আমি আর সালমান শুটিংয়ের ফাঁকে বিয়ের আসরে এসেছিলাম।’

প্রশ্ন আসে জ্যাকুলিন কবে বিয়ে করছেন? লাজুক হেসে জানান তিনি, ‘বিয়ে! না, এখনই নয়। আর আমার কোনো বয়ফ্রেন্ড নেই এখন। তাই বিয়ে করার চাপ নেই।’

কিক-এর পর আবার সালমান খানের সঙ্গে রেস থ্রি ছবিতে জ্যাকুলিন। পর্দার বাইরেও তাঁদের দারুণ বন্ধুত্বের সম্পর্ক। এত দিন পর সালমানের সঙ্গে সেটে কেমন সময় কাটল? ‘সত্যি বলতে সালমানের মতো আর কোনো দ্বিতীয় মানুষ আমি দেখিনি। সালমান একজন সুপারস্টার বলে আমি এই কথা বলছি না। ও নিজে এত বড় সুপারস্টার হয়েও নিজেকে ছাড়া আর সবাইকে প্রাধান্য দেয়। আর সালমান ওর বন্ধুদের শতকরা এক শ ভাগ দেওয়ার চেষ্টা করে। বন্ধুদের জন্য ২৪ ঘণ্টা ওর দরজা খোলা থাকে। সব সময় সবাইকে সাহায্য করার মানসিকতা ওর—তবে ওই মানুষটাকে পরিশ্রমী হতে হবে। কারণ, অলস মানুষকে কোনো রকম সাহায্য করে না সালমান। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে মানুষ খুব স্বার্থপর। কিন্তু সালমান আর সবার চাইতে একদম আলাদা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন কোনো ছবি নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত থাকি, সালমান তখন আমায় সঠিক পথ দেখায়। আমাকে সঠিক পরামর্শ দেয়। সালমানই আমাকে সব সময় বলেছে, ধ্রুপদি নাচ শিখতে। হিন্দি ভালো করে শিখতে। ও আমাকে হিন্দির ভালো শিক্ষক দিয়েছে। আমার ছোট ছোট জিনিসের প্রতি সালমান নজর দেয়।’

সামাজিক কাজে সব সময় এগিয়ে আসেন জ্যাকুলিন। একাধিক সমাজকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত এই বলিউড সুন্দরী। ‘এই বছর আমি একটা বড় সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, যারা আশ্রয়হীন মানুষদের বাসস্থান গড়ে দেয়। চেন্নাই ও শ্রীলঙ্কায় ওরা কাজ করছে। যেহেতু শ্রীলঙ্কায় আমার বেড়ে ওঠা, তাই চেয়েছিলাম ওখানে কিছু কাজ করতে। এ ছাড়া বন্য পশুদের নিয়ে কাজ করছি। বন্য পশুদের দেখি কত বেশি সুশৃঙ্খল। আমরা অর্থাৎ মানুষেরা এই ধরিত্রীর বুকে শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও ওদের মতো নই। আমাদের লজ্জা পাওয়া উচিত।’

রেস থ্রির পর জ্যাকুলিনের ড্রাইভছবিটি আসছে। আড্ডার শেষে এক গাল হেসে রেস থ্রি দেখার আহ্বান জানালেন। ঈদ উপলক্ষে আসছে ১৫ জুন মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি।(প্রথম আলো)

(ঢাকারনিউজ২৪.কম/আরএম/১:৩২পিএম/৮/৬/২০১৮ইং)